কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি ও সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশের গুলিতে ৫ জন শিক্ষার্থীসহ ৬ জন নিহতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ৫ ঘন্টার অবরোধে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরো নারায়ণগঞ্জ। এই সময়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সড়ক ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা পুরাতন সড়ক ও নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডে সড়ক অবরোধ করায় শহরে কোন যানবাহন ঢুকতে পারেনি আবার বের হতেও পারেনি। এতে যানজটে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। এতে দুভোর্গে পড়েন যাত্রীসাধারণ। বিকাল পৌনে ৪টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন। বৃহস্পতিবার পুনরায় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে তারা আবারো জড়ো হবেন দাবী আদায়ে।
মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে বেলা ১১টার দিকে চাষাড়া গোলচত্তর অবরোধ করে তারা। বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার যানবাহন চলাচল। এছাড়া শহরের দুই নাম্বার রেলগেইট ও চাষাড়ায় রেল লাইনের উপর কাঠ-বাশ ও বালুর বস্তা ও রেলের সিগন্যাল গেট ফেলে ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীরা। এতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চাষাঢ়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এসে যুক্ত হয়েছেন। তারা এখানে অবস্থান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। এসময় শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে চাষাড়া এলাকা।
‘আমরা নই রাজাকার, তুই বেটা স্বৈরাচার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, কোটা সংস্কার ও আন্দোলন কারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তারা আরও নানা ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দেন। এসময় তারা চাষাড়া এলাকায় রিকসা পর্যন্ত চলতে দেয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীরা চাষাড়ার চারপাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।
পরে দুপুর দেড়টার দিকে সড়কের উপর নিহত ছাত্রদের গায়েবানা নামাজের জানাজা পড়ে শিক্ষার্থীরা। পরে নিহত ছাত্রদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এসময় পথচারী ও রিকসা চালকরাও মোনাজাতে অংশ নেয়। জানাজা শেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার নেতৃত্বে একটি মিছিল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশ করে। সেখানে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। পরে আবারো চাষাড়া মোড়ে গিয়ে তারা বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বৃহস্পতিবার পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং অবরোধ তুলে নেন।

ওদিকে বেলা ১০টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুড়ি করইতলা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কোটা আন্দোলনকারীরা স্লোগানে স্লোগানে সড়ক মুখরিত করে তোলেন।
জালকুড়িতে অবরোধে অংশ নেয়া সরকারি হরগঙ্গা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব হাসান বলেন, আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আমরা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করি এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরও সমর্থন করি। তবে এই কোটার বিপক্ষে আমাদের অবস্থান। এই দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে সোমবার সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা প্রতিবাদে আমরা সারাদেশে আন্দোলন করছি। অংশ হিসেবে আজ এখানে আমাদের অবস্থান। এখানে সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। বহিরাগতদের আন্দোলনে শরিক হওয়ার সুযোগ নেই। ক্রমেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ছে। তারা বিভিন্ন শ্লোগান লিখে প্লেকার্ড নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে কাঁচপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা।
এর আগে সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও ৬ শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে নানা স্লোগান দেন। পরে সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হক জানান, কাঁচপুরে ওমর আলী স্কুলের সামনে ঢাকাগামী সড়কে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছে।


































