নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে বিপুল মাদকসহ ৬ সহযোগি গ্রেপ্তার হলেও বহাল তবিয়তে মূলহোতা

প্রকাশিত:০১:০০, ১৯ এপ্রিল ২০২১

সিদ্ধিরগঞ্জে বিপুল মাদকসহ ৬ সহযোগি গ্রেপ্তার হলেও বহাল তবিয়তে মূলহোতা

সিদ্ধিরগঞ্জে দুই দফায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে ৬ মাদক ব্যবসায়ি। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪৮ কেজি গাঁজা ও ৮৯৬ বোতল ফেনসিডিল।

কিন্তু মাদক ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের মূলহোতা টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুক, জসিম ও জুয়েল রানা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাদকের পুরো সিন্ডিকেটকে শেল্টার দেয় টাইগার ফারুক। মাদক নিয়ে কোন সদস্য গ্রেপ্তার হলেই মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাঠে নামে টাইগার ফারুক।

ইতিমধ্যে তার সহযোগি মিলন ৩০ কেজি গাঁজা নিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে। তাকে জামিনে বের করতে বিভিন্নভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে টাইগার ফারুক। মিলনের বড় ভাই ফারুকের সাথে যোগযোগ রক্ষা করে চলছে।

এদিকে মিলনের রেশ না কাটতেই ১৮ কেজি গাঁজা ও ৮৯৬ বোতল ফেনসিডিল নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে টাইগার ফারুকের সহযোগি রাকিব হাসানসহ ৫ জন। এরা প্রত্যেকেই টাইগার ফারুকের মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য।

এদিকে মাদকসহ ৬ জন গ্রেপ্তার হওয়ার পর নড়ে চড়ে বসেছে টাইগার ফারুকের অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ি সদস্যরা। টাইগার ফারুক, জসিম ও জুয়েলের অন্যতম সহযোগী হচ্ছে আরাফাত রহমান বাবু (ওরফে ফেন্সি বাবু)।

টাইগার ফারুক মাদক ব্যবসা করে ইতিমম্যে বহুতল বাড়ি, গাড়ি ও বিপুল টাকার মালিক বনে গেছে। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি মাদক ব্যবসায়িরাও প্রচুর টাকা মালিক। কোন সদস্য গ্রেপ্তার হলেই তাকে জামিনে বের করতে মুল ভুমিকা পালন করে টাইগার ফারুক।

অভিযোগ রয়েছে, বীরদর্পে টাইগার ফারুক সিন্ডিকেট স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রীয়তায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা টাইগার ফারুকের কাছ থেকে মাসোহারা নেয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

ফলে স্থানীয় প্রশাসন টাইগার ফারুক সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তারে ভুমিকা নেয় না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাইগার ফারুক বাহিনীর ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। টাইগার ফারুকের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সে এখন জামিনে রয়েছে। জসিম ছিনতাই করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যায়। মোটা অংকের টাকা খরচ করে টাইগার ফারুক তাকে জামিনে বের করে আনে। জসিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। জুয়েল রানার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।

আরও পড়ুন :সিদ্ধিরগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ি টাইগার ফারুকের আরেক সহযোগি গ্রেপ্তার, বিপুল মাদক উদ্ধার

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের ব্যানারকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের গুটি কয়েক শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা করে সুচতুর টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুক ও ফেন্সি বাবু মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।

এই সিন্ডিকেট সিদ্ধিরগঞ্জসহ এর আশপাশের এলাকায় পাইকারী ও খুচরা মাদক ব্যবসা, ছিনতাই ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন।

যা-র‌্যাবের হাতে বিপুল পরিমান মাদক সহ গ্রেফতার এবং বিগত দিনে বড় বড় মাদকের চালান নিয়ে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে একই সিন্ডিকেটের মুখোশ জনসম্মুখে উন্মোচিত হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসাসহ নানাবিধ অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত টাইগার ফারুক যুবলীগের নাম ব্যবহার করে কথিত একটি যুবলীগের কার্যালয়ও বানিয়ে নিয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি টিসি রোড এলাকায়।

ওই কার্যালয়ে মাদক কেনা-বেচা ও সেবনের মহোৎসব এবং শলাপরামর্শ হয়। এরআগে টাইগার ফারুকের ছোটভাই জসিম ছিনতাই করতে গিয়ে দেশীয় ধাড়ালো অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়।

তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ফারুকের আরেক ভাই জুয়েল বিএনপির ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী এবং মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এ সিন্ডিকেটের আরেক সক্রিয় সদস্য আরাফাত রহমান বাবু। সে এই মাদক ব্যবসায়ীদের অন্যতম হোতা।

এছাড়া ফারুক নিজেও হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। মিজমিজি পাগলাবাড়ী এলাকায় রীতিমত একটি অপরাধী চক্র গড়ে তুলেছে চিকনা ফারুক। আর গোপন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যুবলীগের নাম দিয়ে কথিত কার্যালয় বানিয়ে অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে বহাল তবিয়তে।

ওই কার্যালয়ে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের ছবি টানিয়ে রেখেছে। এই ছবি বিক্রি করে চতুর ও টাউট ফারুক তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানায়।

এছাড়া এই সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটটি তাদের অপরাধ কর্মকান্ড নির্বিচারে চালিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি বিশেষ পেশার মহলকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা প্রদান করে নিজেদের অনুগত করে রেখেছে।

যখনই এই সিন্ডিকেটের কোন মাদক ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় তখন তারা তদবির চালিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করতো বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। যা তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে।

এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জে বিপুল পরিমান ফেন্সিডিল ও গাঁজাসহ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুকের ৫ সহযোগীগে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩’র একটি আভিযানিক দল।

এসময় তাদের কাছ থেকে ১৮ কেজি গাঁজা ও ৯৬ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার এবং মাদক সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। পরে শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে র‌্যাব-৩’র সদস্যরা গ্রেফতারকৃতদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

গ্রেফতারকৃতরা ও মাদক হলো, টাইগার ফারুকের সহযোগী রাকিব হাসান (২৮), ওমর ফারুক (৩২), সোলায়মান (৩৫), ফরহাদ খান (২৮) ও মো: অয়ন (১৮)।

গত ২ এপ্রিল রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সংঘবদ্ধ মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী টাইগার ফারুকের অন্যতম সহযোগী মিলন (৩২) কে ১৯ কেজি গাঁজাসহ ঢাকার পল্টন থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩’র একটি আভিযানিক দল। বর্তমানে মিলন মাদক মামলায় ঢাকার কারাগারে রয়েছেন।