নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

২৪ এপ্রিল ২০২৪

একজন মানবিক জনপ্রতিনিধি করোনা বীর রোজিনা আক্তার 

প্রকাশিত:০১:২৮, ১৯ অক্টোবর ২০২১

একজন মানবিক জনপ্রতিনিধি করোনা বীর রোজিনা আক্তার 

রোজিনা আক্তার। সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের দক্ষিন মাসদাইর, পশ্চিম মাসদাইর, উত্তর মাসদাইর ও গাবতলীবাসীর এক পরিচিতি মূখ। একুশ বছর বয়স থেকে সামাজিক কাজে জড়িত এই নারী মেম্বার মানুষের সেবাটাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখেন। এলাকার রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে তার ভুমিকা চোখে পড়ার মতো। সরকারীভাবে বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা পেতে ওয়ার্ডের নারী-পুরুষদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন তিনি। সব সময় চেষ্টা করেছেন একটু বেশিই যেন পায় তার নির্বাচনী এলাকার মানুষ। পুরুষ মেম্বারদের সাথে তাল মিলিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন রোজিনা আক্তার। কাজের কারণেই ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।

 

পর পর দুইবারের নির্বাচিত এই নারী মেম্বারকে বর্তমানে এলাকার মানুষ করোনা বীর হিসেবেও চিনেন। কারণ প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে মৃত নারীর পাশে যখন স্বজনরাও আসতে ভয় পেত তখন জীবনবাজি রেখে এগিয়ে গিয়েছেন রোজিনা আক্তার। আপনজনের মতোই নিজ হাতে গোসল করিয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছেন মৃত নারীকে। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আত্মীয়ের বাড়িতে রুম ভাড়া নিয়ে একাই বসবাস করেছেন দুর্যোগকালীন ওই সময়গুলোতে। দিন-রাত কোন ভেদাভেদ ছিল না তার কাছে। কাক ডাকা ভোরে আবার কখনও গভীর রাতে ছুটে গেছেন মৃত নারীর গোসলের ব্যবস্থা করতে। নিজের এলাকা এমন কি নারায়ণগঞ্জের বাইরে ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় ছুটে গেছেন মানবতার টানে রোজিনা আক্তার। একজন মানবিক নারী হয়ে উঠেছেন সবার কাছে। করোনাকালীন সময়ে সরকারী সাহায্য সহায়তার বাইরেও নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন রোজিনা আক্তার। 

 

আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সংরক্ষিত (৭,৮ ও ৯) ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার পদে এবারও নির্বাচন করছেন রোজিনা আক্তার। এলাকার সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের ভালোবাসা নির্বাচনে প্রার্থী হতে তাকে উৎসাহী করেছে। আলাপচারিতায় এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, বিপদে আপদে কাজে কর্মে সব সময় রোজিনা আপাকে কাছে পেয়েছি। কাজের বিচার করলে রোজিনা আপার বিকল্প নেই। তিনি ভোট চাইবেন কেনো, তিনি তো আমাদের কাছে ভোট প্রাপ্য। যেই মানুষটা জীবনবাজি রেখে করোনার সময় মৃত মানুষের দাফনের ব্যবস্থা করেছেন, অসহায় মানষিকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তাকে ভোট না দিলে তো অন্যায় হবে।

 

রোজিনা আক্তার জানান, আমার কাজের মূল্যায়ন করবে আমার এলাকার মানুষ। ২১ বছর বয়স থেকেই সমাজিক কাজের সাথে জড়িত। মানুষের ভালোবাসায় পরপর দুইবার নির্বাচিত হয়েছি। সব সময় দলমত নির্বিদেশে সকল ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কাজ করেছি। এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। আগামীতেও করবো। করোনাকালীন সময়ে জীবনবাজি রেখে মৃত নারীর লাশ গোসল দিয়েছি। দিন-রাত কোন ভেদাভেদ ছিল না। এম জে কে-কোভিড-১৯ রোজিনা দাফন কমিটি গঠন করে মৃত নারীর গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করেছি। করোনায় মৃত ১১৫ জন নারীর গোসলসহ ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ২১১ জনের দাফন সম্পন্ন করেছি। টিমের সদস্যদের মধ্যে বিশেষ করে আমার বড় ছেলে রেজাউন আহমেদ রাজু ও সবুজ মন্ডল দুর্যোকালীন সময়ে পাশে ছিল। তাদের সাথে নিয়েই  রাতের বেলা বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে। 

 

 তিনি আরও বলেন, করোনায় কর্মহীন ও অসহায় ৪৫০ পরিবারের মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি। ২৬ দিন রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি। এছাড়া ৪টি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। এসবের বাইরে সরকারীভাবেও প্রচুর খাদ্য সহায়তা দিতে পেরেছি। বর্তমানে ৬টি গ্যাস সিলিন্ডার সহযোগিতা পেয়েছি। আমার ব্যক্তিগত ঊদ্যোগে গ্যাস ভরে মানুষকে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছি।

 

নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আমি তো সব সময়ই মাঠে আছি। এলাকার সবাই আমাকে চেনেন শুধুমাত্র কাজের কারণে। দুইবার তারা আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। এলাকার জনগণই আমার ভরসা, আমার কাজের উৎসাহ, আমার শক্তি। আশাকরি আসন্ন নির্বাচনেও তারা আমাকে বিজয়ী করবেন। আমি এলাকার উন্নয়নে সব সময় মানুষের পাশে আছি, থাকবো ইনশাআল্লাহ।