নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

২৪ এপ্রিল ২০২৪

মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গে

এনামুল হক প্রিন্স

প্রকাশিত:০৭:৪৪, ১৮ জুন ২০২১

মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গে

    আগুন সুন্দরী নীলা। শীতলক্ষ্যা পাড়ে ছোট্ট গাঁয়ে বসবাস। শুরুটা বার বছর আগে  নীলার সাথে পরিচয় সুমনের। কিন্তু পথ চলা খুবই কঠিন সুখকর নয়। তারপরও স্বপ্ন কোথাও পড়ে থাকে না। বুনতে হয় গরম উলের মতোন। এক এক করে পূর্ণতা একদিন। স্বপ্নের সেই নীলা ঠিক বার বছর পর বলল তুমি কেবলই আমার দুজন দুজনার দুয়ে মিলে এক। চার হাজার তিনশত আশি দিন অর্থাৎ পূর্ণ এক যুগ পর জাগান দিলো সুমনের ডাকে। সুমন একটি কথা বললো অনিবার্যতা বলে কিছুই নেই। সূর্য পৃথিবী পরস্পরের টানেই ঘুরে ফিরে। নদী জল ও যেমন চাঁদের সাথে সূর্যের সাথে কথা কয় মিলে মিলে আনে জোয়ার। নিলার সাথে আলাপ চারিতায় বললো হাত থেকে যত শৃঙ্খল মুছে ফেলো। হাতগুলো লাগিয়ে দাও দৃষ্টিতে। দেখতে নীলা এখন যৌবনের রানী স্বপ্ন স্পন্ধনের টকটকে লাল। একযুগ ছুঁতে পারেনি তোমায়। আমি জানি তোমার আলোতেই আমার জ্যোৎস্নাময় চাঁদ সময়। প্রাণের খোঁজে খোড়াখুড়ি স্বপ্নের জের ধরে প্রাণবন্ত শিকড় আমার। তিন বছর পুরোপুরি সর্বপ্রকার যোগযোগ বিচ্ছিন্ন সুমনের জীবন জমিন জুড়ে কষ্টের পুরো এক হাজার পঁচানব্বই দিন অর্থাৎ তিন বছর বিচ্ছিনতার কারনে কষ্ট বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে। বিচ্ছিন্নতার দখিনা জানালার গ্লাসের ফাঁকে গলে। হৃদয়ে আঁচড়ে পড়ে বেদনের গন্ধ। অবেলায় স্মৃতিরাও এসে ভিড় জমায় হৃদয় নিকুঞ্জে।

প্রোথিত স্বপ্নগুলো লুকিয়ে ঝড়ে বারে বার। এই পোড়া রোদ্দুরে ডুব দিতে ইচ্ছে জাগে আরো গভীরে। খুঁজে পাওয়ার বাসনা তিলে তিলে খায়। আমার এ বেলা খুব ইচ্ছে করে তোমার সাথে যেতে। তুমি দেখো অবুঝ শিশুর মতো চুপটি করে বসে থাকব আমি। তুমি উড়বে ইচ্ছে ডানা মেলে। আমার সাধ, স্বপ্নগুলো লুকিয়ে রেখে ঐ দূর থেকে শুধু একটু দেখব তোমার হাসি মুখখানি। কিছু একটা বলবে আমার প্রিয়া নিলা, এতেও আমার ভয়। আমি নড়াচড়া করতাম। এতে নীলা আপত্তি করলেও আমি বলতাম নো নো। নড়ছো কেন একদম নড়া যাবে না। সোজা হয়ে বসো। মুখে হাসি আনো। ভয়ে এমনিতেই আমার জানে পানি নেই, সেই কঠিন মুহুর্তগুলো হাসবো কিভাবে, এটা ভেবে আমি কুল পাইনা। আড় চোখে তাকিয়ে দেখতাম নীলা মায়া ঝড়া হাসি ছাড়িয়ে আমার নয়নে নয়নে প্রস্তত। অথচ আমি তার বিপরীতে চেষ্টা করেও হাসতে তো পারিনা বরং আমার কাঁপাকাঁপি দ্বিগুন বাড়ে। কান্নার নোনা ধারা ফুসে ওঠে জ্বলোচ্ছাস। আমি মনকে আশায় আশায় রাখি এক তালে জেগে উঠবে রাত ডুবন্ত সব আলো আমাকেও গেঁথে নিবে পবিত্র পূর্ণতায়। নির্বিঘ্নে বেরঙ দুঃখ ভেতরের ষোলকলা রঙ বিলুপ্ত রক্ত কনিকা তোমাকে ভাবতেই মনে আসে আগুন কতকথা আগুন রঙে একে ফেলি তোমাকেই।
 
নীলা সুমন দুটি পাখি একটি মন। তুমি বললে আমাদের প্রেম লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, ইউসুফ-জুলেখার মতোই বিশুদ্ধ অতুলনীয় রোমান্টিক।


    পুরো তিন বছর হয় তোমাকে দেখিনা। তুমি আমাকে ভুলে থাকতে পারো, কিন্তু আমি তা পারিনা। নিজেকে বারবার বোঝাই তুমি কি জানো নীলা, রাত হলে তোমার কথা বেশি মনে পড়ে। রাত আঁধার ধারন করে। আর তাই হয়তো আমার মনের যন্ত্রনা তাতে মিশে গাঢ় আঁধারে পরিণত হয়। তোমার জন্য এক বুক কষ্ট জমা আছে। সেই কষ্টের রং নীল। আর তাই হয়তো তোমাকে নীল কষ্টের নীলা বলে ডেকেছি। হয়তো সারাজীবনই এই নামেই তোমাকে ডাকবো। মনের চিলে কোঠায় তোমার জন্য কত যে হাহাকার। তোমাকে ছাড়া রোজ কত পথ একা হাঁটতে হয়। মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা কতকথা রাখা আছে সযত্নে।


    তোমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র দহনেও ডাকা হযে ওঠেনি তোমাকে। কাক ডাকা ভোরের মিষ্টি আলো থেকে, আকাশে চাঁদের উকিঁ দেওয়ায় প্রতিটি মুহুর্তেই তোমার জন্য অপেক্ষা। নীলা তোমাকে ভালোবেসে পুরো জীবন কাটাতে চাই। প্রতিদিন তোমাকে কাছে না পেলেও কল্পনায় তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস বাস্তবায়নের অপেক্ষা। তোমার আশায় আশায় মাঝ রাতে ঘুম ভাঙে। নদীর ঢেউয়ের ভাজে ভাজে চির-চেনা শীতলক্ষ্যা আমার ভাবের জল গড়াগড়ি খায়। যুগ পর দুজনে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে হাতে হাত রেখে ঘন্টা দুয়েক পার তারপর দুজনা হাত ধরে চলতে চলতে নৌকায় পারাপার। তুমি আর আমি বেলায় ভাসতে ভাসতে পানিতে।