নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

২৪ এপ্রিল ২০২৪

চরম ভোগান্তি এলাকাবাসীর

সিদ্ধিরগঞ্জে ৬নং ওয়ার্ডে ৪দিন ধরে  নাসিকের পানি সরবরাহ নাই

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০৩:১২, ২৭ জুন ২০২২

সিদ্ধিরগঞ্জে ৬নং ওয়ার্ডে ৪দিন ধরে  নাসিকের পানি সরবরাহ নাই

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ডে আবারো পানি সংকট চলছে। গত ৪দিন ধরে ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সিটি করপোরেশনের সাপ্লাইয়ের পানি পাচ্ছে না। রীতিমত পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম র্দুভোগ পোহালেও সিটি করপোরেশনের ঘুম ভাংছে না। পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীদের ফোন দিয়েও ভালো ব্যবহার পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন এলাকার কয়েকজন যুবক।


অভিযোগ রয়েছে, ওয়াসার কাছ থেকে সিটি করপোরেশন দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর কাংখিত সেবা পাচ্ছে না নাগরিকরা। ওয়াসা থাকতে পানি র্দুগন্ধ যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে। মুখে নেয়া যায় পানি। তার উপর নিয়মিত পানি সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ প্রতিমাসে গ্রাহকদের পানির বিল ধরিয়ে দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। 


ভুক্তভোগীরা জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) থেকে ৬নং ওয়ার্ডের সোনামিয়াবাজার, নতুন বাজার, সাবেদ আলী লেনসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ পাচ্ছে না। যারা সাপ্লাইয়ের পানির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল তাদের ভোগান্তি চরমে পৌছে। তারা নিরুপায় হয়ে যাদের বাড়িতে ডিপ টিউবওয়েল আছে তাদের বাড়িতে ধর্ণা দিচ্ছে পানির জন্য। আবার সাপ্লায়ের পানি সরবরাহ না থাকায় ডিপটিউবওয়েল চালাতে গিয়ে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাচ্ছে এলাকাবাসীর। এমন অবস্থায় পানির সংকট নিরসনে ৪দিনেও নাসিকের কার্যকরী পদক্ষেপ না দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগি ওয়ার্ডবাসী।
এলাকার শিক্ষার্থী অভি জানান, পানি সংকট নিয়ে সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন দিয়ে সন্তোষজনক বক্তব্য পাইনি। বরং তার কথায়  হতাশ হয়েছি।


এ বিষয়ে যোগযোগ করা হলেও নাসিকের সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পানি সরবরাহের পাইপ ফেটে গিয়েছে। তাই পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে আজ (২৬ জুন) বিকালের মধ্যে পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু রাত ৯টায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় এলাকাবাসী সিটি করপোরেশনের সাপ্লাইয়ের পানি পায়নি।


এরআগে শনিবার (২৫ জুন) বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহে দায়িত্বরত প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মাসুদ পারভেজ সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের এই ভোগান্তির বিষয়ে বলেন,  পানি সরবরাহ বন্ধ ছিল, এ বিষয়টি অবগত ছিলাম না৷ সিদ্ধিরগঞ্জের যেসব ওয়ার্ডে পানি সরবরাহে সমস্যা হয়েছে, সেখানে দ্রুত সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। অথচ  রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেননি।


ওদিকে নাসিকের সরবরাহকৃত ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি-ই নগরীবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। ওয়াসার দায়িত্ব নেয়ার পৌনে ৩ বছরেও নিরাপদ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে পারেনি নাসিক। কবে নাগাদ নিরাপদ পানি পাবে নগরবাসী তা নিদিষ্ট করে বলতে পারছে না নাসিক। যদিও দায়িত্ব নেয়ার পর নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, নাসিক যখন ওয়াসা দায়িত্ব নিবে, তখন থেকে ২ বছরের মধ্যে সুপেয় পানি দিতে পারব।


সূত্রমতে, ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে ওয়াসা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায় নাসিক।


চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ মডস জোন পরিচালনা করবে নাসিক। ওই সময় বলা হয়, আগামী এক বছর ঢাকা ওয়াসা জনবল এবং কারিগরি বিষয়ে নাসিককে সার্বিক সহযোগিতা করবে।


সমাঝোতা চুক্তি সাক্ষরের সময় নাসিকের পক্ষে মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং ঢাকা ওয়াসার পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও প্রকৌশলী তাকসিম এ খান সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলাল উদ্দীন।


ওই সময় নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতায় আসবে এটা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। বিভিন্ন সংগঠনও এ দাবি করে আসছিল। দাতা সংস্থাগুলো আমাদের সাথে এখন যোগাযোগ করছে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য। পানি ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প চলছে। নাসিক যখন ওয়াসা দায়িত্ব নিবে, তখন থেকে ২ বছরের মধ্যে সুপেয় পানি দিতে পারব। এর জন্য ঢাকা ওয়াসার সকল প্রধান প্রধান সড়কের পানি পাইপ নতুনত্ব করা উদ্যোগ নেয়া হবে।


ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেছিলেন, পানি ব্যবস্থাপনায় ওয়াসার দক্ষতার জন্যই ১৯৯০ সালে নারায়ণগঞ্জের পানি ব্যবস্থাপনা ঢাকা ওয়াসাকে দেয়া হয়েছিল। আমরা এখন শতভাগ পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। আশা রাখি নাসিক তাদের মতো করে পানি ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সাথে করতে পারবে। কিন্তু আড়াই বছরেও নাসিক নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারেনি। ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানিই নগরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। 


 

সম্পর্কিত বিষয়: