নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪

মামুন মাহমুদের ছুরিকাঘাতের ঘটনা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে : গিয়াসউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০৩:৫১, ২৩ মে ২০২২

মামুন মাহমুদের ছুরিকাঘাতের ঘটনা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে : গিয়াসউদ্দিন

সরকারি দলের অর্থপৃষ্ঠকতায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির গুটি কজন দলকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নারায়ণগঞ্জ ৪-আসনের  সাবেক এমপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। 


যারা বিএনপিকে দুর্বল করতে মাইনাসের খেলা শুরু করেছেন, তাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দলের স্বার্থ বিবেচনায় এই পথ পরিহার করার আহ্বান জানান সাবেক এই সংসদ সদস্য। 


রোববার (২২ মে) বিকেলে সিদ্ধিরঞ্জের বাজারস্থ মুক্তিযোদ্ধা নিবাসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রস্ততিমূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন তিনি ।  তবে উপস্থিত সকল নেতাকমীই গিয়াস উদ্দিনের অনুগত।


বিএনপিকে দেশের সর্বোচ্চ জনপ্রিয় দল এবং জিয়াউর রহমানকে সবচাইতে জনপ্রিয় নেতা উল্লেখ করে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন নেতা হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। 


তিনি যতবার পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচন করেছেন, ততবারই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। এই উদাহরণ অন্য কেউ তৈরি করতে পারে নাই। আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানও দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয়। আমারা সেই দল ও তাদের কর্মী হিসেবে গর্ববোধ করি।’ 


আওয়ামী লীগের যতটুকু জনপ্রিয়তা ছিল তাও আজ নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘বিগত দুটি নির্বাচনে কসম করে বলেছিল সুষ্ঠু নির্বাচন দিবে, সেই সুষ্ঠু নির্বাচনতো দূরের কথা, ভোটবিহীন তারা ক্ষমতা ধরে রেখেছে।


 তারা দিনের ভোট আগের রাতেই শেষ করে ফেলে। জনগণের সামনে গিয়ে কথা বলার মুখ তাদের নাই। মানুষ তাদেরকে বিশ্বাস করে না। তারা জানে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে, জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিযেছে এই সরকার।’ 


বিএনপির চাইতে অন্য কোনো দলে এত জনপ্রিয় নেতাকর্মী নাই উল্লেখ করে গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘সরকারি দল ভালো করে জানে, বিএনপিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করা যাবে না। তাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে কুটকৌশল অবলম্বন করছে। 


মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার, কুটকৌশলের মাধ্যমে সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেও তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার ভোটপ্রয়োগের ক্ষমতাকেও তারা নসাৎ করে দিয়েছে।’ 


দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার দেশের মানুষকে সরকার দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলে দিয়েছে মন্তব্য করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘সর্বত্র সিন্ডিকেট। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। জনগণ তাদের দুর্নীতিতে দিশেহারা। 


তাই জনগণ প্রস্ততি নিয়ে ফেলেছে সরকারকে অপসারণ করার জন্য। তাই বিএনপিকে বেশি ভয় পাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কোনো অবস্থাতেই তারা পেরে উঠবে না। তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত। সে কারণে তারা বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র করছে।’


নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদের ছুরিকাঘাতের ঘটনা নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে এবং মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করে আমাদের ঘায়েল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন গিয়াসউদ্দিন। 


তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় একজন সন্ত্রাসী ধরা পড়েছে। জবানবন্দিও দিয়েছে। তারপরও আমাদের কীভাবে ঘায়েল করা যায়, তাদের প্রতিপক্ষ করা, কীভাবে তাদের নির্মূল করা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে তারা নির্বাচন করতে চায়।’ 


সরকার দলীয় একজন নেতা খালি মাঠে গোল দেওয়া লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র করছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তারা নির্বাচনে যাদেরকে ভয় পায়, তারা যেন নির্বাচনে আসতে না পারে, দল থেকে যেন বহিষ্কৃত হয়, সে চেষ্টাই করছে। 


তারা আমাদের ঘরের ঐক্য নষ্ট করতে, বিএনপিকে বিভক্ত করতে, ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এবং সেই ষড়যন্ত্রের সাথে আমাদের দলের কিছু ব্যক্তি নিজ স্বার্থে, তাদের টোপ গিলেছে। যার কারণে তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দিকে না এসে ষড়যন্ত্রমূলক কাজের মধ্যে জড়িত হচ্ছে। 


‘ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়’ মন্তব্য করে দলের মধ্যে থেকে যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের উদ্দেশ্য সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘আপনার হীনমনতা পরিহার করুন। 
সরকারি দলের মানুষের পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা উস্কানিতে দলের মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্রকে ঠাঁই দিবেন না। দলের মধ্যে কোনো বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না।’ নেতাকর্মী বৃদ্ধি করা কঠিন, বাদ দেওয়া সহজ বলে মন্তব্য করে তিনি। 


দলকে সমৃদ্ধ, গতিশীল করার কথা জানিয়ে গিয়াসউদ্দিন ষড়যন্ত্রকারিদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘দলে থেকে যারা আমাদের বিরুদ্ধে বলেন, আপনাদেরও কিন্তু বাদ দিয়ে আমরা চিন্তা করি না। সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা দলটা করতে চাই। 


যাতে বিএনপিকে কেউ দুর্বল করতে না পারে।’ সরকারি দলের ব্যক্তি বিশেষের হাতিয়ার হয়ে নিজের দলকে ক্ষতি করার চেষ্টা না করতে হুঁশিয়ারী দিয়ে গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘আত্মঘাতি কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করবেন না। 


মামুন মাহমুদের ঘটনাটি নিন্দনীয়। ফতুল্লাতে বলেছি, যারা আমাদের সদস্য সচিবকে ছুরিবাঘাত করেছে, তাদের ঘৃণা জানাই। ন্যায় বিচার দাবি করেছিলাম। কিন্তু আপনারা কি করছেন! 


যারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই কাজ করেছে তাদের স্বার্থ উদ্ধারে আপনিও যোগ হচ্ছেন। এতে করে দলের কত বড় ক্ষতি হচ্ছে, একবারও ভাবছেন না।’ 


নারায়ণগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তীল তীল করে মেধা, শ্রম মামলা মোকাদ্দমা খেয়ে যারা বিএনপিকে আকড়ে ধরে আছে, আপনারা বিভিন্ন থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে তাদেরকে বাদ দিয়ে, ব্যক্তি বিশেষের অর্থপুষ্ট হয়ে প্রহসনমূলক কাউন্সিল দেখিয়ে পকেট কমিটি করেছেন। 


এসব কমিটি প্রত্যাখান করে এর বিরুদ্ধে অনেকেই বক্তব্য দিয়েছে। কেন্দ্রেও নালিশ করেছে। নিজেদের দিকে একটু তাকান, কোথায় আছেন আপনারা। কাদেরকে বাদ দিয়ে বিএনপি করতে চান, একবার চিন্তা করে দেখেন।’ 


প্রতিটি নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে সাজাতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে বিএনপি যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের অনেকে বেঁচে নেই। আব্দুল মতিন চৌধুরী, হাজী জালাল আহম্মেদ, কমান্ডার সিরাজ, হাসান জামালদের স্থলে আপনারা কোন নেতা নেতৃত্ব দিচ্ছেন একবার ভেবে দেখেন! খালি বড় বড় কথা বলেন আর মাইনাস করার জন্য চেষ্টা করেন। 


আর তারা ছিল কীভাবে প্লাস করবে, সে জন্য তারা এই দলটাকে এখানে দাঁ করিয়ে দিয়ে গেছে। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য এই দলকে আপনারা ছোট করার চেষ্টা করবেন না।’ 


এ ছাড়া গিয়াসউদ্দিন জিয়ারউর রহমানের শাহাৎ বার্ষিকীতে কারো কাছ থেকে কোনো চাঁদা আদায় না করে, নিজেদের যতটুকু সমর্থ আছে, সে অনুযায়ি পালন করার আহ্বান জানান। এবং সাতদিনব্যাপী সুশৃঙ্খলভাবে এই কর্মসূচি পালন করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। 


সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য এম,এ,হালিম জুয়েলের সভাপতিত্বে ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাজেদুল ইসলামের পরিচালনায় উক্ত প্রস্তুুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডি,এইচ,বাবুল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এস,এম,আসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিকদলের সভাপতি আকবর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোস্তফা কামাল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাসাসের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাধীন, একে,এম, সামছুল হক, আহসানউল্লাহ মুন্সি, মোহাম্মদ আলী, সিরাজুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, সেলিম মাহমুদ, শ্যামল আনোয়ার, নুর ইসলাম নুরা, শরীফ হোসেন, শহীদুল্লাহ, আব্দুল হাই, আনিছ সিকদার, জামাল প্রধান ও ইউছুফ প্রমূখ।