নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪

চাষাড়া ট্রাজেডি : বিচারের আশায় ২০ পরিবার

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:২২:৪৫, ১৬ জুন ২০২১

চাষাড়া ট্রাজেডি : বিচারের আশায় ২০ পরিবার

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া আওয়ামীলীগ অফিসে নৃসংশ বোমা হামলার ২০ বছর আজ (১৬ জুন)। ভয়াবহ এই বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা কর্মী ও এক নারীসহ ২০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। যা নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও বেদনাদায়ক ঘটনা। কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছরেও শেষ হয়নি নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের বিচার কাজ। প্রতি বছর এই দিনে হতাহতদের স্বজনরা চোখে জলে তাদের স্বজনদের স্মরণ করে। ঘটনাস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু কবে শেষ হবে বোমা হামলা মামলার বিচার কাজ তা কেউ বলতে পারছে না। বিচারের আশায় প্রহর গুনছেন নিহতদের স্বজনরা। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র সদস্যকে হারিয়ে আর্থিক দৈন্যদশায় জর্জরিত অনেক পরিবার বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। শত কস্টের মাঝেও তাদের দাবী, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা হউক।


১৯৯৬ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতি শনিবার ও সোমবার সাধারণ মানুষদের সাক্ষাৎ দিতেন শামীম ওসমান। ২০০১ সালের ১৬ জুন ছিল সোমবার। সেদিন বিকেলের পর থেকেই চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে জড়ো হতে থাকেন লোকজন। সকলের উদ্দেশ্যে ছিল শামীম ওসমানের সঙ্গে দেখা করা। কিন্তু তখনো কেউ বুঝতে পারেনি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যুদূত। রাতে যখন একে একে শামীম ওসমান লোকজনদের সাক্ষাৎ দিচ্ছিলেন রাত পৌনে আটটার দিকে ঘটে বিকট শব্দে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ-নেতাকর্মীদের লাশ। চিৎকার, আহাজারিতে ঘটনাস্থলের বাতাস ভারী হয়ে উঠে। বেদনাদায়ক এক পরিস্থিতির সৃস্টি হয় পুরো চাষাড়াজুড়ে। নিহত হয় ২০ জন। এমপি শামীম ওসমানসহ আহত হয় কমপক্ষে অর্ধশত। চিরতরে পঙ্গুত্ব বরন করেন আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন শীল ও রতন দাস। 


সেদিন যারা নিহত হয়েছিলেন
সেদিন নিহত হয়েছিল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পী, সহোদর সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের জিএস আকতার হোসেন ও সঙ্গীত শিল্পী মোশাররফ হোসেন মশু, সঙ্গীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা, মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, আবু হানিফ, এনায়েতউল্লাহ স্বপন, আব্দুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাত এক মহিলা। নিহত মহিলার পরিচয় পেতে তেমন কোন চেষ্টা করেনি প্রশাসন। 
 


এদিকে ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুইটি মামলা দায়ের করেন। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুণরায় ক্ষমতায় আসলে মামলাগুলো পূণরুজ্জীবিত করা হয়। দুটি মামলায় ৭ বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর ৮ম তদন্ত সংস্থা সিআইডি ১২ বছর পর ২০১৩ সালের ২ মে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। চার্জশিটে অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ যুবদলের নেতা শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল কারাগারে রয়েছে, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের অন্য একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।


ভারতের দিল্লী কারাগারে আটক রয়েছে জঙ্গী নেতা দুইভাই আনিসুল মোরসালিন ও মুহিবুল মুত্তাকিন। বর্তমান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এর ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুন রয়েছেন জামিনে। জঙ্গী নেতা ওবায়দুল্লাহ রহমান পলাতক রয়েছে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে মামলাটির স্বাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।


মাত্র ৩৩ মাসে ৭ খুন মামলার বিচার কাজ শেষ হলেও দীর্ঘ ২০ বছরেও ২০ জন হত্যা মামলার বিচার না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত বিচার শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন নিহতের স্বজনরা।


এছাড়াও, মামলায় ন্যায় বিচার পাওয়ার ব্যাপারে হতাশা নয়, বিচার দ্রুত শেষ করতে সাক্ষীদের উদ্যোগী হয়ে আদালতে গিয়ে স্বাক্ষী দেয়ার অনুরোধ করেছেন মামলার বাদী খোকন সাহা। 


এদিকে, রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীও জানান মামলার স্বাক্ষগ্রহণে দেরি ও বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিচারকাজে দেরি হচ্ছে। তবে, পরিস্থিতি ঠিক হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করার জন্য তাদের ওপরেও চাপ রয়েছে।

প্রতি বছরের মতো বুধবার (১৬ জুন) সকালে চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে নিহতদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নিহতদের স্বজনসহ বিভিন্ন সংগঠন।

সম্পর্কিত বিষয়: