নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

২৪ এপ্রিল ২০২৪

লিংকরোড সম্প্রসারণে মন্থর গতি, ভোগান্তি চরমে

নুসরাত জাহান সুপ্তি

প্রকাশিত:০২:২৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

লিংকরোড সম্প্রসারণে মন্থর গতি, ভোগান্তি চরমে

ব্যস্ততম সড়ক ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড ৪ লেন থেকে ৬ লেনে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সড়কের অংশাবিশেষে চলছে সংস্কার ও নির্মাণ কার্যক্রম । সংস্কার কার্যক্রম চলমান থাকায় সড়কের একাধিক স্থানে দুইলেনে চলছে যানবাহন। সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচলে ক্ষণে ক্ষণে সৃষ্টি হচ্ছে লম্বা যানজট। সড়কের খানাখন্দে যানবাহন উল্টে ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে চরম বিপাকে পড়ছে জনগণ।

 

এদিকে লিংক রোড সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ফুরালেও প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ অবশিষ্ট রয়েছে।  সড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে একাধিক বিপাকে পড়েছেন বলে জানান সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সড়কের পার্শ্ববর্তী গ্যাস লাইন, বৈদ্যুতিক খুঁটি সময় মতো সড়ানো যাচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ।  বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে সড়কের কাজে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। সড়কের অধিকাংশ ভূমি বেদখলে থাকায় সড়ক সম্প্রসারণের প্রকল্পের কার্যক্রম মন্থর গতিতে চলছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ  সড়ক ও জনপদ বিভাগ।  

 

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের সূত্রমতে, সড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সড়ক উন্নতীকরণ পরবর্তী সড়কটি প্রায় প্রশস্থ হবে ১৪২ ফুট। এই প্রকল্পের আওতায় সড়কের ৩টি পয়েন্টে হবে আন্ডারপাস ও দুটি পয়েন্টে ফুটওভারব্রিজ হবে। সাইনবোর্ড ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে ও  শিবু মার্কেট, জালকুড়ি ও ভুইগড়ে আন্ডারপাস নির্মাণ হবে। 

 

জানা যায়, যানজট নিরসনের উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই ঢাকা—নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড ৬ লেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পের প্রস্তাব পরবর্তী প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এনডিই—টিবিএল—এইচটিবিএল—জেভি নামক যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নিধার্রন হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রথম  মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের বৃহদাংশ কাজ অবশিষ্ট রয়েছে। কার্য সম্পাদনে প্রকল্পের নতুন মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নিধার্রিত হয়েছে।

 

এদিকে সড়কে দীর্ঘ সময়ের দৃশ্যমান কার্যক্রমের ফলে অধিক যানযট হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। মাস পেরিয়ে বছর গড়িয়ে গেলেও এ ভোগান্তির যেন শেষ নেই । অন্যদিকে সড়ক ও জনপদ বিভাগের দাবি,  সড়কের  পাশ্ববর্তী গ্যাস ও বৈদ্যুতিক লাইন যথাসময়ে সড়ানো হয়নি বিধায় কাজের গতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।  

 


সরেজমিনে সড়ক ঘুরে দেখা যায়,  সড়কের অধিকাংশ স্থান খানাখন্দেভরা।  সড়কে কেটে সড়কের কার্যক্রম চালিত অধিকাংশ স্থানে চলাচল নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।  কিন্তু এসব স্থানে মাসের কয়েকদিন কাজ চলমান রইলেও অধিকাংশ দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। যেখানে  পুরো প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ১৭ মাস কিন্তু সড়কের শিবুমার্কেটে আন্ডারপাস তৈরির কার্যক্রম চলছে প্রায় ৪ মাস যাবৎ।  এই কার্যক্রম শেষ হতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যদিও সেখানে চলমান কার্যক্রমের গতি অনুযায়ী আন্ডারপাসের কার্যক্রম  শেষ  হতে মাসখানেক সময় লাগবে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। সড়কে খানাখন্দ থাকায় প্রায়ই ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। নির্মাণাধীন সড়কে যানবাহন আটকে তৈরি হয় লম্বা যানজট। এই সড়কের যানজট যেন নিত্যদিনের ভোগান্তি হয়ে দাড়িয়েছে।

 

শিবু মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী আহসানুল্লাহ বলেন, বছর শেষ হইয়া গেল রাস্তা কাটছে, কয়েকমাস হইছে আন্ডারপাসের কাজ শুরু করছে। কিন্তু শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রাস্তার কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ায় শুধু চলাচলে কষ্ট হচ্ছে তা নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যাম (যানজট) থাকে। কিছু দিন পর পর কাজ করে। কাজের গতি ঠিক নাই। রাস্তা গর্ত করে এমনে ফালায় রাখলে গাড়ির চলতেও সমস্যা হয়। কিছু দিন আগে একটা অটো পড়ে গেছিলো। মারাত্মক ব্যাথা পায়নি। 

 

 জালকুড়ি সংলগ্ন সড়কে অর্ধ শতাধিক এলপিজি সিলিন্ডার সহ একটি ট্রাক সড়কের গর্তে আটকে পড়ে। এরফলে জালকুড়ি থেকে জেলা কারাগার পর্যন্ত  সৃষ্টি হয় লম্বা যানজট। এসময়ে যানজটে ভুক্তভোগী নরুল আমিন মোল্লা বলেন, এই রাস্তায় আসলে জ্যামে পড়ব এটাই এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।  একবার জ্যামে পড়লে ঘন্টা পাড় হইয়া যায়। যেভাবে ট্রাকটা একদিকে হেলে গেছে, সিলিন্ডার কয়েকটা নিচে পড়ছে। এখানে মারাত্মক দূর্ঘটনা হতে পাড়ত। 

 

 

নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসির (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদ  সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়ানো প্রসঙ্গে বলেন, লিংক রোডে আমাদের আরো শতাধিক খুঁটি হবে সড়ানো অবশিষ্ট রয়েছে।  এগুলো শীগ্রই সড়িয়ে দেওয়া হবে। 

 

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন এই বিষয়ে বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ৬ লেন উন্নতীকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু করার পরবর্তীতে আমাদের একাধিক বিপাকে পড়তে হয়েছে। লিংক রোডের দুইপাশে একাধিকবার বর্জ্যের স্তূপ সড়ানোর প্রয়োজন হয়েছে। রোডের দুইপাশের অবৈধ স্থাপনা   সড়াতে অতিরিক্ত সময় লেগেছে। সড়কের নিচে বৈদ্যুতিক খুঁটি, গ্যাস লাইন থাকায় সড়কের কিছু কিছু অংশ বাদ দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। আমরা এসব বিভাগের কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েছি। তাদের কার্যক্রম সম্পাদনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। জেলা পরিষদের পর থেকে চাষাড়া পর্যন্ত সড়কে আমরা কাজ করতে পারছি না আপাতত। কারণ,  এখানের জায়গা নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।  সড়কের পাশে কিছু জায়গা ১৮৮১ সালে  অধিগ্রহণ করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে এই জায়গা আমরা একোয়ার (অর্জন)  করি। এ কারণেই জায়গা পেতে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। সড়ক বর্তমানে ১৪২ ফুট প্রশস্থ করতে হবে।  কিন্তু সড়কের দুই পাশে আর্মিদের মার্কেট রয়েছে। এগুলো তো ভাঙতে হবে। এ বিষয়ে আর্মি কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কয়েকদফা মিটিং হয়েছে। সড়ক প্রশস্তে ২ একর জায়গা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় জায়গা পেলে আমরা সড়কের অবশিষ্ট অংশের কাজ শুরু করব। শিবুমার্কেটে নির্মাণাধীন আন্ডারপাসের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্ডারপাসের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ হলে আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আশাকরি, সকল জটিলতার অবসান করে মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হবে।
 
 

সম্পর্কিত বিষয়: