নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪

জিয়া হল প্রাঙ্গনে তাঁত বস্ত্র মেলার নামে কোটি টাকা বাণিজ্য

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০০:১২, ৩০ এপ্রিল ২০২২

জিয়া হল প্রাঙ্গনে তাঁত বস্ত্র মেলার নামে কোটি টাকা বাণিজ্য

শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জের তাঁতীদের নিপুণ হাতে তৈরি জামদানি শাড়ির সুনাম রয়েছে বিশ^জুড়ে। দরিদ্র তাঁতীদের উন্নয়নে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়ায় জিয়া হল প্রাঙ্গণে ঈদ উল ফিতর ঘিরে তাঁত বস্ত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

 

কিন্তু তাঁতীদের কল্যাণে অনুমোদন দেওয়া হলেও মেলায় সিংগভাগ জুড়ে বিদেশী শাড়ি ও অন্যান্য পণ্যের পসরা বসেছে। বিনা পয়সায় মেলা আয়োজনের অনুমোদন মিললেও দোকানীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি টাকা। এই টাকার বড় একটি অংশ জেলা প্রশাসনের দপ্তরেও গিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

বাংলাদেশ উইভার্স প্রডাক্ট অ্যান্ড ম্যানু. বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁতীদের কল্যাণার্থে মেলা করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে ঈদ উল ফিতরকে কেন্দ্র করে রমজানের শুরুতে নারায়ণগঞ্জে তাদের আয়োজনে মেলা বসেছে।

 

জেলা প্রশাসন থেকে বিনা মূল্যে মেলার অনুমোদন নেওয়া হলেও মেলায় প্রতিটি দোকান সর্বনিন্ম ৫ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

 

তাঁত বস্ত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নাম দিয়ে মেলার আয়োজন করা হলেও সরেজমিনে মেলার ভেতর প্রবেশ করলে চোখে পড়ে ভিন্ন এক চিত্র। বিদেশী পণ্যসহ হরেকরকম পণ্যের পসরা বসেছে। মেলার শুরুতে রয়েছে আনোয়ার জামদানি কুটির নামে একক মালিকাধীন দুটি শাড়ির দোকান।

 

এছাড়া ১৬টি দোকানে রয়েছে দেশী ও বিদেশী কসমেটিকস, জুয়েলারি, গার্মেন্টস পোশাক, জুতা সহ বিদেশী ব্রান্ডের ইলেক্রট্রনিক্স পণ্য।  মায়ের দোয়া অপটিকস, তাহসিন  এন্টারপ্রাইজ, ঢাকাইয়া মডেল, ফ্যাশন ফেয়ার, এস কে শৌখিন রুটি মেকার, পাঞ্জাবী হাউজ, টপ টেন পাঞ্জাবী গ্যালারি, টপটেন গিফট কর্নার, মেঘলা এন্টারপ্রাইজসহ আরো দুটি ডিলারের ইলেকট্রনিকাল পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

 

ঈদকে কেন্দ্র করে এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে হরেকরকম পণ্য। মেলার এতো পণ্যের মাঝে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দুটি ইলেকট্রনিক্সের দোকান। দোকানের ব্যানারে লেখা ‘১টি পণ্য কিনলে ১০ টি ফ্রি’। ফ্রি পণ্যের আকর্ষণ দেখিয়ে নানা কৌশলে গ্যারান্টির নামে এসব পণ্য বিক্রি করছে। দেশের বিভিন্ন মেলাতে তারা পণ্য বিক্রি করে। কিন্তু তাদের নির্দিষ্ট কোন শো রুম নেই। ফলে পণ্যের সমস্যা হলে তাদেরকে আর পাওয়া যায় না। 

 

ভুক্তভোগী একজন ক্রেতা বলেন, ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির জন্য অনেক অফার দেয়। ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির পর তাদের একজন কর্মীর নম্বর দেয়। পণ্যের কোন সমস্যা হলে ওই কর্মীর সাথে যোগাযোগ করতে বলে।  নির্ধারিত পণ্যের শো-রুম সম্পর্কে কোন তথ্য দেয় না। যে ভিজিটিং কার্ড দেয়, কার্ডের নম্বর সব বন্ধ। পণ্যের গ্যারান্টি দেয় কিন্তু শো-রুম নাই বিধায় পরবর্তীতে হয়রানির শিকার হতে হয়। 

 

জানা যায়, মেলায় বাঁশের খুঁটি দিয়ে নির্ধারিত করা হয়েছে দোকানের স্থান। ৫০টির বেশি বাশের খুঁটি দিয়ে মেলার স্থান বিভক্ত করা হয়েছে। বাঁশের খুঁটি অনুযায়ী প্রতিটি স্থানের মাসিক ভাড়া দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা ভাড়া র্নিধারিত। সর্বনি¤œ দুই থেকে আটটি বাঁশের খুটি নিয়ে প্রতিটি দোকান বসেছে।   

 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুৃক একজন দোকানদার বলেন, আমরা এর আগেও এখানে মেলা করছি। তখন লাভ হওয়ায় আবারো আসছি। আগে প্রতিদিন লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হইতো। কিন্তু এখন লাভ কমে গেছে। পাঁচটা বাশের খুঁটি নিয়ে আমাদের দোকান। এক মাসে প্রতি খুঁটির জায়গার ভাড়া ২ লক্ষ টাকা। মোট ১০ লাখ টাকা ভাড়া।

 

অগ্রীম দুই লাখ টাকা মেলার কমিটিতে দিয়েছি। বাকিটা বিক্রি করব আর সপ্তাহে সপ্তাহে দিয়ে দিবো। এখানে ভাড়া বেশির কারণ দেখিয়ে তিনি জানান,  নারায়ণগঞ্জে চাহিদা বেশি, তাছাড়া মেলার কমিটি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশাসন থেকে মেলার অনুমোদন নিয়েছেন। 

 

মেলার অপর একজন দোকানদার একই তথ্য দিয়ে বলেন, ৮ খুঁটি জায়গা নিয়ে আমাদের দোকান। এই দোকানের ভাড়া ১৬ লক্ষ টাকা। একই মালিকানায় আমাদের দুটি দোকান রয়েছে। ওই দোকানের ভাড়াও একই। তাঁত পণ্যের বিক্রি কম তাই অন্য পণ্যই মেলায় উঠেছে। 

 

তাঁত বস্ত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার দায়িত্বে থাকা মো. হাবীব এ বিষয়ে বলেন, আমাদের মেলা থেকে কোন ভাড়া উঠানো হচ্ছে না। সব দোকান তাঁতীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু তাঁতীদের পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর জন্য মেলার আকর্ষণ হিসেবে অন্য কিছু পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আর দোকানের বিনিময়ে কোন টাকা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। 

 

মেলার আয়োজক বাংলাদেশ উইভার্স প্রডাক্ট অ্যান্ড ম্যানু, বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সালাউদ্দিন জানান, মেলায় জামদানি শাড়ির দোকান দিলে মেলায় লাভ হয় না। এখন শাড়ি কেউ কিনে না। এজন্য মেলায় অন্যান্য পণ্যও রাখা লাগে। 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখার নাজির কামরুল ইসলাম জানান, জিয়া হলের খালি মাঠে কোন ধরনের অর্থ পরিশোধ ছাড়া তাঁতীদের কল্যাণে মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাঁতীরা তাদের তাঁতবস্ত্র বিক্রি করবেন। এছাড়া বিদেশী পণ্য বিক্রি করলে মেলার আয়োজকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) রহিমা আক্তার এ বিষয়ে বলেন, আমি কিছুদিন পূর্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো অবগত নই। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  
 


 

সম্পর্কিত বিষয়: