নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে ঈদের ছুটিতে ঝরলো ১১ প্রাণ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০৫:১৫, ১৭ জুলাই ২০২২

নারায়ণগঞ্জে ঈদের ছুটিতে ঝরলো ১১ প্রাণ

ঈদের ছুটি শেষ হলেও আমেজ কাটেনি নারায়ণগঞ্জে। ঈদকে কেন্দ্র করে এখনও মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহর ও শহরতলীতে। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের ভিড় লেগেই আছে। তবে এতসব আনন্দ উচ্ছ্বাসের মাঝেও কিছু বার্তা সেই আনন্দকে ম্রিয়মাণ করে তুলেছে।

 

ঈদের ছুটি উপভোগ করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা, বন্ধুদের সাথে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু বেশ নাড়া দিয়েছে সকলকে। আনন্দের মাঝে বিষাদের বার্তা পেয়ে শোকাহত নগরবাসী।


গনমাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ঈদের ছুটিতে ৯ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিনে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ জন। অন্যদিকে পানিতে ডুবে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।


 সড়ক দুর্ঘটনা

নারায়ণগঞ্জের সদর,বন্দর, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ উপজেলায় ৪টি দূর্ঘটনা ঘটে। যার প্রতিটি ঘটেছে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে। বিভিন্ন গনমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ১৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাস প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে সুমাইয়া মাহিমা খাতুন নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দড়িকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

 

এর দুইদিন পূর্বে নারায়নগঞ্জের বন্দরে মহাসড়কে রাস্তা পারাপারের সময় গাড়ীর চাপায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের জাঙ্গাল নামক এলাকায় এ দূর্ঘটনাটি ঘটে।

 

খবর পেয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে ওই মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন। ১১ জুলাই রূপগঞ্জে অজ্ঞাত এক গাড়ির ধাক্কায় আবু সাঈদ (৭৫) নামের এক পথচারী নিহত হয়েছেন।

 

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রামুড়া এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় অজ্ঞাত একটি গাড়ির ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাঈদ যাত্রামুড়া এলাকার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে। ৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অজ্ঞাত একটি বাসের চাপায় আব্দুর রহমান (৫৭) নামের এক পিকআপভ্যান চালক নিহত হয়েছেন। সানারপাড়-মৌচাক ইউটার্ন এলাকায় অজ্ঞাত একটি বাস পিকআপভ্যানটিকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।


 পানিতে ডুবে মৃত্যু

 অন্যদিকে সদর, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ উপজেলায় ঈদের ছুটি উপভোগ সহ অন্যান্য কারণে ৭ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। ১৬ জুলাই আড়াইহাজারে নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে খালের পানিতে ডুবে দোলা আক্তার নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাইজাদি ইউনিয়নের সালমদি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ১৪ জুলাই ফতুল্লার পাগলায় বুড়িগঙ্গা নদীতে বন্ধুদের সাথে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সাজ্জাদ হোসেন।  

 

নিখোঁজের ২৬ ঘন্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তার লাশ উদ্ধার করে । এর আগের দিন পৃথক তিনটি ঘটনায় ৪ জনের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। আড়াইহাজার উপজেলার টেকপাড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের আলী আকবরে ছেলে তাউসান ও আলী মিয়ার ছেলে সিফাত।

 

ওইদিন সদর উপজেলার গোগনগর  ইউনিয়নের কয়লাঘাট এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী মিরাজের লাশ উদ্ধার হয়। ঈদের ছুটিতে বন্ধুদের সাথে শীতলক্ষ্যা নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।  একইদিন রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে আল আমিন (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

 

তারাবো পৌরসভার বাঁশপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ৯ জুলাই ফতুল্লার বুড়িগঙ্গা নদীর পাগলা ঘাট এলাকা থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পাগলা নৌ পুলিশ।


জেলার সচেতন মহলের মতে, ঈদের আনন্দকে বিষাদে পরিণত না হয়, এজন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। যে সকল কারনে সড়কসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা হয় তা তড়িৎ চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করে মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মিছিলের লাগাম টানা আবশ্যক ।

 

সকল যায়গায় গাফিলতি করলেও যেন মানুষের জীবন নিয়ে হেলাফেলা না করা হয় সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী । যাত্রী সাধারনকে মনে রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি ।

 

প্রয়োজনে কঠোর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল দুর্ঘটনা রোধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। ঈদসহ অন্যান্য সময়ের আনন্দের সফরে যেন নিরানন্দ হানা দিতে না পারে তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

সম্পর্কিত বিষয়: