নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

০২ মে ২০২৪

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট’র ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শহরে শ্রমিক সমাবেশ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৮:৪৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট’র ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শহরে শ্রমিক সমাবেশ

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ ও শহরে লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকাল ৩ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ শ্রমিক সমাবেশ ও শহরে লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিক নেতা কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির। সমাবেশে গণসংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, শ্রমিকের ন্যায়সঙ্গত মজুরি নির্ধারণ হয়নি, অথচ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। অন্যদিকে ছাঁটাই, হয়রানিসহ মালিকদের পক্ষ থেকে নির্যাতন বেড়েই চলেছে। করোনা বা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতির সংকটের কথা বহুভাবে বললেও মালিকদের মুনাফা ও সম্পদ বেড়েই চলেছে। 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি যার মধ্যে প্রায় ৭ কোটি ৩৬ লাখ শ্রমিক যারা কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে কাজ করে। শ্রমিকের শ্রমে উৎপাদন বাড়ে, দেশের প্রয়োজন মেটে, বিদেশে পণ্য রপ্তানি হয়। এই শ্রমজীবীদের শ্রমের ফলে মাথাপিছু আয় বেড়ে সরকারের হিসেবে এখন ২৭৬৫ ডলার। 

এই আয়ের পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান শ্রমিকদের। তাহলে ৫ সদস্যের একজনের পরিবারের মাসিক আয় হওয়ার কথা ১ লাখ ২৯ হাজার টাকারও বেশি। কিন্তু কোন শ্রমিক পরিবার মাসে এই পরিমাণ টাকা আয় করতে পারে?

গার্মেন্টস, চা, রি-রোলিং, তাঁত, পাটকল, পরিবহণ, হোটেল, দোকান কর্মচারীসহ বাংলাদেশের সকল সেক্টরের শ্রমিকদের মজুরি পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে কম। অথচ দেশে কোটিপতিদের সংখ্যা বাড়ছে, মালিকদের বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংকের টাকা, বিদেশে টাকা পাচার সবই বাড়ছে।

সরকারের দাবি, তাদের আমলে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছিয়েছে, কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকের মজুরি কি মধ্যম আয়ের দেশের মতো নির্ধারণ করা হয়েছে? একদিকে দ্রব্যমুল্যের আঘাত অন্যদিকে কম মজুরি দিয়ে শোষণ এই দুই কারণে শ্রমিকদের জীবনের দুঃখ বেড়েই যাচ্ছে।

রাজেকুজ্জামান রতন আরও বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন ছাড়া শ্রমিকদের সংগঠিত করা কঠিন। শ্রমিকদেরকে অসংগঠিত রাখতে  ২০০৬ সালে প্রবর্তিত এবং ২০১৩ ও ২০১৮ সালে সংশোধিত শ্রম আইনের ১৭৯ ও ১৮০ ধারার মাধ্যমে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে। 

২০২৩ সালে শ্রম আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের প্রণয়ন হয়নি।  আইনের ২৩ ধারা ব্যবহার করে হয়রানি ও ২৬ ধারার বলে মালিকের হাতে শ্রমিক ছাঁটাই করার অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মুত্যু হলে ক্ষতিপূরণ মাত্র ২ লাখ টাকা। 

অন্যদিকে যারা অসংগঠিত খাতে কাজ করে যেমন- হালকা যানবাহন, রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, পরিবহন, মোটর মেকানিক, তাঁত, নির্মাণ, পাদুকা, হকার, দিনমজুর তাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তাদের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা বলতে কিছু নেই। আউট সোর্সিং ও ঠিকাদারি প্রথা চালু করে শ্রমিকদের স্থায়ী চাকরির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আন্দোলনের চাপে কখনো মজুরি বাড়ালেও জিনিসপত্রের দাম, বাসাভাড়া, চিকিৎসার খরচ বাড়িয়ে তা আবার শ্রমিকদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়। ফলে শুধু মজুরি বৃদ্ধি নয় এর সাথে আবাসন, রেশন, চিকিৎসা, শিক্ষার অধিকারের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 

এই আন্দোলনে বিজয়ী হতে হলে একদিকে দমন পীড়ন মোকাবিলা করে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে আদর্শভিত্তিক সংগঠনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টকে শক্তিশালী করতে হবে। 

অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রম অধিকার সংকোচনের সকল প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে; গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শ্রমিকদের রেশন, আবাসন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। 

যথাযথ আইন ও মান নির্ধারণ করে ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইকসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানের দাবি সমস্ত দিক থেকে যৌক্তিক প্রমানিত হয়েছে। এই দাবি উপেক্ষা করা যাবে না। পুনর্বাসন ছাড়া হকার, রিকশা উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।

প্রবাসী শ্রমিকরা আমাদের রিজার্ভ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাদের বিদেশ যাওয়ার ব্যয় কমাতে হবে, বিনা সুদে তাদের ঋণ দিতে হবে এবং ফিরে আসা প্রবাসীদের সহযোগিতা করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ ন্যায্য মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, মৃত্যু হলে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান, পেনশন, রেশন, আবাসন, চিকিৎসাসহ শ্রমিকের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
 

সম্পর্কিত বিষয়: