নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আলিফ জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ছায়েদ আলী (৪৯) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বজন ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী হাসপাতালটি ঘেরাও করে দোষীদের শাস্তি দাবী করে প্রতিবাদ জানায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হাসপাতালের অনেকেই পালিয়ে যায়। পরে দরজার তালা ভেঙ্গে পুলিশ অভিযুক্ত চিকিৎসক মশিউর রহমান (২৭)সহ ৩জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (২ জুলাই) রাত ৮টার দিকে আদমজী নতুনবাজার এলাকায়।
নিহত ছায়েদ আলী সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের সুমিলপাড়া এলাকার মো.সাইজুদ্দিনের বেপারীর ছেলে।
নিহতের ছেলে জাহিদ জানান, আমার বাবা হঠাৎ বুকে ব্যাথা অনুভব করলে তাঁকে আমরা আদমজীর নতুনবাজার আলিফ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার মশিউর রহমানকে আমার বাবার বুকে ব্যাথা অনুভব করার কথা জানালে সে তাৎক্ষনিক আমার বাবাকে হাসপাতালের বেডে নিয়ে প্রথমে স্যালাইন পুশ করে। তার কিছুক্ষন পর স্যালাইন চলাকালীন সময় ডাক্তার মশিউর ওই স্যালাইনের সাথে আরো তিনটি ইনজেকশন দেন। ইনজেকশন পুশ করার সাথে সাথেই আমার বাবার খিচুনি উঠতে শুরু করে। সেখানেই তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার খবর গোপন রেখে ডাক্তার মশিউর রহমান আমার বাবাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।
তিনি আরও জানান, আমার বাবার মৃত্যুর পর ডাক্তার মশিউর ওই হাসপাতালের তালাবদ্ধ একটি কক্ষে আত্বগোপন করেন।
মৃত্যুর খবর পেয়ে নিহতের আত্মীয় স্বজন রাত ৮টার দিকে আলিফ জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর চড়াও হন। তাঁরা ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ তুলেন। সঙ্গে যোগ দেয় বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী। পরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই হাসপাতালের বেশ কয়েকটি কক্ষের দরজার তালা ভেঙ্গে অভিযুক্ত ডাক্তারকে আটক করেন।
খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবু বক্কর সিদ্দিকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং দরজার তালা ভেঙ্গে অভিযুক্ত ডাক্তারসহ তিন জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
সাংবাদিকদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদে ডাক্তার মশিউর স্বীকার করেন সে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নয়। ডিপ্লোমা কোর্স করে সে এ পেশায় এসেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রোগী দেখার দায়িত্বে রেখেছে বলে সে জানায়।
এদিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে বেশকিছু অসাধু সাংবাদিকদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত ডাক্তারসহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তবে আটককৃতদের বিরুদ্ধে ভূক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করবে না বলে জানিয়েছেন। তাই আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কি কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়নি জানতে চাইলে ওসি জানান এ বিষয়ে আমার জানা নেই। ধারণা করা হচ্ছে দু’পক্ষের মধ্যে কোন মিমাংসা হয়েছে।
এদিকে নিহতের স্বজনরা বিচার চেয়ে প্রথমে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলেও পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে তারা মামলা করতে অনিহা প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ এর আগেও আলিফ জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে রহস্যজনকারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।