নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রদল নেতা হত্যা : রূপগঞ্জে আ’লীগের ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:২২:২৪, ২২ নভেম্বর ২০২২

ছাত্রদল নেতা হত্যা :  রূপগঞ্জে আ’লীগের ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

রূপগঞ্জে ছাত্রদল নেতা অনিক হাসানের (১৮) মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেছেন নিহতের পিতা আমির হোসেন। মামলাটি আমলে নিয়ে থানা পুলিশকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সকালে সাড়ে দশটার দিকে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাওসার আলমের আদালতে মামলার আবেদন করলে আদালত এই নির্দেশনা দেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা-কাঞ্চন হাইওয়ে রোডের মুন্সী পাম্প ও পুনাব প্রাইমারি স্কুলের সামনে থেকে অনিক হাসানকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

এদিকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে রূপগঞ্জ উপজেলার মর্তুজাবাদ এলাকার বাদশা ভূঁইয়ার ছেলে ভুলতা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ভূঁইয়া (৪৩), পঁচাইখা গ্রামের আক্কাস মিয়ার ছেলে ভুলতা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল শিকদার (৪২), একই এলাকার অছু মিয়ার ছেলে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহ্ আলম (৪২), বলাইখাঁ এলাকার আবু সিদ্দিকের ছেলে বাবু ওরফে কালাই বাবু (৩৫), পলখান এলাকার আরমান মিয়ার ছেলে রাসেল (৩০), আমলাব এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে শাহীন মিয়া (৪০), বেলদীর মৃত আনোয়ার মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩০), পঁচাইখাঁ এলাকার আনর আলীর দুই ছেলে মো. ওবায়দুর (৩০), আলাউদ্দিন (৪৫), সিংলাব এলাকার মৃত মোতালেবের ছেলে মিজান (৪৫), টেক বলাইখাঁ এলাকার সিদ্দিকের ছেলে রাজীব (২৬), একই এলাকার জজ মিয়ার ছেলে রানা (২৩), মর্তুজাবাদ এলাকার হারুনের ছেলে রিফাত (২৭), পঁচাইখাঁ এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে ইমরান (৩২)। এছাড়াও অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, দলীয় কর্মসূচি শেষে বাসায় ফেরার পথে তাকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এলোপাথারি কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। অনিক হাসান কাঞ্চন পৌরসভা ছাত্রদলের ৫নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি ছিলো। পাশাপাশি গাউছিয়া এলাকার ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মামলার আইনজীবী এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘গত ৩ নভেম্বর ছাত্রদল নেতা অনিক হাসান মারা যান। নিহতের পরিবার থানায় মামলা করতে চাইলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। বাদীপক্ষ ১৮ দিন পর আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত বিষয়টিকে আমলে নিয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনা ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। থানা পুলিশের রিপোর্ট দাখিলের পর আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন।’

ঘটনার পর পুলিশ দাবি করেছিলো, হত্যা নয়, ট্রাক চাপায় মৃত্যু হয় অনিক হাসানের। তবে মামলার বাদি নিহতের পিতা আমির হোসেনের দাবি, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমার ছেলের খুনের ন্যায্য বিচার চাই। যেন আর কারো সাথে এমনটা না ঘটে। আমার একটামাত্র ছেলে, তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘নিহত অনিক হাসান রূপগঞ্জ উপজেলার গাউছিয়া এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সিকিউরিটি গার্ড ছিল। তিনি কাঞ্চন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি পদে ছিলেন। গত ৩ নভেম্বর ভুলতা ফ্লাইওভার রোডে ছাত্রদলের মশাল মিছিল শেষে অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন।

 

সন্ধ্যা সাতটায় ভুলতা-কাঞ্চন হাইওয়ে রোডের মুন্সি পাম্প ও পুনাব প্রাইমেরি স্কুলের রাস্তার মাঝখানে আসামিরা ধারালো রাম দা, ছেনি, লোহার, রড, হকিস্টিক ও পিস্তলসহ অনিক হাসানের উপর হামলা চালায়। ১ নম্বর আসামির নির্দেশে ২ নম্বর আসামি তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে অনিকের মাথায় কোপ দেয়। ৩ নম্বর আসামি লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে।

 

৪ ও ৫ নম্বর আসামি অনিককে হকিস্টিক দিয়ে পেটায়। এ সময় বাদীর ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ৭ নম্বর আসামি বুকে পাড়া দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে চেপে ধরে। পরে ৮ থেকে ১০ নম্বর আসামি অনিককে টেনে-হিচড়ে চলন্ত ট্রাকের নিচে ফেলে দেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

মামলার আবেদনে অভিযোগ করা হয়- ‘অনিকের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে রূপগঞ্জ থানার ওসি মামলা গ্রহণ করেননি৷ পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সংগ্রহ করে জানা যায়, মাথায় আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে অনিকের। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। থানায় মামলা না নেওয়ায় আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন বাদী।’