নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪

সরেজমিন হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরি ঘাট : ‘ফেরি কি মাগনা পাইছো, ট্রলারে যাও’

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০৩:১৯, ৪ নভেম্বর ২০২২

সরেজমিন হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরি ঘাট : ‘ফেরি কি মাগনা পাইছো, ট্রলারে যাও’

ঘড়ির কাটায় ৮টা বেজে ১৫ মিনিট। নৌকা ঘাটে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। ফেরি নদীর পশ্চিমপাড়ে। ঘাটে পঞ্চাশর্ধ্বো এক নারী ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করছেন। ট্রলার ঘাটে আসতেই চোখের পলকে ৬০-৭০ জন ট্রলারে উঠে পড়েন। যাত্রীদের চাপে ট্রলারে উঠতে না পেরে ঘাটের একজন তরুণ ছেলের কাছে আবেদন করেন, ট্রলারে উঠতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে।

 

ট্রলারে হাজীগঞ্জ ঘাটে এসে পথিমধ্যে কথা হয় সেই নারী হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভীড়ের মধ্যে ট্রলারে উঠতে কষ্ট তো হয়-ই। মাঝে মধ্যে ফেরিতে উঠতে পারলে যাইতে সহজ হয়’। আগে দেরি হইলেও ফেরিতে যাইতাম। এহন ফেরির একটা বেডায়  (লোক) ফেরিতে উঠতে গেলে সবার সাথে চেতাচেতি করে। বাজে কথা শুনার চেয়ে কষ্ট হইলেও ট্রলারে যাওন ভালা। 


 
ভোগান্তির এই দৃশ্যটি হাজীগঞ্জ- নবীগঞ্জ ঘাটের। প্রতিদিন এই ঘাটে নদী পারাপার হন লাখ খানেক যাত্রী। যাত্রীর মাত্রাতিরিক্ত চাপ থাকে সকালে বিকালে। এসময় প্রতিবার ট্রলারে প্রায় শতাধিক যাত্রী যাতায়াত করে। অধিক ভীড়ে ভোগান্তিতে পড়েন নারী, শিশুসহ বৃদ্ধ ব্যক্তিরা। ফেরিতে এসব অসহায় ব্যক্তিদের চলাচল স্বস্থির হলেও ফেরি চলাচলে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে যাত্রীরা। ফেরিতে সাধারন যাত্রীদের চলাচলে বাঁধা দেয়ে ফেরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জনবল। 

 

সরেজমিনে ফেরি ঘাটে দেখা যায়, ঘাটে দুজন স্বামী-স্ত্রী তাদের কোলেও শিশু নিয়ে ফেরিতে উঠতে এগিয়ে যায়। এসময় ফেরির পল্টুনে উঠার পূর্বেই তাদেরকে এক ব্যক্তি অশালীন ভাষায় ফেরিতে উঠতে নিষেধ করে। তিনি ওই দম্পতিকে বলেন, ‘ফেরি কি মাগনা পাইছো নাকি, ট্রলারে যাও মাগনা পার্টি। আবার এমনে চাইয়া আছো আমার দিকে, সাহস কত বড়! ফেরিতে যাওয়া নিষেধ।’


এই দম্পতির সাথে কথোপকথনকারী এই ব্যক্তির নাম সেলিম। তাকে ফেরির কর্তৃপক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফেরির দিকে আগত মানুষকে তাড়িয়ে ট্রলারে যাতায়াত করতে বলেন তিনি। সেলিমের এই ফেরিতে তার দায়িত্ব কি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষ খেদাই (তাড়ানো)।  


 
নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ ফেরি সার্ভিস ভোগান্তির বিষয়ে কদমরসূল কলেজের শিক্ষার্থী মাহাবুবুর রহমান  বলেন, ফেরিতে গাড়ি যায়। যাত্রীদের উঠতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সকালে যাত্রীদের চলাচল বেশি থাকে কিন্তু তখন ফেরি চলে একটা। আধঘন্টা পরপর ফেরি চলে। তখন মানুষ উঠে না , কারণ যাইতে দেরি হয়। কিন্তু দুপুর বেলা গাড়ির অত চাপ থাকে না, তখনো মানুষ ফেরিতে উঠতে গেলে, ফেরির লোকেরা উঠতে না করে।

 

যদি যাত্রীদের উঠতে বাঁধা না দেওয়া হতো, তাহলে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি কমে যেত। কিছুদিন আগেও কয়েকজন নৌকা ডুবিতে মারা গেছে। কিছুদিন পর পরই এখানে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। মাঝেমধ্যে মানুষরে উঠাতে পারে, কখনো পারে না। শিশু, বয়স্কদের অন্তত ফেরিতে উঠতে বাঁধা দেওয়া উচিত না। মানুষ কতটা কষ্ট করে ট্রলারে যাতায়াত করে, সেটা যারা এই রুটে যাতায়াত করে তারা জানে। 


স্থানীয়রা জানান, এই ঘাটের ফেরি ও ট্রলার একই ত্বত্তাবধায়নে চলে। ট্রলারের যাত্রী ফেরিতে যাতায়াত করলে তাদের ট্রলারে লাভ কম হয়। তাই নিজেদের স্বার্থে ফেরিতে যাত্রীদের যাতায়াতে বাঁধা সৃষ্টি করছে ফেরি কর্তৃপক্ষ। 


 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফেরির কর্মচারী বলেন, যদি ট্রলারের এক হাজার যাত্রীও ফেরিতে নদী পার হয়, তাহলে ২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। এ কারণে মানুষ রাখছে ফেরিতে যাত্রী উঠানো বন্ধ করার জন্য। 


 
নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ ফেরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ত্বত্তাবধায়ক সাইফুল হোসেন রিয়েল ভিন্নমত পোষণ করে এ বিষয়ে বলেন, যাত্রীদের যাতায়াতের কারণে গাড়ির চলাচলের সমস্যা হয়, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে আমরা একটা লোক নিয়োগ দিয়েছি, সে যতটা সম্ভব যাত্রীদের নৌকা দিয়ে যাতায়াতের জন্য উৎসাহ দেয়। সকালে যানবাহন কম থাকে, তাই ফেরি একটা চালাই। ফেরি দুটো চালাইতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। 


 
নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ ফেরি ঘাটের ইজারাদার শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সাজনু এ বিষয়ে বলেন, ফেরিতে সাধারন মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ নাহ। যে সময়ে যানবাহন বেশি থাকে তখন যাত্রীরা ফেরিতে আসলে যানবাহন উঠানো যায় না, এ কারণে তখন নিষেধ করা হয়। 

 

এদিকে ফেরিতে যাত্রীদের চলাচল নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ। সড়ক ও জনপদ উপবিভাগী প্রকৌশলী সামিউল কাদের খান এ বিষয়ে বলেন, ফেরিতে সাধারন মানুষ চলাচলে কোন বাঁধা দেওয়ার কথা নাহ। ফেরিতে যাত্রী চলাচলে বাঁধা দেওয়া হয় এই ধরনের অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।