নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪

খুঁড়িয়ে চলছে নারায়ণগঞ্জের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র 

নুসরাত জাহান সুপ্তি

প্রকাশিত:০২:০৪, ১৪ নভেম্বর ২০২২

খুঁড়িয়ে চলছে নারায়ণগঞ্জের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র 

জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নারায়ণগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। এছাড়াও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে রোগীরা পাচ্ছেন না তাদের কাক্সিক্ষত সেবা। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নেই। লোকবল সংকটের কারণে কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সরা চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। কবে পরিপূর্ণ জনবল মিলবে তা-ও সঠিকভাবে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 


 
জানা যায়, হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব ও সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ২০টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকায় চিকিৎসা ও সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ছে। অ্যানেস্থাসিয়া চিকিৎসক, সহকারী নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ শূন্য রয়েছে। অচল হয়ে আছে প্রতিষ্ঠানের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স। শিশুদের চিকিৎসায় ডপলার স্ক্যান জরূরী হলেও জোড়াতালি দিয়েই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। 


মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মাসে কমপক্ষে অর্ধশত সিজার ও নরমাল প্রসব করা হতো। কিন্তু এখন সেটা কমে দাড়িয়েছে অর্ধেকে। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক রোগীকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হতো। কিন্তু জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকার কারণে পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
 
সরেজমিনে হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখা যায়, জরার্জীণ একটি গ্যারেজে অচল হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতাল ভবনের নিচ তলায় রোগী দেখা চললেও ভবনের দোতলার ওয়ার্ডে রোগী নেই। বিশটি শয্যা শূণ্য অবস্থায় পড়ে আছে। তালাবদ্ধ হাসপাতালের অপারেশন কক্ষ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগী দেখা হলেও দুপুরের পর জনশূণ্য হয়ে পড়ে হাসপাতালটি। দুই-একজন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী ছাড়া আর কারো দেখা মিলেনা। 


হাসপাতালে আগত গর্ভবতী নারী খাদিজা। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই হাসপাতালে ফ্রি তে চিকিৎসা দেয়। আমরা গরীবরা এই কারণেই এখানে আসি। কিন্তু কয়েকমাস ধরে সিজার হয়না। সিজার করতে অন্য হাসপাতালে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়। সরকারি হাসপাতালে গেলেও বাড়তি খরচ আছে। সরকারিতে ব্যবস্থা করতে না পাইরা, আমার প্রাইভেটে সিজার হইছে।  কিন্তু এখানে খরচ হয়না বললেই চলে। বিনা পয়সা চিকিৎসা পাইলে আমাগো মতো মানুষের উপকার হয়। 


 
হাসপাতালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, আমাদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারণ বহি.বিভাগের রোগী ছাড়াও গর্ভবতী নারীরা যেকোন সময়ে এখানে সেবা গ্রহণ করতে আসে। যে পরিমাণ রোগী আসে তাদের সেবা দেওয়ার জন্য যে সংখ্যক কর্মচারী প্রয়োজন, সেটা এখানে নেই। সন্তান প্রসব করা হয়, এমন একটা হাসপাতালে পরিচ্ছন্নকর্মী আর আয়া ছাড়া কাজ করা টা সহজ নাহ। এছাড়া হাসপাতালে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকের সংখ্যা আরো বাড়ানো দরকার। জরুরী অবস্থায় এইখানের রোগীর অ্যাম্বুলেন্স সেবার প্রয়োজন হলে, প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় থাকতে হয়।    


 
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফাতেমা শিরিন এ বিষয়ে বলেন, আমাদের রোগী দেখা সহ অন্যান্য কার্যক্রম চলছে কিন্তু অ্যানেস্থাসিয়া চিকিৎসক না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। আমাদের অ্যাম্বুলেন্স অনেক বছর হলো অচল হয়ে পড়েছে। নষ্ট অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের গ্যারেজে বন্ধ আছে। 


জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার শর্মা এ বিষয়ে বলেন, আমি এখানে নতুন দায়িত্ব পেয়ে এসেছি। সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রয়োজনীয় জনবলের চাহিদা দেয়া আছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, হয়তো শীঘ্রই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সমস্যা গুলো সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। 

সম্পর্কিত বিষয়: