
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। নানান কারণে রানি আলোচনায় থাকেন। কেননা ব্রিটেনের রাজা-রানিরা শুধু ইংল্যান্ডের কাছে নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় উপমহাদেশ এক সময় অন্য আরও অনেক দেশের মতোই ইংল্যান্ডের উপনিবেশ ছিল। তখন বৃটেনের রানি ছিলেন ভিক্টোরিয়া।
ব্রিটেনের সিংহাসনে অনেক রানি এসেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সিংহাসনের অধিকার পাওয়ার পর ৭০ বছর পার করতে চলেছেন তিনি। আগামী রবিবারই এই অনন্য নজির গড়বেন তিনি।
তার আগে কোনো ব্রিটিশ শাসকেরই টানা সাত দশক সিংহাসনে আসীন থাকার ইতিহাস নেই। রানির পর সিংহাসনের দাবিদারদের মধ্যে রয়েছেন তার ছেলে যুবরাজ চার্লস, নাতি যুবরাজ উইলিয়াম সহ আরও অনেকে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬ সালে। ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের সিংহাসন লাভ করেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৩৭ সালে ব্রিটেনের রাজা হন। এলিজাবেথ ছিলেন তখন ব্রিটিশ সিংহাসনের একমাত্র উত্তরাধিকারী। ষোল বছর বয়সে তিনি প্রথম জনসম্মুখে আসেন। আঠার বছর বয়সে সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ জর্জ মৃত্যুর পর এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন।
জানেন কি? ব্রিটেনের শাসক কিন্তু দ্বিতীয় এলিজাবেথের হওয়ার কথা ছিল না। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তার অবস্থান ছিল চাচা অষ্টম এডওয়ার্ড এবং পিতা ষষ্ঠ জর্জের পরে। তবে বিপত্নীক নারী ওয়েলিস সিম্পসনকে বিয়ে করার কারণে ১৯৩৬ সালে সিংহাসন ত্যাগ করেন অষ্টম এডওয়ার্ড। অতঃপর তার স্থলাভিষিক্ত হন এলিজাবেথের পিতা ষষ্ঠ জর্জ। সে হিসেবে বলা যায়, ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের শেষ পুরুষ শাসক।
এরপর ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর যুবরাজ ফিলিপের সঙ্গে বিয়ে হয়। তবে দ্য টেলিগ্রাফের মতে, ফিলিপের সঙ্গে এলিজাবেথের প্রথম বাগদান সম্পন্ন হয় ১৯৪৬ সালে। যদিও ১৯৪৭ সালের পহেলা এপ্রিল এলিজাবেথ ২১ বছরে পদার্পণের পর সেটি স্বীকৃতি পায়।
এরপর একইসঙ্গে সংসার আর রাজ্যপাট চালাচ্ছেন তিনি। খাতা কলমে রাজ্যপাট থাকলেও ব্রিটেনের প্রশাসন পরিচালনা করে সে দেশের সরকার। আমজনতার ভোটের মাধ্যমে সেই সরকার বেছে নেয়।
তবে এই নিয়ম বদলে রাজ পরিবারের ঠাটবাট এতটুকুও কমেনি। বরং আজও এই পরিবারের প্রতিটি সদস্য এক-একজন আন্তর্জাতিক সেলেব্রিটি। রানি হিসাবে সম্মান কমেনি দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও। সম্প্রতি জীবনসঙ্গীকে হারান তিনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যুবরাজ ফিলিপ। বার্ধক্যজনিত অসুখের কারণেই পরবর্তীতে মৃত্যু হয় তার।
বর্তমানে রানির বয়স ৯৫ বছর। সিংহাসনে বসার পর থেকে বহু পরিবর্তন ও বহু ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছেন তিনি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে আধুনিকায়নের পাশাপাশি দ্রুতগামী পৃথিবীর সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
সিংহাসনে ৭০ বছর কেটে গেছে তার এখনো জনপ্রিয়তা এবং মানুষের কৌতূহলের বাইরে নন তিনি। প্রতিদিনই লাখ লাখ মানুষ তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ইন্টারনেট ঘাঁটেন। ২০১২ সালে রানি এলিজাবেথ হীরক জয়ন্তী উদযাপন করেন।
ব্রিটিশ রাজ পরিবারের মধ্যে তিনিই সবথেকে জনপ্রিয়। গত ২৩ জানুয়ারি হেলিকপ্টারে পূর্ব ইংল্যান্ডের স্যানড্রিনগাম এস্টেটে পৌঁছে যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। প্রতি বছরই স্যানড্রিনগামে পরিবারের প্রিয় সদস্যদের সঙ্গে ক্রিস্টমাস ও ইংরেজি নববর্ষের উৎসবে সামিল হন রানি। তবে করোনা পরিস্থিতি বাঁধ সাধে সেখানে। তবে বছর শুরুতেই পছন্দের জায়গায় গিয়েছিলেন রানি।
রানির এই নতুন রেকর্ড উপলক্ষে সাজ সাজ রব চলছে পুরো ব্রিটেনজুড়ে। তবে মহামারির কারণে সেই অনুষ্ঠান হবে আগামী জুন। চারদিন ব্যাপী হবে সেই অনুষ্ঠান। প্রথা মাফিক ব্রিটিশ সেনাবাহিনীও তাতে অংশগ্রহণ করবে। রাস্তাতেই চলবে আনন্দ, উৎসব। পিকনিকে অংশ নেবেন ব্রিটিশ নাগরিকরা। ৬ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ রবিবার মহামারির কারণেই জনসম্মুখে আসবেন না রানি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া