নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

০৪ মে ২০২৪

ফতুল্লায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২, আহত ১৫

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:৩১, ২১ এপ্রিল ২০২৪

ফতুল্লায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২, আহত ১৫

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্পাঞ্চলে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে লাঠিচার্জ করলে পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।  

এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা পুলিশের জলকামান ভাঙচুরসহ একটি ট্রাক, একটি প্রাইভেট কারসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে।

এ সময় আব্দুর রাজ্জাক (৩৩) ও মোছা. চাঁদনী খাতুন (২৪) নামে দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে সড়কে বৈদ্যুতিক খুটি, বাঁশ ও কাঠ ফেলে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ক্রোনী গ্রুপের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের কয়েকশ' শ্রমিক।

গুলিবিদ্ধ রাজ্জাক গাইবান্ধার সদর উপজেলার চকবহনপুর গ্রামের মোহাম্মদ আফসার সরকারের সন্তান। চাঁদনী সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার পারখোলা গ্রামের মো. শাকিলের স্ত্রী। তারা দুই জনই নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা এলাকায় থাকতেন। 

দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া ।

কারখানার শ্রমিকরা জানান, গত ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজ করার পর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঈদের আগে বোনাস পেলেও মার্চ মাসের বেতনটি তাদের বকেয়া ছিল। কারখানার মালিক ঈদের আগেই মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও তা পাননি শ্রমিকরা। এতে ঈদের মধ্যে অর্থ সংকটে দিন কাটিয়েছেন বলে জানান শ্রমিকরা।

ক্রোনী গ্রুপের রপ্তানিমুখী এ পোশাক কারখানাটিতে অন্তত ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।

কারখানাটির সুইং অপারেটর মো. মাসুদ  বলেন, এপ্রিলের ৮ তারিখ কারখানা বন্ধের সময় মোবাইলে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেননি মালিকপক্ষ। গত ৮ মাস যাবৎ বেতন নিয়ে এভাবে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ। বেতনের দাবিতে রাস্তায় না নামলে বেতন পাচ্ছেন না শ্রমিকরা।

ঈদের দিনও বারবার মোবাইল চেক করছি। এই মনে হয় বেতন ঢুকলো এই আশায়। কিন্তু কোনো বেতন আসেনি। আপনারা ভাবতেও পারবেন না ঈদের সময় বেতন না পেলে কীভাবে শ্রমিকরা দিন কাটায়। আমাদের এবার ঈদে কোনো আনন্দ ছিল না। অন্তত অর্ধেক বেতন দিলেও হতো।

ঈদের আগে বেতন না পাওয়াতে গ্রামে যেতে পারেননি বলে জানান সুমাইয়া নামে আরেক শ্রমিক। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। বাসের টিকেট কেটেও গ্রামে যেতে পারেননি বলে দাবি তার।

আমরা যারা ক্রোনীর শ্রমিক তাদের কোনো ঈদ বা উৎসব নাই। প্রতি মাসে বেতনের লাইগা রাস্তায় নামতে হয়। বাসের টিকেট কাইটাও বাড়ি (গ্রামে) যাইতে পারি নাই। টাকা নাই, বাড়ি গিয়া কী করমু? আমাগো ঈদের আনন্দটাও শেষ কইরা দিছে ক্রোনীর মালিক। আমরা কী মানুষ না অন্য কিছু?, বলেন এই নারী শ্রমিক।

এদিকে ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঈদের আগে সব শ্রমিককে বোনাস দিয়েছি কিন্তু শিপমেন্ট ঠিকমতো না হওয়ায় মার্চের বেতনটা দিতে পারিনি। আমরা আগামী বুধবারের মধ্যে সকলের বেতন পরিশোধ করে দিবো।

ঘটনাস্থলে থাকা নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ এর ফতুল্লা ক্যাম্প ইনস্পেক্টর বলেন, শ্রমিকরা যানবাহন ভাঙচুর করছিলো। তাদেরকে নিবৃত্ত করতে আমরা রাবার বুলেট ছুড়েছি। তবে কত রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে তা এখন বলা সম্ভব নয়।

নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা জানান, সড়ক অবরোধ করা শ্রমিকদের সরে যেতে বললে তারা পুলিশের ওপর ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ উপায়ন্তর না পেয়ে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক বলেন, ফতুল্লায় শ্রমিকদের সাথে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় কতজন শ্রমিক আহত হয়েছেন এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।