নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪

চলছে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা

সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে বিদ্রোহী ও পদত্যাগীদের মূল্যায়ন!

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:৪৬, ২৫ মে ২০২৩

সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে বিদ্রোহী ও পদত্যাগীদের মূল্যায়ন!

দীর্ঘ ২৫ বছর পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে। ৭১ সদস্যের প্রস্তাবিত এই কমিটিতে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতাকারী প্রার্থীদের মূল্যায়নের অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে চলছে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা। 

 

এছাড়া প্রস্তাবিত কমিটিতে ২২ জন একেবারেই নতুন মুখ। যাদের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কোনো পদে দায়িত্ব পালনের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রবীণ নেতারা। 

 

সূত্রমতে, গত ৫ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের যৌথ স্বাক্ষরিত প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলের হাতে পৌঁছে।

 

কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নৌকা প্রতীক না পেয়ে দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা আরিফ মাসুদ বাবু কে।

 

এছাড়া সদস্য পদে রাখা হয়েছে বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে আনারস মার্কা নিয়ে বিদ্রোহ প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করা মাহবুব সরকারের নাম। তিনি ২০১৬ ও ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত দু’টি নির্বাচনে সরাসরি নৌকার বিরোধীতা করেছিলেন। 

 

এ ছাড়া ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউসুফ দেওয়ানকে। নোয়াগাঁও ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করা সামসুল আলমকেও সদস্য করা হয়েছে। 

 

এছাড়া প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধীতাকারী, সম্মেলনে নেতাকর্মীদের উপর হামলাকারী ও দল থেকে বহি:স্কৃত মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে।

 

আ’লীগ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা আরিফ মাসুদ বাবু, নৌকার বিরোধীতাকারী মাহবুব সরকার, শামসুল আলম শামসু, ইউসুফ দেওয়ানের নাম কমিটিতে দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন উপজেলা আ’লীগের একাধিক প্রবীন নেতা। 

তাদের অভিযোগ, এই কমিটিতে বিদ্রোহী ও পদত্যাগকারী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। যারা দলের নিবেদিত প্রাণ সেসব নেতাদের রাখা হয়নি। স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে কমিটিতে অনেকের নাম দেয়া হয়েছে। 

 

এছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাউকে রাখা হয়নি প্রস্তাবিত কমিটিতে। শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ত্যাগী ও প্রবীণ কোনো নেতাকে রাখা হয়নি। যাদের নাম আছে তারা আগে দলীয় কোন পদে ছিলেন না। 

 

তাছাড়া কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করলেও সভাপতি শামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার ছেলে ব্যবসায়ী মারুফ ইসলাম ঝলক এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী সানজিত হাসনাতকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

 

শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রস্তাবিত এই কমিটিতে স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বাণিজ্য হয়েছে। জীবনে কোনো দিন দল না করে, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে শুধু অর্থের বিনিময়ে শিল্পপতি ফারুক হোসেন ভুইয়া কোষাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। 

 

খুনের মামলার আসামি, মাদকের সঙ্গে জড়িত ও বিএনপি ঘরানার ব্যক্তিদেরও স্থান দেওয়া হয়েছে। আমরা দলের হাইকমান্ডকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাব।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম ভুইয়া অর্থের বিনিময়ে কাউকে কমিটিতে রাখার অভিযোগ নাকচ করে বলেন, নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে জমা দেওয়া হয়েছে।  

 

৭১ সদস্যের প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। তিনি বলেন, চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে অবশ্যই কমিটির সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। বিতর্কিত কেউ কমিটিতে থাকতে পারবে না।

 

উল্লেখ্য, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছিল। তারপর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সম্মেলনে শুধু সভাপতি, সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।