নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

০২ মে ২০২৪

মাদক বিক্রি না করায় মিশুক চালককে মারধর

ফতুল্লায় সাংবাদিক পরিচয়ে মাদক কারবারি সুমন ফের বেপরোয়া

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:৫৪, ১৭ মার্চ ২০২৪

ফতুল্লায় সাংবাদিক পরিচয়ে মাদক কারবারি সুমন ফের বেপরোয়া

আবারও ভয়ংকর রূপে ফিরেছে সাংবাদিক পরিচয়ে মাদক কারবারি সুমন। সর্বশেষ একাধিক বাড়িতে সাংবাদিক পরিচয়ে করা ডাকাতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে কিছুদিন শান্ত থাকার পর ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সে।

এবার এক মিশুক চালককে জোরপূর্বক মাদক বিক্রির জন্য চাপ প্রয়োগ এবং তাকে মারধরের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় সুমনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী মিশুক চালক মন্টু মিয়া।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফতুল্লার পশ্চিম মাসদাইরস্থ মুসা মিয়ার পুত্র বিবাদী সুমন কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে গত দুই মাস পূর্বে অভিযোগের বাদি মন্টু মিয়ার সাথে পরিচয় হয়। বাদি মন্টু মিয়া পেশায় একজন মিশুক চালক। পরিচয়ের একপর্যায়ে বাদি মন্টুকে মাদক বিক্রির জন্য ধারাবাহিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে মাদক কারবারি সুমন। 

পরবর্তীতে বিবাদী সুমনের এসকল প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় বাদি মন্টু উপর বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ এবং তাকে মিথ্যা মামলায় হয়রানির হুমকি প্রদান করা হয়। এমতাবস্থায় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে বিবাদী সুমনসহ আরও একজন পশ্চিম মাসদাইর এলাকায় মন্টুর চালিত অটোরিক্সার গতিরোধ করে এবং তাকে জোরপূর্বক মাদক বিক্রয়ের প্রস্তাব দেয়। 

পুনরায় তাদেও প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে তারা দু’জন মিলে মন্টুকে এলোপাথাড়ী মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে মন্টুর স্ত্রী সাথী আক্তার (২২) ঘটনাস্থলে এসে বাধা দিলে তাকেও সুমন শ্লীলতাহানি করে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মন্টু মিয়া জানান, আমার পূর্বের জীবন আর এখনকার জীবন এক নয়। আমি বিগতসময়ে মাদক সেবন এবং বেচাবিক্রির সাথে জড়িত ছিলাম, এটা সত্য। তবে, আমার মেয়েটা হওয়ার পর থেকে আমি ভালো হওয়ার চেষ্টায় আছি। 

আমি এখন মাদক বেচাবিক্রি তো দূরের কথা মাদক সেবনও করি না। আমার আয় রোজগারের একমাত্র পন্থা তিন চাকার ব্যাটারি চালিত অটোগাড়ি। কিন্তু সুমন ও তার চক্রের সদস্যদের জন্য আমি ভালো হতে পারছি না।

অভিযোগের বাদি মন্টু মিয়া আরও বলেন, সুমন নিজেই একজন মাদক ব্যবাসায়ী। অথচ, সবজায়গায় সে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। গলায় বা কোমড়ে তার সবসময় একটা কার্ড ঝুলানো থাকে। সেই ক্ষমতা দেখিয়ে তার মাদক সে আমাকে বিক্রি করতে বলে। 

একজন মাদক ব্যবসায়ী কিভাবে সাংবাদিক হয়? প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছে আমি জানতে চাই, আমি আগে খারাপ ছিলাম বলে কি আর কখনো ভালো হতে পারবো না? নাকি আমার ভালো হওয়ার অধিকার নেই। 

এই সুমন মাদক কারবারি হওয়া সত্বেও তার সাথে সবচেয়ে বেশি পুলিশের সখ্যতা! কিন্তু কেনো? আমি মাননীয় পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, আমাকে এই সমস্যা থেকে সমাধানের পথ বের করে দেন।

এ বিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) বাবুল মিয়া বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মাদক কারবারি সুমনের নামে ফতুল্লা মডেল থানায় রয়েছে বেশ ক’টি মামলা। যার মধ্যে ২০১৩ সালে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় চাঞ্চল্যকর ফুটবলার রাসেল হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছিল সুমন। এ মামলায় সেসময় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয় সে।

দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মামলার বাদির সাথে আপোষ হলে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে স্ত্রীর দায়েরকৃত নারী নির্যাতন মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করে সুমন। এরপর ২০২১ সালের ১২ মে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকা থেকে ১২০০ পিস ইয়াবাসহ সুমনকে গ্রেপ্তার করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। 

প্রায় ৬ মাস কারাভোগের পর জামিনে এসে পরেরবছর ১২ মে ফতুল্লার ইসদাইরে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে দুই নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর ও রক্তাক্ত জখমের ঘটনায় আবারও পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয় সুমন। 

উল্লেখ্য, শীতলক্ষ্যা নামক এক অনুমোদনহীন নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টাল খুলে নিজেরাই নিজেদেও প্রেস কার্ড বানিয়ে শহরময় দাবড়ে বেড়াচ্ছে সুমনসহ সংঘবদ্ধ একটি চক্র। 

সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবজি, ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলিং এমনকি ডাকাতির ঘটনা ঘটাতেও দু’বার চিন্তা করে না মাদক কারবারি সুমন।