![সোনারগাঁও আওয়ামীলীগে পাল্টা পাল্টি সোনারগাঁও আওয়ামীলীগে পাল্টা পাল্টি](https://www.narayanganjtimes.com/media/imgAll/2021May/Screenshot_12-2106061013.jpg)
সাত খুন মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের গোপন যোগসূত্রের গোমর ফাঁস করলেন খোদ সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি।
গত ১৫ জুলাই সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি লাইভ প্রগ্রোমে মাহফুজুর রহমান কালামের বক্তব্যের (স্ট্যাটাস) প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। জানা যায়, গত ১৫ জুলাই মাহফুজুর রহমান কালাম তার ফেসবুকে লিখেন, সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারা, কিভাবে ষড়যন্ত্র করছে সে বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।
এসময় তিনি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত পর পর দুইদিনের দু’টি সংবাদ দেখিয়ে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের স্বর্ণযুগ। আওয়ামীলীগ বর্তমানে টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে দেশে অনেক উন্নয়ন করেছে। দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে নেতাকর্মীরাও ব্যবসা বাণিজ্য করে নিজেদের উন্নয়ন সাধন করছে। সে সময় কোথাকার কোন এক লোক নিজেকে আওয়ামীলীগ পরিচয় দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে দলের বদনাম করেছে। আর যে লোক যোগদান দিয়েছেন তিনি নেতা তো দুরের কথা তার ৫ টাকার সদস্য পদও নাই। সে লোক কিভাবে নেতা হয়। সে জাতীয় পার্টির এমপি’র হাতে ফুল দিয়ে যোগদান করেছে। আবার সেটা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়েছে। আমি এটা মনে করি যে, সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ তথা সারা বাংলাদেশের আওয়ামীলীগের বদনাম করার জন্য ষড়যন্ত্র করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। একজন আওয়ামীলীগ নেতা কখনো জাতীয় পার্টিতে যেতে পারে না বরং জাতীয় পার্টির নেতারা সুসময়ের জন্য সারাদেশে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছে।
এসময় তিনি উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির মাস্ক গ্রহণ নিয়েও সমালোচনা করেন। তিনি আহ্বায়ক কমিটিকে তথাকথিত কমিটি ঘোষনা দিয়ে এদের কাছ থেকে সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে তাদের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করতে ও রুখে দাঁড়াতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। মাহফুজুর রহমান কালামের এই বক্তব্যের পর গত ২১ জুলাই প্রতিবাদ জানান সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি। গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তারা বলেন-১৫ জুলাই সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম তার বক্তব্যে আওয়ামীলীগকে হেয়প্রতিপন্ন ও তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য রাখেন যা দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবাদলিপিতে তারা বলেন- কালামের কাছ থেকে এ ধরণের দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্য নেতাকর্মীরা আশা করেন নাই। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এ বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের মানুষ যখন দিশেহারা তখন দলীয় নেতাকর্মীরা আপনাকে খুঁজে পায় নাই, কোথায় ছিলেন? মানুষের পাশে দাঁড়াননি। রাজনীতি কি শুধু নিজের ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়া বা নিজের আখের গুছিয়ে অট্টালিকা তৈরি করা? আপনার বক্তব্যর জবাব দিতে আমাদের রুচিতে বাধে তবুও নেতাকর্মীদের চাপে কিছু বক্তব্য দিতে হয়েছে। কালামকে ইঙ্গিত করে আরও বলা হয়-আপনি দীর্ঘদিন এমপির চাটুকারিতা করেছেন নিজের স্বার্থে। ২০১৮ এর ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপির সঙ্গে বিভিন্ন সভা সমাবেশে “লাঙ্গলই নৌকা” বলে বক্তব্য রেখেছেন। ২০১৯ এ উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে বর্তমান সংসদের সমর্থনে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মত পরাজিত হয়েছেন। তখন আপনি আওয়ামীলীগকে জাতীয়পার্টির কোন টিমে পরিনত করেছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কারনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
যার প্রেক্ষিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে আপনাকে উপজেলা আওয়মীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। আর এজন্য দলের পদ হারিয়ে আপনার গাঁয়ে এত জ্বালা। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভায় সোনারগাঁ উপজেলাধীন জেলা কমিটিতে থাকা সকল সদস্যের দাবীর প্রেক্ষিতে জেলা কমিটির অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মানিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে বিধি মোতাবেক সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। যাহা কেন্দ্র দ্বারা স্বীকৃত। ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে বাংলাদেশে আলোচিত সেভেন মার্ডারের কারিগর বর্তমানে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নুর হোসেনকে সোনারগাঁ এনে ৩০টি গাড়ীর বহর নিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত করে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও দলীয় নেতাকর্মীদের থ্রেড করা, মারধর করা ও অনেককে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। সেদিনের বিভিষিকা আজ ও সোনারগাঁয়ের দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের মনে হলে শিউরে উঠেন। সেদিন আপনার এই সন্ত্রাসের কারনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হয়, বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী। প্রকৃত পক্ষে মাননীয় সাংসদের দেয়া মাস্ক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে কয়েদীদের তৈরি মাস্ক সোনারগাঁও উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি প্রতিটি ১৫ টাকা করে কিনে এক সঙ্গে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর আওয়ামীলীগের নিকট বিতরণ করা হয়।
আওয়ামীলীগের এই আহ্বায়ক কমিটি আরও জানান-জাতীয়পার্টিতে যোগদানকারী আওয়ামীলীগের কেউ নয়। সোনারগাঁও উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত কোনও আওয়ামী নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন নাই এবং ভবিষ্যতেও অন্য কোনো দলে যোগদান করার প্রশ্নই উঠে না। উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ব্যাখ্যা দেওয়ার কোন সুযোগ নাই।‘আমরা উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটির পক্ষ থেকে মাহফুজুর রহমান কালামের ফেসবুক লাইভে দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ ধরণের অসৌজন্যমূলক ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য এবং আওয়ামীলীগকে জনসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে বিরত থাকবেন বলে আশা করি।’