
চা পান করে না, এমন মানুষ কমই আছে। ক্লান্তি দূর করতে এক কাপ চায়ের তুলনা হয় না। আর চায়ের আছে এক অভাবনীয় আকর্ষণ। চায়ের গুণ সম্পর্কে আমাদের অনেকেই খুব বেশি জানি না।
চা পানের যত গুনাগুন
আগে জেনে নিই চায়ের প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ ও সেগুলোর কাজ-
১) ক্যাফেইন (Caffeine):
– মনোযোগ, সতর্কতা ও উদ্যম বাড়ায়।
– অতিরিক্ত হলে অনিদ্রা বা নার্ভাসনেস হতে পারে।
২) ট্যানিন (Tannins):
– অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
– খাবারের পর শরীরে আয়রন শোষণ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে।
৩) পলিফেনল (Polyphenols):
– শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট; কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
৪) থিয়ানিন (Theanine):
– মানসিক প্রশান্তি দেয় ও মানসিক চাপ কমায়।
৫) ফ্ল্যাভোনয়েড (Flavonoids):
– হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৬) ভিটামিন ও খনিজ (Vitamins & Minerals):
– ভিটামিন C, B2, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি স্বল্প পরিমাণে থাকে।
৭) এসেনশিয়াল অয়েল (Essential Oils):
– চায়ের সুবাস ও স্বাদ তৈরি করে।
• চা পানের উপকারিতা:
– শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
– হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
– মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
– পরিপাকক্রিয়া উন্নত করে এবং হজমে সহায়তা করে।
– ওজন কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে গ্রিন টি।
– মন ভালো রাখে ও ক্লান্তি দূর করে।
• চা পানের অপকারিতা:
–অতিরিক্ত চা পান করলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যাফেইন জমে অনিদ্রা, উদ্বেগ ও হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় বা দিতে পারে।
–খালি পেটে চা খেলে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি হতে পারে।
–খাবারের সঙ্গে সঙ্গে চা খেলে আয়রন শোষণ কমে যায়।
–অতিরিক্ত চা দাঁতের দাগ ও মুখের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।
•চা খাওয়ার সঠিক সময়:
সকালে নাশতার ৩০–৪৫ মিনিট পর।
বিকেলে হালকা নাশতার সঙ্গে এক কাপ চা।
• যা এড়ানো উচিত: খালি পেটে, খাবারের সঙ্গে সঙ্গে, বা ঘুমানোর আগে চা খাওয়া উচিৎ নয়। রাতে যাদের ঘুমের সমস্যা হয়, বিশেষ করে তাদের সন্ধ্যার পরে চা পান করা উচিৎ নয়। যাদের আয়রন স্বল্পতা আছে, তাদের বিশেষ করে খাওয়ার পরপরই কোনক্রমেই চা পান করা উচিৎ নয়। যেহেতু আমরা জানি যে, খাবারের পরপর চা পান করলে শরীরে আয়রন শোষণ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে।
• দৈনিক কি পরিমান চা খাওয়া ভালো:
প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ চা পরিমিতভাবে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
এর বেশি খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যাফেইনের প্রভাব পড়তে পারে।
• কোন চা খাওয়া ভালো:
গ্রিন টি (Green Tea): অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, ওজন কমাতে সহায়ক।
ব্ল্যাক টি (Black Tea): শক্তি ও মনোযোগ বাড়ায়।
হারবাল টি (Herbal Tea): যেমন তুলসী, আদা, লেমনগ্রাস বা পুদিনা চা — গলা ব্যথা, ঠান্ডা ও হজমে ভালো।
হোয়াইট টি (White Tea): সবচেয়ে হালকা ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী।
• সংক্ষেপে:
চা একটি প্রাকৃতিক, উপকারী ও সজীবতা দানকারী পানীয়। তবে পরিমিত মাত্রায় এবং সঠিক সময়ে চা পান করলেই তা শরীর ও মনে এনে দেয় প্রশান্তি ও সজীবতা।
----------------------------------
ডা. গাজী খায়রুজ্জামান
(হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট)
0174 38 34 816