নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

০৭ মে ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের শেল্টারে বেপরোয়া দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সজু

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:৫২, ১১ এপ্রিল ২০২৩

সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের শেল্টারে বেপরোয়া দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সজু

সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী দক্ষিনপাড়া এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও হাফডজনেরও বেশী মামলার আসামী সজু বাহিনীর কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই বাহিনী এলাকায় চুরি, ছিনতাই, জমি দখল, ইভটিজিং, অস্ত্রের মহড়া, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা করে না। 


স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় এই বাহিনীর প্রধান সজুকে নিয়ে অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সজু বাহিনীর তৎপরতা বন্ধ হয় না। বরং দিন দিন আরোও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই বাহিনী। কারণ নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে তাকে সহায়তা করা হয়। যার কারণে ভুক্তভোগীরা সজু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশে মূখ খুলতে সাহস করে না। 

আহত মিলন
স্থানীয়দের অভিযোগ, যেখানে পুলিশের সাথে সজুর দহরম মহরম সম্পর্ক সেখানে সাধারণ মানুষ কি করবে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা যদি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তাহলে কি আর বলার আছে আমাদের। 


এরআগে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হাফিজুর রহমান নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে সন্ত্রাসী সজুকে শেল্টার দিয়ে গেছে। তিনি বদলী হওয়ার পর বর্তমানে ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেল শেল্টার দিচ্ছে। আর পরোক্ষভাবে সমর্থন যোগাচ্ছেন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা।


এলাকাবাসীর অভিযোগ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোজাম্মেল থানায় যোগদান করার র্অপদিনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে তোলে সন্ত্রাসী সজুর সাথে। যদিও সজুর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বিভিন্ন অপরাধে হাফডজনেরও বেশী মামলা রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেলের শেল্টারের কারণে সজু বাহিনীর হামলার শিকার মিলন নামে এক যুবক রক্তাক্ত জখম হয়। 


তার পরিবার মামলা করতে গেলে পুলিশ বলে আহতকে থানায় নিয়ে আসার জন্য। পরে মিলনের বাবা তার ছেলেকে নিয়ে থানায় আসলে পুলিশ সজু বাহিনীর পক্ষে মামলা নিয়ে ওই মামলায় উল্টো মিলনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।

 

অথচ মিলনের বাবা সন্ত্রাসী সজুকে প্রধান আসামী করে লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা হিসেবে তা রজু করছে না। বরং নানাভাবে পুলিশ হয়রানী করছে সন্ত্রাসী সজু বাহিনীর পক্ষ নিয়ে। এদিকে ইন্সপেক্টর মোজাম্মেলের শেল্টারে সন্ত্রাসী সজু বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়।


আহত মিলনের বাবা ইসমাইল মিয়ার লিখিত অভিযোগের তথ্যমতে, মরহুম হুমায়ুনের বখে যাওয়া ছেলে সন্ত্রাসী তানজিম কবির সজু (৩৫), গ্যাস লাইন এলাকার ফেন্সি শরিফ (৩০), মিজমিজি পগলা বাড়ি এলাকর ইয়াবা লিমন (৩০), কদমতলী গ্যাস লাইন এলাকার সজিব (৩২), মিজমিজি মুজিববাগের কাউসার (৩০), গ্যাস লাইন এলাকার হযরত আলী (২০), আল-আমিন (৩২), পিনিক রনি (৪৫), জুবায়েরসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২জন  আমিনুল হক টুটুল নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন বসতবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করে আসছে। 


বসত বাড়ির কেয়ারটেকার মিলন বাধা দিলে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মিলন ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া উঠাতে গেলে বিবাদীদের সাথে বিরোধ তৈরী হয়। এর সূত্রধরে ৭ এপ্রিল  রাত ৮টার দিকে সন্ত্রাসী সজু ও তার বাহিনী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মিলনতে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়।  মিলনকে এলোপাথারী কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। 


এসময় মিলনের পকেটে থাকা বাড়ি ভাড়ার ২ লাখ টাকা জোরপুর্বক ছিনিয়ে নেয়। এবং ভাংচুর করে বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে । সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় বাড়িতে থাকা ১০টি সিসি ক্যামেরা ও ডি.বি.আর খুলে নিয়ে যায়। এছাড়াও অফিসের কম্পিউটার, মনিটর, প্রিন্টার নিয়ে যায়। আহত মিলনকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় নিয়ে আসা হয়। তার মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়।


এদিকে আহত মিলনকে পুলিশ থানায় ডেকে নেয় ঘটনা জানার জন্য। আহত অবস্থায় মিলন থানায় যাওয়ার পর কৌশলে সজু বাহিনীকে দিয়ে উল্টো মামলা করায় ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল। কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই মামলা নেয় ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল। এবং ওই মামলায় মিলনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। 


মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল। এমন অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। অথচ মিলন হামলার শিকার হয়ে আহত হওয়ার ঘটনায় তার বাবা ইসমাইল মিয়া বাদী হয়ে সজুকে প্রধান আসামী করে লিখিত অভিযোগ দিলেও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোজাম্মেল তদন্তের অজুহাত দিয়ে মামলা নিচ্ছে না। 


গত ৩দিন ধরে নানাভাবে ঘুরাচ্ছে ইসমাইল মিয়াকে। সবশেষ মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে দীর্ঘ সময় থানা বসিয়ে রেখে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল।


এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ইসমাইল মিয়া নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী সজুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এলাকায় একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে তার পরিচিতি। 


অথচ আমার ছেলেকে আহত করেও সে প্রকাশে ঘুরে বেড়াছে। আর পুলিশ মিথ্যা মামলায় আমার ছেলেকে বাসা থেকে ডেকে এনে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। আমার মামলা পুলিশ নিচ্ছে। তিন ঘুরানোর পর বলে আদালতে মামলা করতে।


বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোজাম্মেল জানান, একটিপক্ষ হামলা করে চলে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হয়েছে। অপর পক্ষের অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পাইনি। কেউ কোনো স্বাক্ষী প্রমানও দিচ্ছেনা। 


এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কে দেয়া হয়েছে।