নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

জনবান্ধব কাউন্সিলর চায় ১৮নং ওয়ার্ডবাসী

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০১:৫৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

জনবান্ধব কাউন্সিলর চায় ১৮নং ওয়ার্ডবাসী

আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ঘিরে ভোটের হাওয়া বইছে ২৭টি ওয়ার্ডে। চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনা সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ছুটে যাচ্ছেন তাদের কাছে। দিচ্ছেন সালাম-আদাপ। তবে কারা হচ্ছেন এবারের নির্বাচনের প্রার্থী। কেমন প্রার্থী চাই, কে এলাকার উন্নয়নে নিজেকে শতভাগ বিলিয়ে দিবেন। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভোটারদের মাঝে। আবার কেউ খুঁজছেন সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত ও শিক্ষিত সমাজগঠনের এক অতন্দ্রপ্রহরী।

ভোটের হাওয়ায় সরগরম সিটি কর্পোরেশনের  ১৮ নাম্বার ওয়ার্ড। বি কে রোড, জমিদারী কাচারী গল্লি, নলুয়া রোড, তোলারাম সড়ক, সুলতান গিয়াস উদ্দিন রোড (তামাক পট্টি ও কদমতলী), শহীদনগর ডিয়ারা, আল আমিন নগর নিয়ে ওয়ার্ডটি গঠিত।

 

এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসাইন। তিনি বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কামরুল হাসান মুন্নাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেছেন। যদিও মুন্না ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর ছিলেন। ওই নির্বোচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ফয়েজ উদ্দিন আহম্মেদ লাভলু। এদিকে ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলোচনায় এসেছিলেন আলহাজ্ব মকসুদুর রহমান জাবেদ।  

 

এদিকে আবার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলর কবির ও মুন্নার বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। 

 

এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য তিন প্রার্থীর নাম মাঠে ময়দানে আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন-বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না ও আলহাজ্ব মকসুদুর রহমান জাবেদ। তবে ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর নাম শোনা গেলেও তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন তিনি কাউন্সিলর নির্বাচন করবেন না।

 

তিন প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থীর পেছনে রয়েছেন প্রভাবশালী দুই জনপ্রতিনিধি এমন চাউরও রয়েছে। বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসাইনের পাশে রয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, সাবেক কাউন্সিলর মুন্নার পাশে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান।

 

জানা গেছে, মুন্নার বড় ভাই সাইদুল হাসান বাপ্পীকে শামীম ওসমান ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে বলে এক সময় মুন্নাই অভিযোগ করেছিলেন। তখন মেয়র আইভী ছিলেন মুন্নার পাশে। মুন্নাকে নিজের ছোটো ভাইদের চেয়েও বেশি আদর করতেন মেয়র আইভী। অথচ সেই মুন্নাই এখন ওসমানদের অনুগত। ফলে মুন্নার এই আচরণকে মোটেও ভালোভাবে নেয়নি শীতলক্ষ্যার মানুষ। তাই তারা বিগত নির্বাচনে তাকে প্রত্যাখান করেছেন এবং বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসাইনকে। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর কবির হোসাইন তার সেই ইমেজ ও জনপ্রিয়তা নানা কারণে ধারে রাখতে পারেননি। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা মনে করেন কবির হোসাইনই মেয়র আইভীর যোগ্য প্রতিনিধি।

 

অপরদিকে সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার পাশে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান। নিজের অবস্থান পাকাপক্ত করতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাছাড়া বিগত নির্বাচনে চাচা কবির হোসাইন মুন্নার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু চাচা নিজেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় চাচা-ভাতিজার ভোট ভাগ হয়ে আছে।

 

অন্যদিকে গত নির্বাচনে ১৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে হেরে গিয়েছিলেন আলহাজ¦ মকসুদুর রহমান জাবেদ। কিন্তু পরাজিত হওয়ার পরও তিনি মাঠ ছাড়েননি। গত পৌনে ৫ বছর বিভিন্নভাবে ওয়ার্ডের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন সাধ্যমত। প্রভাবশালী কেউ তার পেছনে না থাকলেও সাধারণ ভোটার বিশেষ করে শিক্ষিত যুবক ও তরুণ ভোটারদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন তিনি। কারণ করোনাভাইরাসের প্রথম ধাপে তার কার্যক্রম প্রসংশিত হয়েছে ওয়ার্ডবাসীর কাছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপেও তিনি পাশে দাড়িয়েছেন অসহায় মানুষের পাশে। পিতার নামে পরিচালিত ফজলুল হক উকিল ফাউন্ডেশন থেকে ওয়ার্ডের অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যা চলমান রয়েছে।

 

ওয়ার্ডের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এবং সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে কোন জলাবদ্ধতার সমস্যা নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রাস্তাঘাট এবং ড্রেনেজ ব্যাবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। তবে কিছু কিছু সড়কে রয়েছে আলোক স্বল্পতা এবং সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলা নিয়ে এলাকাবাসীর অসন্তোষ। আছে মাদক এবং চাঁদাবাজিরও অভিযোগ।

 

এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবি বিকে রোডের সামনে খালটি মজা খালে পরিণত হয়েছে, পুরো খালের অর্ধেক দখল হয়ে গেছে। বর্তমানে এ খালের মধ্যে ভরাট করে সিটি কর্পোরেশনের গ্যারেজ করা হয়েছে। যে জায়গাটা ভরাট আছে সেখানে একটা সিটি স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার, পাঠাগার এবং বয়স্ক অবকাশ কেন্দ্র করার জন্য।

 

শীতলক্ষ্যা প্রাইমারি স্কুলের পিছনে যে জায়গাটি রয়েছে সেখানে বাচ্চাদের উপযোগী করে একটি গ্রিন জোন গড়ে তোলা এ কাজগুলো করে দিলে নারায়ণঞ্জের মধ্যে আমাদের ওয়ার্ড একটি আদর্শ ওয়ার্ডে পরিণত হবে। শীতলক্ষ্যা রোডে এখন নতুন করে লোড আনলোড করা হয়। এখানে এমনভাবে ট্রাক রাখা হয় যে একট রিক্সা চলাচল করতে সমস্যা হয়ে যায়। এখানে লোড আনলোড বন্ধ করতে হবে।

 

শহীদ নগরের পূর্বদিকে বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন থেকে যে ময়লা ফেলা হচ্ছে এর দুর্গন্ধে আশেপাশে বসবাস করাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত এর একটি সমাধান চায় ওয়ার্ডবাসী। এলাকাবাসী মনে করেন প্রধান প্রধান সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেররার আওতায় যদি আনা হয় তাহলে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে।

 

আছিয়া বেগম ঝর্ণা নামে শহীদ নগরের একজন বাসিন্দার দাবী নারীদের উন্নয়ন এবং সাবলম্বী করার জন্য আরও ব্যাপক কর্মকান্ড হাতে নিতে হবে। বর্তমানে যে কার্যক্রমগুলো চালু আছে সেগুলোকে আরও টেকসই এবং স্থায়ী করা দরকার। মোটকথা সব মিলিয়ে জনবান্ধব একজন কাউন্সিলর চান এই ওয়ার্ডের ভোটাররা।