নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

২১ মে ২০২৪

থানায় অভিযোগ হলেও নাগাল পাচ্ছেনা পুলিশ, আতংক

সিদ্ধিরগঞ্জে মহাসড়কের দেড় কিলোমিটারে অপ্রতিরোধ্য ছিনতাইকারীরা

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২১:০৭, ১০ মে ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে মহাসড়কের দেড় কিলোমিটারে অপ্রতিরোধ্য ছিনতাইকারীরা

ছিনতাইতারীচক্রের মূলহোতা মো. ইদ্রিস।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে মাদানীনগর মাদরাসা ১০ তলা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারে ছিনতাইকারীরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।

প্রতিদিনই ভোর বেলা, দুুপুর ও সন্ধ্যা নামার পর সিরিয়াল করে ছিনতাই কর্মকান্ড চালিয়ে থাকে। এ অংশটুকু যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্য। 

এপথ দিয়ে সাধারণ মানুষ, পোষাক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক সর্বমহলের কাছে আতংক। বিশেষ করে ছোট ছোট যানবাহনের চালক হেলপার ও যাত্রীরা প্রতি নিয়তই শিকার হচ্ছেন ছিনতাই চক্রের। এরআগে সশস্ত্র ছিনতাইকারিদের হাতে কাঁচপুর ব্রীজের পশ্চিম ঢালে গত ১৯ এপ্রিল সিফাত নামে ১ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকেই। 

ছিনতাইকারীরা এতোই বেপরোয়া যে অপরাধ কর্মকান্ড ঘটিয়ে সটকে পড়ছে। ফলে এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ হলেও পুলিশ নাগাল পাচ্ছেনা। 

তবে অপর একটি সূত্র বলছে এসব ছিনতাইকারীদের সাথে পুলিশ ও পুলিশের সোর্সের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে তারা অধরাই থেকে যায়। মাঝে মাঝে দু’একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে মামলায় অসঙ্গতি থাকায় আইনের ফাঁক ফোকরে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যায়।

আবার মামলার বাদি ও স্বাক্ষীরা আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে নিজেকে মামলার কার্যক্রম থেকে দুরে সরিয়ে নেয় বলে একসময় এসব মামলা নিষ্পেষ হয়ে যায়। 

সচেতন মহল বলছে পুলিশের সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ তৎপরতা বাড়লেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম বন্ধ হবে।

সম্প্রতি গত ১০ দিনে কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে মাদানীনগর মাদরাসা ১০ তলা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারে গড়ে প্রতিদিন ৫/৬ টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা অধিকাংশই চলমান বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে এ পথে যাতাযাত করে বিধায় থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের করেন না। 

এছাড়াও প্রতিদিন ছিনতাইকারীরা যাত্রীবেশে অটো রিকশা, সিএনজি, লেগুনা ও যাত্রীবাহী গণপরিবহনে চড়ে বসে চালক হেলপার ও যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। 

চলতি মাসে প্রথম ১০ দিনেই প্রায় ১৫ থেকে ২০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও ৭/৮ জন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা থানায়র অভিযোগ দিলেও এর কোনো প্রতিকারে পুলিশের উদ্যোগ দেখা যায় নি। আবার অনেকে সড়কে নিরাপত্তার অভাবে পুলিশের দ্বারস্ত হয়নি। 

ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত ৩, ৫ ও ৮ মে থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন পরিবহন মালিক শ্রমিক আব ইউসুফ, শাহাদাত, মো. পলাশ, শহর আলী, মো. অনিক, সজিব, সাগর, রিপন, জৃুয়েল, শহিদ, রাকিব, রেজাউল। 

তাদের অভিযোগ ছিনতাইকারীরা তাদের গাড়িতে যাত্রী বেশে উঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে জোরপূর্বক যাত্রীদের টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়া ছাড়াও তাদের সাথে থাকা গাড়ির প্রতিদিনের ক্যাশ ও দামি দামি টাচ মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। 

ছিনতাইতারীদের মধ্যে অন্যতম মূলহোতা হলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার পাইনাদী কবরস্থান রোড এলাকার মজিদ শিকদারের ছেলে মো. ইদ্রিস। তার অধিনে রয়েছে আরও  ১৫/২০ জন। 

তারা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাঁচপুর ব্রীজের পশ্চিম ঢাল, সিএমবি, শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা পয়সা, মোবাইল ও দামি দামি জিনিষ ছিনিয়ে মাদানীনগর ১০তলার সামনে নেয়ে যায়। ওই ১০ তলার সামনে তাদেরকে প্রোটেকশন দিতে ছিনতাইকারীচক্রের আরেকটি দল থাকে। 

ছিনতাইকারীচক্রটি ভোর বেলা, মধ্য দুপুর ও সন্ধ্যার পর বেপরোয়া হয়ে উঠে। এ সময়গুলোতেই তারা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। 

এর আগে গত ২৫ এপ্রিল রাত ১ টায় তিনজন ছিনতাইকারী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানাীনগর এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী খালেদ মাহমুদ ও তার মামা সাজ্জাদ হোসেনের মোটরসাইকেল (নং- ঢাকা মেট্টো-ল-৫৯-১৫৮২) গতিরোধ করে চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মূল্যবান তিনটি মোবাইল ফোন, চার হাজার টাকা, মানিব্যাগ এবং তাদের মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। 

মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে বন্দরের কামতাল থানা পুলিশ ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করলেও খালেদ মাহমুদের হুন্ডা, মোবাইল ফোন উদ্ধার বা ছিতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এবিষয়ে অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমি নির্বাচনের ডিউটিতে গোপালগঞ্জ আছি। সেখান থেকে ফিরে এ বিষয় নিয়ে কাজ করবো। 

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক বলেন, আসার জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ টিআই শরফুদ্দিন বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমাদের একাধিক টিম ছিনতাইকারদের বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।