
পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে রেমিটেন্স যোদ্ধা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের চর-সুমিলপাড়া এলাকার হতদরিদ্র তরুণ আমিনুল ইসলাম (১৯)। কিন্তু ভালো কাজের আশায় বিদেশ পাড়ি জমাতে গিয়েই তিনি এক ভয়ঙ্কর দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
৬০ হাজার টাকা বেতনের চাকরির বদলে এখন তিনি বিদেশের মাটিতে কার্যত বন্দি। অভিযোগ উঠেছে, গত এক মাসে তাকে কম্বোডিয়ায় ৬ বার বিক্রি করা হয়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় ভুক্তভোগী আমিনুলের মা নারগিছ বেগম বাদি হয়ে সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে ‘ফ্লাই লেয়াদ এভিশন’ নামে একটি এজেন্সির কর্মকর্তা মোঃ ইমাম হোসেন (৪০) ও কর্মচারী বর্ষা আক্তার (৩০) কে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এজেন্সির ঠিকানা হিসেবে ঢাকার কমলাপুর মুগদা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ৮৯, অতিশ দীপঙ্কর রোডের তৃতীয় তলা উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ওই এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করেন। পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে প্রথমে গ্রিস বা সাইপ্রাসে যাওয়ার জন্য ১১ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেই দেশের ভিসা নেই বলে দালাল চক্রটি তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে।
তারা আমিনুলকে প্রলুব্ধ করে জানায়, মাত্র সাড়ে ৪ লাখ টাকায় কম্বোডিয়ায় পাঠানো যাবে। সেখানে একটি ফার্নিচারের কারখানায় তাকে ৬০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়। এই আশ্বাসে বিশ্বাস করে পরিবারটি রাজি হলে গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমিনুলকে কম্বোডিয়ায় পাঠায় চক্রটি।
ভুক্তভোগীর মা নারগিছ বেগম কান্ন জড়িত কণ্ঠে জানান, আমার ছেলেকে ফার্নিচার কারখানায় কাজ দেওয়ার কথা বলে পাঠালেও সেখানে যাওয়ার পর থেকে সে কোনো কাজ পায়নি। উল্টো কম্বোডিয়ার দালালরা আমার ছেলেকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বিক্রি করতে থাকে।
তিনি বলেন, এই বিষয়ে এজেন্সির কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে শুধু মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঘোরাতে থাকে আর বলে আমরা ভালো কাজের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিন্তু এই এক মাসের ভেতরেই আমার ছেলেকে ৬ বার বিক্রি করেছে দালালরা।
আমার ছেলে এখন সেখানে খুব অসহায় অবস্থায় আছে, সে বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। আমি মা হয়ে ছেলের এই আর্তনাদ কীভাবে শুনছি, আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফ্লাই লেয়াদ এভিশন এজেন্সির কর্মকর্তা মোঃ ইমাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি কম্বোডিয়ার ভিসা আছে, আপনার ছেলেকে পাঠাতে পারেন। তখন তারা আমাদের সাথে চুক্তি করে। সেই ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে।
অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বজলুর রহমান জানান, ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।