মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং যাত্রী সাধারণের চলাচলে ভোগান্তি কমাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম- সিলেট মহাসড়ক দখল করে গড়ে উঠা ৫ শতাধিক অবৈধ দোকান-পাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ, জেলা ট্রাফিক পুলিশ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় সরকারি জায়গা দখল করে প্রভাবশালী একটি চক্র কয়েক শত দোকান গড়ে তুলেছে। এরমধ্যে ১১৪টি রেডিমেট কাপড়ের দোকান, ৩৬টি মোবাইল কাভার ও ব্যাটারি দোকান, ৪৮টি ফলের দোকান, ৩০টি জুতা দোকান ছাড়াও ব্যাগ, মোবাইল এক্সেসরিজ, চা-পান, খাবার দোকান, সবজিসহ বিভিন্ন দোকান উল্লেযোগ্য। এই সকল দোকান থেকে দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট হারে দৈনিক হিসেবে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করে আসছিল তারা। শুধু তাই নয়, এসব দোকান থেকে এককালীন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়েছে। মাসে কোটি টাকা চাঁদাবাজি হতো এই সকল দোকান থেকে। এছাড়া আহসান উল্লাহ মাকের্ট, চম্পক সুপার মার্কেট, নেকবর আলী মার্কেট, কাসসাফ শফিং কমপ্লেক্স, বদর উদ্দিন সুপার মার্কেট, চাঁন সুপার মার্কেট কর্তৃপক্ষ তাদের মার্কেটের সামনে সরকারী জায়গায় দোকন তুলে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে আসছিল। চলাচলের পথ দখল করে অবৈধ দোকান গড়ে উঠায় পথচারীদের হাটার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে তারা। কিন্তু দেখার যেন কেউ ছিল না। কারণ প্রভাবশালীরা নিয়মিত চাঁদার ভাড় পাওয়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম আলোর মুখ দেখতো না। এক পর্যায়ে বৃম্পতিবার সড়কের উপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে এলাকাবাসী ও পথচারীরা। ভবিষ্যতে যাতে আর সড়ক দখল করে এই সকল অবৈধ দোকান-পাট বসতে না পারে এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এদিকে উচ্ছেদের ক্ষতিগ্রস্থ দোকানদাররা আরও জানান, সড়কের উপর ফুটপাতে দোকান বসাতে এককালীন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা অগ্রীম দিতে হয়েছে। আর দৈনিক ভাড়া দোকান ভেদে ১০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দেয়া লাগতো। কিন্তু উচ্ছেদ করার পর আমরা তো আর আমাদের এককালীন অগ্রীম যে টাকা দিয়েছি তা ফেরত পাবো কি না সন্দেহ। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক নেতা, থানা পুলিশ, কাউন্সিলর ও স্থানীয় মাস্তানরা নিয়মিত চাঁদা নিতো। কিন্তু উচ্ছেদের সময় এখন আর তাদের দেখা যাচ্ছে না।
শিমরাইল মোড়ের পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মশিউর জানান, যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে এই আভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। শিমরাইল মোড় ছাড়াও মৌচাক ও সানাড়পাড় বাসস্ট্যান্ড এর আশপাশে মহাসড়ক দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, দীর্ঘদিন থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য অবৈধ দখলদারদের বলেছি। এসব অবৈধ স্থাপনা না সরিয়ে নেয়ার এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জনগনের জায়গা জনগণের চলাচলেন সুবিদার্তে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর পুনরায় যাতে দোকানপাট বসতে না পারে সেজন্য কাচঁপুর হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হবে। মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।