
আড়াইহাজারে পদ-পদবী বাগাতে স্থানীয় বিএনপির লাপাত্তা ও বিতকির্তরা ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। এরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বাইরে অবস্থান করে আসছিলেন। বিগত দিনের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে তাদের দেখা যায়নি। হামলা ও মামলা এড়াতে তারা ছিলেন এলাকার বাইরে। ক্ষমতাসীনদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তবে সম্প্রতি তারা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অনেকেই এরই মধ্যে জেলা বিএনপিতে ঠাঁই করে নিয়েছেন। এনিয়ে দলটির তৃণমুলের নেতাকর্মীদের দেখা দিয়েছে হত্যাশা ও ক্ষোভ। এদের মধ্যে একজন হলেন থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বনে যাওয়া ইউছূফ আলী। তিনি সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুরের আশিরবাদপুষ্ট। তিনি ২০০১ সালে আঙ্গুরের আশিরবাদে হঠ্যাৎ সাধারণ সম্পাদক পদে ঠাঁই করে নেন। এনিয়ে তৎকালিন সময়ে দলের অনেক সিনিয়র নেতার মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, থানা বিএনপির সভাপতি প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খান খসরুও একই পথে হাটেন। তিনিও বিতর্কিত ব্যক্তি হাবিবুর রহমান (হাবু) কে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করেন। এ ঘটনার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে অনেক সিনিয়র নেতা রাজনীতিতে থেকে সরে পড়েন। অপরদিকে তৎকালিন এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর। যিনি খসরু’র ছোট ভাই। তিনিও সাবেক ইউপি সদস্য বিতর্কিত ইউছুফ আলীকে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করেন। এ ঘটনার পর আঙ্গুরের এমন কর্মকান্ডের কারনে তার প্রতি অনেক সিনিয়র নেতা ভিতরে ভিতরে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন।
সরেজমিন গিয়ে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, সাবেক ইউপি সদস্য ইউছুফ আলীকে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর মনগড়ামতো থানা বিএনপির পকেট কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে ঠাঁই করে দেন। ২০০২ সালে আড়াইহাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর হিসাবে বিএনপির সমর্থন পান ইউছুফ আলী। পরে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করে গোপনে মাত্র পঞ্চশ হাজার টাকার বিনিময়ে তৎকালিন আয়াওমী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাবিবুর রহমানের কাছে বিক্রি হয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, সাধারণ সম্পাদক বনে গিয়ে ইউছূফ আলী নানা বিতর্কিত কমকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। রাতারাতি বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যান। অভিযোগ রয়েছে, থানা পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার বানিজ্য, বিভিন্ন কায়দায় সুবিধা আদায় ও টেন্ডারবাজীতে জড়িয়ে যান তিনি। তার কাছ থেকে রেহায় পায়নি খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরাও। অনেক দলীয় কর্মী তার কাছে কোন সহযোগিতার জন্য গেলে তাকে গুন হয়েছে অর্থ। তিনি (ইউছূফ) থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ঠাঁই করে নিয়ে নিজেকে টাকার কামানোর মেশিন বানিয়ে ফেলেন। তার মনমতো না হলে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা ও মামলা জেল-যুলুম চালাতে বিধাবোধ করতেন না।
দলীয় তকমাকে কাজে লাগিয়ে তিনি কোটি টাকা কামিয়েছেন। তবে ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে তিনি আড়াইহাজার থেকে হঠ্যাৎ উধাও হয়ে যান। ১৫ বছর যাবত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গোপনে আতাঁত করে চলছেন। এলাকায় দলীয় কোন কর্মকান্ডে জড়িত না থাকলেও তিনি গোপনে লবিং করে নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটিতে ঠাঁই করে নেন। দলের দুঃসময়ে লাপাত্তা এই ব্যক্তি সাভার এলাকায় বসবাসের পাশাপাশি গড়ে তুলেন ব্যবসা-বাণিজ্য।
বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধার এবং বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করতে বিতর্কিত এই ব্যক্তিকে কখনো মাঠে দেখা যায়নি। এখন থানা বিএনপিতে পদবী বাগাতে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। দলের তকমা কাজে লাগিয়ে নিজে বিপুল অর্থভৈববের মালিক হলেও সরকারের হামলা ও মামলা জেল যুলুম ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ খবর নেয়নি বিতর্কিত এই ব্যক্তি।
এখানেই শেষ নয়। অনুসন্ধ্যানে জানাযায় তার ছোট ভাই বিল্লাল এবং ইউসুফ আলী পুত্র সুমন আওয়ামী লীগের নেতকর্মীদের সাথে আতাঁত করে যৌর্থ ক্যাডার বাহিনী নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীর ওপর অমানবিক জুলুম নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। ২০১৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিলেট যাওয়ার সময় দলীয় শত শত নেতাকর্মী স্বাগত জানাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পুরিন্দা এলাকায় রাস্তার দুই পাশে জড়ো হন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় ক্যাডার বাহিনীর সঙ্গে মিলে ইউছূফ আলীর পুত্র সুমন বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়।
থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শহীদ উল্যাহ মিয়া বলেন, তৎকালিন জেলা বিএনরি কমিটিতে সদস্য পদে ঠাঁই করে নেন ইউছূফ আলী। তাকে গোপনে সহযোগিতা করেছেন জিয়া পরিবারের নাম ভাঙ্গানো নজরুল ইসলাম আজাদ। তিনি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে ইউসুফ আলীকে সদস্য পদে ঢুকিয়ে দেন। এনিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একইভাবে আড়াইহাজার থানা বিএনপি কমিটিতেও ইউছূফ আলীকে ঠাঁই করে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। এমন খবরে উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।