
আগামী ২৭জুন অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। নারায়ণগঞ্জে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেল পাঁচটায় শহরের চাষাড়াস্থ শ্রী শ্রী গোপাল জিউর বিগ্রহ মন্দির প্রাঙ্গণে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
মতবিনিময় সভায় আগামী ২৭ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন স্থানে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে নেতৃবৃন্দরা দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শংকর কুমার দে'র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সরকার হুমায়ূন কবির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমরা চাই সুন্দর নারায়ণগঞ্জ। এই সুন্দর নারায়ণগঞ্জে এখানে সংখ্যালঘু বলতে কোন শব্দ থাকবে না। আর আমরা চাইও না বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বলতে কোন শব্দ থাকুক।
বাংলাদেশে আমরা সবাই বাংলাদেশী। এখানে আমরা ধর্মের মাধ্যমে কোনো ভেদাভেদ করতে চাই না। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের মন জয় করতে হবে। আমরা সেই নির্দেশনা মেনে কিন্তু আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন কত ১৬ সালের নির্বাচনে আমি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম সেই নির্বাচনে একটি ইশতেহার মধ্যে বলেছিলাম আপনাদের হিন্দু সম্পদের ভাই-বোনদের জন্য।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরের পাশাপাশি সেখানে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার এবং শহরের দেওভোগের জিউস পুকুর সংস্কার করে সেখানে ধর্মীয় যেন সকলে ব্যবহার করে সেই উপযোগী করে তোলার জন্য। কোন ব্যক্তি যদি ধর্ম শিক্ষা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে তাহলে সে কোন খারাপ কাজে লিপ্ত থাকতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি কথা প্রচলন আছে যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করেছে অনেকই। কিন্তু আমি বলতে চাই বিএনপির কয়জন লোক হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে আপনারা দেখবেন এমন বিচার করবেন আর আওয়ামী লীগের লোকেরা জন্য সম্পত্তি দখল করেছে তা আপনারা কিন্তু দেখেছেন।
আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলছে শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয় সকল সম্প্রদায় যদি আমাদেরকে ভোট দেয় আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তাহলে বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে একটি হিসাবে গড়ে তুলা হবে। সকল সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্ম সঠিকভাবে পালন করতে পারবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এই স্লোগান শুধু ব্যানারে লিখলেই হবে না, সবাইকে মানতে হবে। কারণ এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকল ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।
সকলের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই এদেশে কোনো ধর্মীয় বিভক্তি থাকতে পারে না। আমরা সকল ধর্মের মানুষ মিলে মিশে এই দেশে বসবাস করবো। যারা বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করবেন, আমরা মনে করবো তারা ফ্যাসিস্টের দোসর।
তিনি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেছে, হিন্দুদের নির্যাতন করেছে কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা আপনাদের পাশে আছি।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমাদের অভিভাবক তারেক রহমান আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আমরা জোরালো ভবে বলতে চাই, সে সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আপনাদের প্রতিটি মন্দির, বাড়ি-ঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাহারা দিয়েছে। আপনাদের যে কোনো সমস্যার কথা শুনলে দৌড়ে ছুটে গিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা নিশ্চিন্তে আপনাদের সকল ধর্মীয় উৎসব পালন করবেন। আগামী ২৭ জুন অনুষ্ঠিতব্য জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠানও জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করুন। আপনারা রবিবারে জেলা প্রশাসকের কাছে আসুন, আমরাও থাকবো।
পুরো অনুষ্ঠানের একটা রোড ম্যাপ তৈরি করা হবে। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীরা আপনাদের পাশে থেকে অনুষ্ঠানকে সফল করতে সহায়তা করবে।
মতবিনিময় সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন উপস্থিত রথযাত্রা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্দিরের প্রতিনিধিগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শ্রী শ্রী জগন্নাথ রথযাত্রা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের সবকটি রথ যেন একই সময়ে বের করা হয় যাতে করে সুশৃংখলভাবে সুন্দর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা যায়।
একেক স্থান থেকে একেক সময় বের করা হলে শহরে যানজটসহ নানাবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিকেল তিনটায় সবাই একসাথে রথ বের করবেন এবং বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করবেন।
তিনি আরো বলেন, অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে, পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষের উদ্যোগে নিজস্ব ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হবে। বরাবরের ঐতিহ্য ধরে রেখে আবারো একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠার আয়োজনে আপনাদের সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী পূর্ণ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সাবেক ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কর্মকার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সঞ্জিব কর্মকার জয়, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণপদক সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার দাস, সহ- সভাপতি সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহা, জেলা কমিটির সহ- সভাপতি তিলোত্তমা দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দে, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষ্ণ আচার্য সহ জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্দির প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।