নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪

যাকাত ফান্ড, শামীম ওসমানের ফর্মুলা, সরকারের উদ্যোগ (ভিডিও)

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০২:৪৬, ১৫ মার্চ ২০২২

চলমান করোনা মহামারি এবং দু;স্থ-অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান জাতীয় পর্যায়ে যাকাত ফান্ড গঠনের একটি ফর্মুলা দিয়েছিলেন আজ থেকে ২০ মাস আগে। সেখানে তিনি কমিটির প্রধান কে হবে, কোন সেক্টরের লোকদের কমিটিতে সম্পৃক্ত করতে হবে, কমিটির কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে, কারা পরিচলনা করবেন, সংগ্রহকৃত যাকাত কিভাবে বিতরণ হবে, এবং প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে কারা যাকাত পাবে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। এবং এই যাকাত ফান্ডের উদ্দেশ্যটাও তিনি বলেছেন। ২০২০ সালের ১ জুলাই (মঙ্গলবার) বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল আই’র তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে তিনি এই যাকাত ফান্ডের  ফর্মূলা দেন।

 


এদিকে দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা-উপজেলা ও স্থানীয় পর্যায় থেকে যাকাত সংগ্রহের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য যাকাত ব্যবস্থাপনা আইন নামে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর আগে যাকাত ফান্ড অর্ডিন্যান্স-১৯৮২ এর মাধ্যমে যাকাত ব্যবস্থাপনার কাজ করতো সরকার। সরকারিভাবে যাকাত সংগ্রহের লক্ষ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনো আইন না থাকায় সময়োপযোগী করে নতুন আইনটি হালনাগাদ করে প্রণয়ন করা হচ্ছে। ‘যাকাত ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২’ শীর্ষক ওই আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠেছে সোমবার (১৪ মার্চ)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নতুন আইনের উদ্দেশ্য পূরণে যাকাত তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। দেশের অভ্যন্তরে সরকারিভাবে সংগৃহীত যাকাত, প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিকট থেকে প্রাপ্ত যাকাত, বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নিকট থেকে প্রাপ্ত যাকাত এবং অন্য কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত যাকাত অর্থ দিয়ে এই তহবিল গঠন করা হবে। সরকার প্রয়োজনবোধে স্থানীয়ভাবে যাকাত তহবিল সংরক্ষণ করার জন্য অনুমতি প্রদান করতে পারে। তহবিলে সংগৃহীত অর্থ বোর্ড অথবা ক্ষেত্রমতে কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোনো তফসিলি ব্যাংকে ‘সরকারি যাকাত ফান্ড’ শিরোনামে সুদহীন হিসাবে গচ্ছিত রাখা হবে।

 


ওদিকে ২০ মাস আগে জাতীয় পর্যায়ে যাকাত ফান্ড গঠনের ফর্মূলা দিয়ে শামীম ওসমান বলেছিলেন, এবার আমাদের ৫ লাখ সামথিং বাজেট দেয়া হয়েছে। আমরা কিন্তু এক কোটি মানুষ আছি বা আছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে একটা সময় তাদের তেমন কিছু ছিল না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের অর্থ-বিত্ত দিয়েছেন। আমার ধারনা কেউ হয়তো ১০ কোটি টাকা যাকাত দেন, কেউ হয়তো ৫ কোটি, কেউ দুই লাখ টাকা দেন। আমি ইন এভারেজ বলেছি। আমার বিশ্বাস তারা ৫ লক্ষ টাকা যাকাত আদায় করেন। আমি একটা হিসেব করে দেখেছি ৫ লক্ষ টাকা করে যদি এক কোটি মানুষ যাকাত দেন। এবং সেই যাকাতটা যদি আমরা প্রপারলি ইউজ করতে পারি। এবং মানুষের মধ্যে যদি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি। তাহলে এই যাকাতের পরিমান দাঁড়ায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা। যা আমাদের বাজেটের সমান।

 


তিনি আরও বলেছেন, আমি বলছি না যে একবারে ৫ লক্ষ কোটি চলে আসবে। আমরা যদি ডলারে হিসেবে করি অনেক টাকা। সেই টাকাটা ৫৮ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ডলার। এইটা অনুমান দাঁড়ায়। এবং এটা কিন্ত আমরা করতে পারি ইনশাআল্লাহ। 

 


তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেছিলেন, ট্যাক্সটা কিন্তু অনেকে ফাঁকি দেয়। যাকাতটা আবার ঠিকমত দেয়। এটা আমি দেখেছি। যাকাতটা অনেকেই দেন। যাকাতটা যাতে দেন এই জন্যই আমার প্রয়াসটা।  আমি একটা জিনিস মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। এবং আমি যা দেখেছি তা বলতে চাই। গত ৪০ বছর ধরে দেখেছি, এটা আমি আওয়ামীলীগ করছি বলে বলছি না। এই বিশ্বাসটুকু সবাই রাখবেন। জাতিরজনকের কণ্যা শেখ হাসিনা, আল্লাহর প্রতি তার অগাদ বিশ্বাস। তিনি তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ পড়ে দিন শুরু করেন এটা যারা তাকে ভোট দেন না তারাও জানেন। আমি মনে করি যাকাতের কিন্তু একটা কিমিটি আছে। কিন্তু এটা কমপ্লিটলি ইনঅ্যাকটিভ। সেখানে আমরা যদি সম্মিলিত একটা প্রয়াস নেই। এখানে দলীয় কিছু হবে না। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে একটি কমিটি করা যেতে পারে। এবং সেই কমিটিতে দেশ বরেণ্য রিয়েল আলেম, দেশ বরেণ্য অর্থনীতিবিদ, সমস্ত বড় কর্পোরেট হাউজ, বড় বড় শিল্পপতিতে অন্তুভুক্ত করা যেতে পারে।

 

আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ যেখানে মানুষের আস্থাটা আসবে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় সকল দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা সবার কাছে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। যেমন রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ওনার একটা গ্রহণ যোগ্যতা আছে। আমি ওনাকে সম্মান করি। এই রকম সকল দলের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব যারা আল্লাহ খোদাকে বিশ্বাস করেন, কিংবা দেশপ্রেম রয়েছে তাদেরকে অন্তভুক্ত করা যেতে পারে। এরপর সমস্ত ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রধান। তাদেরকে অন্তভুক্ত করা হবে একটি কারণে যে  তারা বছর জুড়ে দুই মিনিট হোক আর তিন মিনিট হোক বিনামূল্যে এজ এ সদকায়ে জারিয়া হিসেবে প্রচার করবে। সেই প্রচারটা হবে কেন যাকাত দিবেন, যাকাত দিলে কি হয়, এটা আলেম বলবেন, সমাজ বলবেন, পলিটিশিয়ান বলবেন। সবাই বলবেন। যারা এ বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। এখানে বিশাল একটা জনমত গড়ে তোলার একটা সুযোগ আসতে পারে। এরপর এই যাকাত ফান্ডটা পরিচালনা করার জন্য যেমন সেনা কল্যান সংস্থা আছে, আমাদের দেশপ্রেমিক প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে, তাদেরকে আমরা এটার সঙ্গে অন্তভুক্ত করতে পারি। এবং  করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিট কর্তৃপক্ষ যারা আছেন তাদেরকে। এর সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় আছে।

 


এই যাকাত ফান্ড কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে শামমি ওসমান বলেন, উদ্দেশ্যটা হবে মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা। ফাস্ট প্রায়োরিটি কে পাবে? ফাস্ট পায়োরিটি পাবে ভুমিহীন ও কর্মহীন যারা আছে। তাদের শনাক্ত করতে হবে। যেই টাকাটা আসবে আমরা যদি জেলা ভিত্তিক তাদের জন্য বাসস্থান করি এবং সেই বাসস্থানকে বেজ করে যদি কর্মের ব্যবস্থা করা হয় সেইটা কিন্তু অন্যান্য দেশে হয়। আমরা এটা করতে পারি। সেকেন্ড প্রায়োরিটি পাবে যে কর্মহীন। তৃতীয় বেকার যুবক যারা আছে তাদের সম্পুর্ন সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হবে। তবে ঋণ ফেরত নেয়া হবে। চতুর্থ হলো নিন্মবিত্ত। এটাকে অগ্রানাইজড করে যদি আলোচনা করা যায়। এই জন্যই ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার দরকার। মানুষকে এ ব্যাপারে জাগ্রত করার জন্য। আখেয়াত ও ইহকাল পাওয়ার জন্য। মানুষ কিন্তু প্রথম বিশ্বাস করবে না। কিন্তু মানুষ যদি দেখে এই কমিটির সঙ্গে সবাই সম্পৃক্ত হয়েছে। এই কাজগুলো হবে। তাছাড়া যাকাত কিন্ত  প্রপারলি সব জায়গায় দেয়া যায় না। আপনি কিন্তু মসজিদে যাকাত দিতে পারবেন না। কিন্তু এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিতে পারবেন। 

 


শামীম ওসমান আরও বলেন, আমরা কিন্তু যাকাত দিচ্ছি। কিভাবে দিচ্ছি? অনেকে ৫০ হাজার শাড়ি দিচ্ছি, ২০ হাজার  শাড়ি দিচ্ছি, লুঙ্গি দিচ্ছি, কিংবা ১ হাজার ২ হাজার করে টাকা দিচ্ছি। ৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। ওই শাড়িটা দিয়ে কি লাভ হচ্ছে? তবে যারা শাড়ি বিক্রি করছেন তাদের একটা ব্যবসা হতে পারে। কিন্তু ৫ হাজার টাকা দিলে কি হচ্ছে হয়তো একমাস ভালো করে খাচ্ছে। কিন্তু যাকাতের নিয়ম হচ্ছে আরেকজনকে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া দুইজন বা পাঁচজন মিলে। যাতে আগামী বছর সে নিজেই যাকাত দিতে পারে। সো রাস্ট্র যদি এই কাজটা করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর মানুষের বিশ্বাস আছে। হয়তো আমার উপর নাই ওনার উপর (শেখ হাসিনা)’র সবার একটা বিশ্বাস আছে। যে একেবারে আওয়ামলীগকে দেখতে পারে না, সেও মনে করে ওনি একজন ধার্মিক মহিলা। আমিও আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে বলতে চাই তিনি  (শেখ হাসিনা) কি পরিমান ধার্মিক। সো সঙ্গে আলেম সমাজ, সব দলের নেতৃবন্দ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব সবাইকে নিয়ে। এবং এখানে সবচেয়ে ভুমিকা রাখতে পারে আমি মনে করি মিডিয়া ও ইন্ড্রাস্ট্রিরিয়ালিষ্টরা। 

 


শামীম ওসমান বলেছেন, যারা এই ইন্ড্রাস্টিজটা গড়বেন, এই মালটাকে কিনবেন এবং প্রোডাক্ট করবেন। সেটা গার্মেন্টস হতে পারে, কুটির শিল্প হতে পারে, ফিশারিজ হতে পারে, আইটি সেক্টর হতে পারে, পল্ট্রি হতে পারে, কৃষি হতে পারে। অর্থাৎ যে সেক্টরগুলোতে আলেমরা বলবেন যাকাতের টাকাটা বিনিয়োগ করতে সেখানে করা হবে। তাহলে আমার বিশ্বাস যে ইনশাআল্লাহ, এই মহামন্ধার দিনেও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে দেখাতে পারবে আমরা একজনের সাহায্যে আরেকজন এই জায়গাটায় ওভারকাম করতে পেরেছি।

 


শামীম ওসমান আরও বলেন, এখানে একটা কথা থাকতে পারে অন্য ধর্মের লোক তারা কি করবেন। তাদের জন্যও একটা ফান্ড করা যেতে পারে। আমার মনে হয় এই দেশে অন্য ধর্মের এক কোটি লোক আছেন। তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫  লক্ষ মানুষ আছে যারা দান করতে পারে। যদি তাদের জন্য একটা ফান্ড করা যায়। আমার বিশ্বাস এটা ২০২০। ২০২১, ২২, ২৩ ও ২৪ সালে যদি ঠিকমত আমরা সবাই মিলে এই কাজটা করি (যাকাত ফান্ড) তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ২০২৪ সালের পর দেখা যাবে যাকাত নেয়ার মানুষ থাকবে না, যাকাত দেয়ার মানুষ থাকবে ।


 

সম্পর্কিত বিষয়: