নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

রোববার,

১৯ মে ২০২৪

নদী দূষণ ও দখল নিয়ে আলোচনা সভায় বক্তারা

ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা নদী দূষণমুক্ত করার ব্যবস্থা না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:৩৮, ২১ জানুয়ারি ২০২৪

ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা নদী দূষণমুক্ত করার ব্যবস্থা না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির আয়োজনে নদী দূষণ ও দখল নিয়ে নাগরিক ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া শহীদ মিনার চত্বরে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির আয়োজনে সোসাইটির চেয়ারম্যান মো. হোসাইন এর সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

এ সময় বক্তারা বলেন, বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে নদীকেই কেন্দ্র করে। মিশরকে নীল নদের দান বলা হয়; তেমনি নদীমাতৃক বাংলাদেশকে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদ-নদীর দান বলা যায়। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে অভিন্ন ৫৭টি নদী।

নদী বিধৌত এ'দেশে ছোট-বড় মোট ২৩০টি নদী আছে আর শাখা-প্রশাখাসহ নদীর সংখ্যা প্রায় ৮০০টি। এ নদীগুলো সারাদেশে রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বহমান। মেঘনা ব্রহ্মপুত্র শীতলক্ষ্যা ধলেশ্বরী বুড়িগঙ্গা আর বালু নদী পরিবেষ্টিত নারায়ণগঞ্জ জেলা। এই নদীগুলো নারায়ণগঞ্জের পরিবেশের বিচিত্র অনুষঙ্গ। 

আমাদের দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠির জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে নদীর সাথে। খরস্রোতা নদীগুলোতে জেলেরা মাছ ধরত, নৌকাবাইচ হতো, উৎসবের আমেজে মেতে উঠত নদীর পাড়ের মানুষগুলো। কৃষি, মৎস্য,জেলেদের পেশা এবং সংস্কৃতির পাশাপাশি মানুষের নিত্যদিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ সবকিছুর একমাত্র উৎস ছিল এই নদীগুলো। 

বাংলাদেশের নদীগুলো মিঠা পানির প্রধান উৎস্য এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু আমাদের দায়িত্বহীনতায় নদীগুলো দখল ও দূষণের শিকার। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্রই ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছি।  কিন্তু সেই নদী আজ দখল, দূষণ আর ভরাটের প্রতিযোগিতায় বিপন্ন; অনেকাংশে বিলুপ্ত।

তারা আরো বলেন, নদীগুলোর নাব্যতা হারানোর নানাবিধ কারণের মধ্যে অবৈধ দখলদারিত্ব, অপরিকল্পিত নদীশাসন, দূষণ, ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, ইচ্ছামতো বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি অন্যতম। সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠছে বড় বড় কলকারখানা, শত শত বাঁধ। 

দূষণ-দখলের কবল থেকে কিছুতেই বাঁচানো যাচ্ছে না ব্রহ্মপুত্র মেঘনা আর শীতলক্ষ্যা নদীকে।  প্রতিদিনই বাড়ছে দূষণ; বাড়ছে দখলদারদের সংখ্যাও। প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে দখলের উৎসবে মেতেছে।

খাল, নদ-নদী, নর্দমা হয়ে অপরিশোধিত অবস্থায় নদীগুলোতে জমা হচ্ছে। নদীগুলোকে গিলে খাচ্ছে পলিথিনসহ শিল্প-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্য, হাসপাতাল-ক্লিনিকের পরিত্যক্ত কেমিক্যাল, লঞ্চ-জাহাজের পোড়া তেল, মবিল, ওয়াসার পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য। 

মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে বহু আগে। জীব বৈচিত্রও নেই। এ নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্যের কোঠায়। আদালতের রায় অনুযায়ী নদীগুলো এখন 'জুরিসটিক পারসন' বা 'লিগ্যাল পারসন'। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মতো নদীরও মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। সুতরাং নদীকে হত্যা করার অর্থ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হত্যা করা। 

আদালত স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের সব নদীই মূল্যবান এবং সংবিধান, বিধিবদ্ধ আইন ও পাবলিক ট্রাস্ট মতবাদ দ্বারা সংরক্ষিত।বাংলাদেশকে 'নদীমাতৃক' বলা হয়। নদী মায়ের মতো; নদী মা হিসেবে স্বীকৃত। নদী দূষনও মাকে হত্যা করার সামিল।

এই নদী দূষণ ও দখলে জারা জড়িত তাদের সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলোর অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এ সকল অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী দূষণে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেগুলো প্রয়োজনে বন্ধ করে দিতে হবে।

১৮ কোটি মানুষের জন্য উন্নয়ন। নদী দখল দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১৮ কোটি মানুষের জীবনের হুমকি। তাই উন্নয়নের নামে অসাধু ও শিল্প প্রতিষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন। 

যারা নদী দখল করে নদীর নাব্যতা ভিন্ন করছে তাদের কেউ শাস্তির আওতায় আনার জন্য উক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা দাবি জানান।

পরিশেষে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ শীতলক্ষ্যা নদী দূষণমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করলে নদীপাড়ের লাখো মানুষের সমন্বয়ে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন সভাপতি এম এ মহিন, মোঃআলী, ফজলুল হক ভূইয়া, জহিরুল ইসলাম,  মোশাররফ হোসেন, মোঃসিরাজ,শফিকুল ইসলাম ঢালী নদী খাল ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি, এম এ মান্নান ভূইয়া চেয়ারম্যান মানব কল্যাণ পরিষদ, জহিরুল ইসলাম খোকন, খালেদ সাইফুল্লাহ পরিবেশ গবেষক, রাকিবুল ইসলাম ইফতি যুগ্ম জেলা সমন্বয়কারী ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার - নারায়ণগঞ্জ জেলা, মো. নাজমুল হাসান রুমি সাধারণ পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক, বুবলী আক্তার নারী উদ্যোক্তাসহ প্রমুখ।