নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

১৪ অক্টোবর ২০২৫

শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে না’গঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচন : সরে দাঁড়ালেন ২ প্রার্থী

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৮:১৬, ২৪ আগস্ট ২০২৫

শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে  না’গঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচন : সরে দাঁড়ালেন ২ প্রার্থী

আগামী ২৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে শেষ মূহুর্তে প্রচার -প্রচারণায় জমে উঠেছে। বিএনপির দুই প্যানেলসহ জামাতের প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

আর নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপির স্বতন্ত্র প্যানেল (রেজা- গালিব) পরিষদের সহ-সভাপতি ও আপ্যায়ন সম্পাদক পদের দুই প্রার্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মনোনীত হুমায়ূন - আনোয়ার প্রধান প্যানেলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন। 

বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবি সমিতিতে তিনটি প্যানেল থাকায় ভোটের মাঠে প্রচারনা জমে উঠেছে। এবার উৎসব মুখর আমেজের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে থেকেই আলাদা আলাদা প্যানেল ঘোষণা হওয়ায় আইনজীবি ভোটারদেরও গুরুত্ব বেরেছে। এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আইনজীবী সমিতিতে ফিরেছে ভোট। সেই সাথে সকল আইনজীবীদের মধ্যেই বিরাজ করছে উৎসবমুখর আমেঝ। 

এদিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের এড. হুমায়ুন-এড. আনোয়ার প্রধান পরিষদের প্রার্থীরা ভোটের ধারে ধারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। 

অন্যদিকে তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে পিছিয়ে নেই জামায়াত সমর্থিত সবুজ প্যানেলে এড. হাফিজ- এড. মাইন উদ্দিন পরিষদের প্রার্থীরা। তারাও ভোটারদের মনজয়ে করতে চেষ্টা করছে। 

এছাড়া বিএনপির আরেকটি অংশ এড. রেজাউল করীম খান রেজা- এড. দুলাল মোর্শেদ গালিব প্যানেলের প্রার্থীরাও ভোটারদের কাছে ছুটছেন। আদালত পাড়ায় এখন ভোটারদেরও গুরুত্ব বেড়েছে। 
তাছাড়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটদানের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় ভোটাররাও খুশি। তিনটি প্যানেলের প্রচারণায় সারাক্ষণ মুখর থাকছে নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়া। দলবদ্ধভাবে মিছিল করেও ভোট চাইছেন তারা।

এবারের নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির (২০২৫-২০২৬) সালের নির্বাচনে ১৭টি পদে লড়বেন ৩ প্যানেলের ৪৮ জন ও স্বতন্ত্র ১ জনসহ মোট ৪৯ জন প্রার্থী। 

এতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে— জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত এড. সরকার হুমায়ূন কবীর ও এড. এইচ. এম. আনোয়ার প্রধানের পূর্ণ প্যানেল, জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল মনোনীত এড. হাফিজুর রহমান ও এড. মো. মাইনউদ্দিন মিয়ার পূর্ণ প্যানেল এবং আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী এড. রেজাউল করিম খান রেজা ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. শেখ মো. গোলাম মোর্শেদ গালিবের আংশিক প্যানেল, পাশাপাশি স্বতন্ত্র হিসেবে থাকছেন এড. মোহাম্মদ আলী। 

জানাগেছে, দীর্ঘ ১৬টি বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জন্য জৌলুস হারিয়ে গিয়েছিল। আদালত পাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরা স্বস্তিতে থাকতে পারেননি। বিশেষ করে ১৮ সালের নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্যানেল এককভাবে আইনজীবী সমিতির আধিপত্য বিস্তার করেন। সেই সময় নির্বাচনের নামে চলে ছিল খালি তামাশা। 

নামমাত্র নির্বাচন দিলো জোরপূর্বক ভাবে তারা ফলাফল ছিনিয়ে নিয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। কারণ তখন তৎকালীন সংসদ শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরায় আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছিল। ফলে তারা একক প্রভাব বিস্তার করে আইনজীবী সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। তাদেরকেও নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়ন অপমান করে অপদস্থ্য করা হয়েছে। 

পাশাপাশি জামায়াত সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আইনজীবীরাও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। আইনজীবীরা নিরাপদে ভোট দিতে পারেননি। তাদের নির্বাচনের সময় বহিরাগতরা আদালতপাড়ায় এসে শোডাউন দিয়েছেন। আইনজীবীদেরকে হেনেস্তা করেছেন। 

তাছাড়া ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের আমলে নির্যাতিত অত্যচার সহ্য করা মজলুম দল জামায়াত বিএনপির আইনজীবিরা এখন প্রকাশ্যে নির্বাচন করছেন। 

সেই সময় আইনজীবী সমিতির প্রতিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিতা আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় সেই প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের উপরও তারা চড়া হয় এবং তাদেরকে মারধরও করা হয়েছিল। সেই সময় নাজাহালে শিকার হয়েছিল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও এড. আনোয়ার প্রধানসহ বিএনপিপন্থী বেশ কিছু আইনজীবীরা। 

কারণ তারা বরাবরই আইনজীবী সমিতির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং প্রতিবাদ করেছিলেন। ফলে শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা তাদেরকে টার্গেট করেছিল।

সেই সময় নির্বাচনে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে হুমকি ও ছেলেকে জিম্মি করা হয়েছিল এবং আনোয়ার প্রধানকেউ হুমকি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। এতকিছু করার পরও কিন্তু তাদের কণ্ঠকে রোধ করতে পারেনি। 

আরও জানাগেছে, গত ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে ।

আর এই পতনের মধ্য দিয়ে শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা যারা দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতিকে কলুষিত করার মাধ্যমে জিম্মি করেছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরাও আত্মগোপনে চলে যান। 

পরবর্তীতে আইনজীবী সমিতির সকল আইনজীবীদের নিয়ে বিশেষ একটি সভার মাধ্যমে সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি এডহক কমিটি গঠন করে পরবর্তীতে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আর সেই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির বিএনপি ও জামাতসহ  অন্যান্য দলের আইনজীবীদেরকে নিয়ে একটি বৈষম্যহীন প্যানেল গঠন করা হয়।

আর সেই প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এড. সরকার হুমায়ূন কবির ও তরুণ আইনজীবী এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান)। সকল আইনজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ আগস্ট আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কমিশনার এড. আবদুল বারী ভূঁইয়া। আইনজীবী সমিতির মোট ভোটার ১১৭২ জন।