
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জনি সরকারের (২৫) নামে এক যুবকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ঘটনাস্থলের পাশেপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ অনুসন্ধান করে নিহতের বাবা করুনা সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সেই জিজ্ঞাসাবাদে করুনা সরকার ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে করুনা সরকার ও তার স্ত্রী মিলে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য বস্তায় ভরে ড্রেনে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় করুণা সরকার ও অসিতা রানী সরকার কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান।
গ্রেফতাররা হলেন- নিহতের বাবা করুণা সরকার ও মা অসিতা রানী সরকার। তারা সিলেট জেলার জামালগঞ্জ থানার বিষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তারা তিন সন্তান নিয়ে ফতুল্লার পূর্ব শিহাচর লালখাঁ এলাকায় দুলাল পুলিশের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, ফতুল্লার লাল খা শিহাচর এলাকার দুলাল পুলিশের ভাড়া বাসায় স্ত্রী অসিতা রানী সরকার, একমাত্র ছেলে জনি সরকার ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছিলেন করুণা সরকার। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নৈশপ্রহরীর চাকুরি করেন তিনি। ছেলে জনি সরকার স্থানীয় মাদকাসক্ত ও বখাটে যুবকদের সাথে চলাফেরা করে নিজেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন এবং বখাটেপনা করেন। মাদকের টাকার জন্য প্রায় সময় জনি তার বাবা মাকে মারধর সহ নানাভাবে নির্যাতন করতো। মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন বাবা করুণা সরকার ও মা অসিতা রানী সরকার।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত ১৬ জুন রাতেও জনি মাদকের টাকার জন্য তার বাবা ও মাকে মারধর করে। এরপর রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে জনির মাথায় ও মুখমন্ডলে আঘাত করেন তার বাবা করুণা সরকার। এক পর্যায়ে ঘুমন্ত জনির দেহ নিথর হয়ে পড়লে তার গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তার মা অসিতা রানী সরকারের সহযোগিতায় হাত-পা বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে গভীর রাতে সড়কের পাশে ড্রেনে ফেলে দিয়ে বাসায় চলে যান করুণা সরকার। পরদিন ১৭ জুন সকালে ওই ড্রেন থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় জনির লাশ উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, এ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহত জনির বাবা করুণা সরকার নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর মামলার তদন্তে ও সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে আসে হত্যাকান্ডের এই চাঞ্চল্যকর রহস্য। সেই ভিডিওতে দূর থেকে এক ব্যক্তির অস্পষ্ট ফুটেজ দেখা যায়। সেই ব্যক্তির চলাফেরা ও আচরণ দেখতে তার বাবা করুনা সরকারের মত। এর ফলে নিহত জনির বাবা ও মাকে বুধবার (১৮ জুন) রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দেয় তারা।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, জনি সরকারের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার বাবা করুনা সরকার নিজে বাদী হয়ে মামলা করলেও এখন তিনি আসামি। আর তার এই কাজে সহযোগি হিসেবে তার স্ত্রীকেও আসামি করা হয়েছে। এখন পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি হত্যা মামলা করবে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে ফতুল্লার পূর্ব শিহাচর লালখাঁ এলাকার সড়কের পাশের ড্রেন থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জনি সরকার (২৫) নামে এক যুবকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর নিহতের বাবা করুনা সরকার বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে পুলিশ তদন্তে নেমে রহস্য উন্মোচন করে।