নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৫ অক্টোবর ২০২৫

সোনারগাঁয়ে রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন সমীকরন

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রতিদ্বন্ধী বিএনপি, অন্যদের একক প্রার্থী

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২১:৪৯, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রতিদ্বন্ধী বিএনপি, অন্যদের একক প্রার্থী

প্রাচীন বাংলার রাজধানী খ্যাত ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ের ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন এই আসনের সাথে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০টি ওয়ার্ড (সিদ্ধিরগঞ্জ থানা) যুক্ত করায় এখানকার রাজনীতিতে নতুন সমীকরন শুরু হয়েছে।

এ আসনের সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপির সাতজন প্রার্থী মনোনয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন। তবে বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি থাকলেও জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলোর একক প্রার্থী মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়াও এনসিপিসহ অন্যান্য দলের একক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।  

গত বছরের ৫ আগষ্টের পর সারাদেশের ন্যায় সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। সেই হাওয়ায় আওয়ামীলীগ মাঠ থেকে আউট হয়ে যাওয়ায় বিএনপির ৭জন প্রার্থী পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। যা দেখে মনে হচ্ছে এ আসনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী এখন বিএনপি-ই।

মনোনয়ন যুদ্ধে যারা মাঠে আছেন তাদের মধ্যে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহা-পরিচালক এস এম ওয়ালিউর রহমান আপেল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আল মুজাহিদ মল্লিক।

অন্যদিকে এ আসনে একক প্রর্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতার জন্য মাঠে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যক্ষ ড. ইকবাল হুসাইন ভুঁইয়া, খেলাফত মজলিশের সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. সিরাজুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের ফারুক আহমেদ মুন্সি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)র জাতীয় যুবশক্তির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তুহিন মাহমুদ।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি ছাড়া অন্য একাধিক দল মাঠে থাকলেও এখানে বিএনপি-ই শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। আসন টিতে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এখানে একটানা বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম। ফলে এ আসনটি কে নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে বিএনপির ঘাটিঁ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বর্তমানে এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লক্ষ ৮৩হাজার ৯৫২জন।

এর মধ্যে সোনারগাঁ উপজেলায় ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩শ ৭৫ জন এবং সিদ্ধিরগঞ্জের ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ২০ হাজার ৫৭৭ জন। এ আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনের সাথে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা যুক্ত ছিল। তবে পরবর্তী দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাথে যুক্ত হয়।

দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে দ্বাদশ নির্বাচনে  আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত পূনরায় নির্বাচিত হয়।

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আবারো সিদ্ধিরগঞ্জ থানাকে সোনারগাঁ এর সাথে যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন করা হয়। ফলে এ আসনে সিদ্ধিরগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন এখান থেকে মনোনয়ন পেতে শুরু করেছেন দৌড়ঝাপ। এতে সোনারগাঁয়ের আজহারুল ইসলাম মান্নান এর সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মূলত গিয়াসউদ্দিন ও মান্নান সমর্থকরা মনোনয়ন নিয়ে মাঠে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। 

এদিকে এ আসনের বিএনপি সমর্থকদের একটি অংশ বলছেন, গত ৫ আগষ্টের আগে সংসদ সদস্য প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের একটি ভালো ইমেজ থাকলেও ৫ আগষ্টের পর বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, মেঘনা নদীর নৌযানে চাঁদাবাজি ও মেঘনা টোল প্লাজা দখলের ঘটনাসহ তাঁর লোকজন নানা বির্তকে জড়িয়ে তার অবস্থান অনেকটা নষ্ট করেছেন। এসব ঘটনায় তিনি মনোনয়ন দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন।

তবে গিয়াস উদ্দিন একবার বলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন চাইবেন আবার বলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। এতে তার কর্মী-সমর্থকরা দ্বিধা দ্বন্ধে রয়েছে।

অন্যদিকে অধ্যাপন মামুন তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন সোনারগাঁও এবং সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে বিএনপি’র ৩১ দফার প্রচারণায় উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করছেন তিনি।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, আমি এমপি থাকাকালীন সময়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছি এবং আওয়ামীলীগের দুঃশাসনের আমলে নেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। বিগত সময় এলাকার মানুষের সুখ দুঃখে পাশে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। মনোনয়ন পেলে আমি সোনারগাঁয়ের অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজগুলো ইনশাল্লাহ সমাপ্ত করবো।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সিদ্ধিরগঞ্জকে যুক্ত করার আগে থেকেই আমি সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছি। আমি চাই সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে।

তবে একটি পক্ষ আমাকে বিভিন্ন ভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে। যা কখনো কাম্য হতে পারে না। আমি যদি মনোনয়ন পাই তাহলে সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জের উন্নয়নে পরিকল্পিতভাবে কাজ করবো ইনশাল্লাহ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আমি প্রার্থী হবো। মনোনয়ন চাইবো। নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছি। প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছি দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে।

তারা স্বতর্স্ফুতভাবে আমাকে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনারের সীমানা নির্ধারণের পূর্বে আমি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী ছিলাম এবং ১৮ সালের নির্বাচনে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলাম। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন আমাদের সাজানো রয়েছে। এই আসনে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সেখানেও যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় এটি নতুন জায়গা হবে না।

আবার নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে যেহেতু সিদ্ধিরগঞ্জের অবস্থান, এই সিদ্ধিরগঞ্জের সাধারণ মানুষের সাথে আমার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং এখানেও নির্বাচন করতে কোন কষ্ট হবে না। তাছাড়া সোনারগাঁয় আমার বিচরণ ও কর্মক্ষেত্র এবং দীর্ঘদিন যাবৎ আমি জেলার রাজনীতি করছি।

২০০৮ সালে জেলা যুবদলের সভাপতি হয়েছিলাম। ওই সময় সোনারগাঁসহ প্রত্যেকটি উপজেলায় সংগঠন গড়ে তুলেছি। সেই সকল নেতাকর্মীরা আজ নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। জনগণের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের সাথেও আমার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই সেখানেও আমার নির্বাচন করা কষ্টের হবে না বলে আমি মনে করছি।

কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, আমি রাজনীতির শুরু থেকেই বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী ও সমর্থক ছিলাম, এখনো আছি। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এ দল সর্বদা ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে।

দলের দুর্দিনে অসংখ্য মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। দল আমাকে মূল্যায়ন করলে আমি প্রতিটি মানুষের সুখ দুঃখের সাথী হতে চাই।  তবে আমাকে নিয়ে একটি মহল নানা অপপ্রচার করে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা করছে। সোনারগাঁয়ের মানুষ এ অপচেষ্টা প্রতিহত করবে ইনশাল্লাহ।

এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুন প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন, আমি ছাত্রাবস্থা থেকেই বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। নানা ত্যাগ তিতীক্ষার মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থানে এসেছি। সোনারগাঁবাসী আমাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসেন। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ধানের শীষকে জয়ী করে দলকে এর প্রতিদান দেব ইনশাল্লাহ।

সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি সংসদ সদস্য প্রার্থী আল মুজাহিদ মল্লিক বলেন, ১৯৮২ সালে ছাত্রদলের রাজনীতির মাধ্যমে আমি রাজনীতি শুরু করি। দলের দুঃসময়ে আমি মাঠে ছিলাম। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি সোনারগাঁয়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করবো। নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে পর্যাপ্ত পরিমান বরাদ্দ আনার চেষ্টা করবো।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহা-পরিচালক বিএনপি প্রার্থী এস এম ওয়ালিউর রহমান আপেল বলেন, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি সোনারগাঁকে আধুনিক, শিক্ষিত ও কর্মসংস্থানের শহর হিসেবে গড়ে তুলবো। সোনারগাঁয়ের প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় নদী, খাল দখল মুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যক্ষ ড. ইকবাল হুসাইন ভুইয়া বলেন, সোনারগাঁয়ের সব এলাকার এবং সব ধর্মের মানুষের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে আমি স্বোচ্চার রয়েছি। আমি আশা করি সোনারগাঁবাসী আমাকে জয়ী করে তাদের সেবা করার সুযোগ দিবে।

জাতীয় যুব শক্তির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তুহিন মাহমুদ বলেন, সোনারগাঁয়ের মানুষ পরিবর্তন ও অগ্রগতির পথে এগুতে চায়। আমরা জনগনের মতামত শুনেছি এবং তাদের বুঝার চেষ্টা করেছি। সাধারণ মানুষ তরুণ সমাজের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা এবং আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা সেই প্রত্যাশা পূরনে সচেষ্ট থাকবো।