নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

০৮ মে ২০২৪

র‌্যাবের হাতে বহুমুখী প্রতারক চক্রের মূলহোতা

প্রদীপ চন্দ্র গ্রেপ্তার হলেও অধরা সেই রেহানা

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০৬:৫৮, ২ জুন ২০২১

প্রদীপ চন্দ্র গ্রেপ্তার হলেও অধরা সেই রেহানা

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বহুমুখী প্রতারক চক্রের মূলহোতা প্রদীপ চন্দ্র বর্মণ গ্রেপ্তার হলেও অধরা হয়েছে আরেক অন্যতম প্রতারক কথিত মানবাধিকার নেত্রী আর টিএন ফেরদৌসী আক্তার রেহানা। যিনি ইতিমধ্যে সাঈদা আক্তারের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার আসামী। বর্তমানে পলাতক রয়েছে রেহানা।


র‌্যাব-১১ জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নামে প্রতারণার মূলহোতা সংগঠনের কথিত চেয়ারম্যান প্রদীপ চন্দ্র বর্মণকে এক সহযোগিসহ সোমবার (৩১ মে) বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন ফেরদৌসী আক্তার রেহানা। এবং সংগঠনের সহকারী পরিচালক হচ্ছেন আরেক দুর্ধর্ষ প্রতারক জহিরুল ইসলাম। তিনি রেহানার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচিত। যা জহিরুল ইসলামের সাবেক স্ত্রী সাঈদা আক্তার গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। 


 এদিকে র‌্যাব এবং কথিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সংগঠন দ্বারা প্রতারিত ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, ফেরদৌসী আক্তার রেহেনার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। ফেনসিডিল বিক্রির মাধ্যমে অন্ধকার জগতে হাতে খড়ি রেহানা আক্তার সময়ের পরিবর্তনে খোলস পাল্টে মানবাধিকার কর্মী সেজে মানব পাচার, বিচার শালিসীর নামে অর্থ আত্মসাৎ, ভূমী দস্যুতা, ব্ল্যাক মেইলিংসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমান সময়ে রেহানা আক্তারের এ সকল অপকর্মের দোসর হলো তার বয় ফেন্ড্র ও একই সংগঠনের সহকারী পরিচালক দুর্ধর্ষ প্রতারক জহিরুল ইসলাম।


তথ্য মতে, ফতুল্লার সস্তাপুরের মৃত সুলতান মিয়ার কন্যা ফেরদৌসী আক্তার রেহানা। বড় ভাই শফি এলাকায় রিক্সা চোর শফি ওরফে চোরা শফি নামে পরিচিত। অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া রেহানা আক্তার কিশোরী বয়স থেকেই অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ফেনসিডিল ব্যবসা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় রেহানা। তৎকালীন নারায়নগঞ্জ বারের প্রভাবশালী এডভোকেট মজিদ খন্দকার রেহানার হয়ে ফেনসিডিল মামলায় আইনী মোকাবেলা করেন এবং রেহানাকে জামিনে মুক্ত করেন। পরবর্তীতে মজিদ খন্দকারের অফিসে কাজ নেয় রেহানা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ বারের সিনিয়র এক আইনজীবী জানান, নারায়নগঞ্জ বারের এক আইনজীবীর সাথে আপত্তিকরবস্থায় ওই আইনজীবীর স্ত্রী হাতে নাতে ধরে ফেলে রেহানাকে এবং রেহানাকে প্রকাশ্যে জুতা পেটা করেন। যা অনেকেই সেদিন দেখেছেন। এরপর থেকে নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় রেহানাকে নিষিদ্ধ করা হয়।


নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র মতে, রেহানা একাধিক স্বামীর অধিকারী। তথ্য মতে, ফেরদৌসি আক্তার রেহানার প্রথম  স্বামীর নাম হাকিম। সে বর্তমানে কুতুবআইল রিক্সার মিস্ত্রীর কাজ করেন। সে সংসার ছেড়ে পরবর্তীতে বিয়ে করেন ঈমান আলী নামক এক ব্যক্তিকে। ইমান আলী মধ্যসস্তাপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। তার সাথে ফেনসিডিলের ব্যবসা করেন। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে মাদক মামলায় জেলখাটেন ইমান আলী। রেহানার এ সংসারে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। পরে নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপার আরমান নামে এক ছেলেকে বিয়ে করেন । তার সংসারে এক মেয়ে রয়েছে রেহানার। বিদেশেও থেকেছে বেশ কয়েক বছর। তার স্থায়ী কোন ব্যবসা নেই। দেহ ব্যবসা আর ব্লাকমেইলিং করে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। কোতালেরবাগ এলাকায় একটি বহুতল ভবনের বাড়ি, সস্তাপুর এলাকায় একটি বহুতল ভবনের বাড়ি, সোনারগাঁও এবং রূপগঞ্জে কয়েকটি প্লট কিনেছেন। বর্তমানে কুমিল্লার এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছে বলে প্রচার রয়েছে। তাছাড়া একই সংগঠনের ফতুল্লার তক্কার মাঠের জহিরুল ইসলাম নামক অপর এক প্রতারকের সাথে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। প্রায় সময় তারা দুজন লং ড্রাইভে যায় এমনকি বিভিন্ন কটেজেও রাত্রী যাপন করে থাকে বলে সবার মুখে মুখে। 


বর্তমানে রেহানা তার বয়ফ্রেন্ড জহিরুল ইসলামকে নিয়েই প্রতারণা ফাঁদ পেতে সাধারণ মানুষদের হয়রানী করে আসছে বলে অভিযাগ রয়েছে। মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শহর জুড়ে দাবড়িয়ে বেড়াতো তারা দুইজন। নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি জেলাতে এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন।


এদিকে, প্রদীপ চন্দ্র বর্মণ ও আনিসুর রহমান গ্রেফতারের পর দ্রুত ফেরদৌসী আক্তার রেহানা ও জহিরুল ইসলামকে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।
 

সম্পর্কিত বিষয়: