নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪

নৌযান শ্রমিকদের আলটিমেটাম, জাহাজ চলাচল বন্ধের হুশিয়ারী

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২৩:১৮, ৩১ মে ২০২৩

নৌযান শ্রমিকদের আলটিমেটাম, জাহাজ চলাচল বন্ধের হুশিয়ারী

আগামী ১০ জুনের মধ্যে নৌ শ্রমিকদের নতুন মজুরী কাঠামো অনুযায়ী বকেয়া বেতন ও বোনাস প্রদানের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা।

 

সরকার কর্তৃক ঘোষিত নতুন মজুরী কাঠামোর গেজেট অনুযায়ী যেসকল নৌযান মালিকরা শ্রমিকদের মজুরী প্রদান করবে না আগামী ১০ জুনের পর থেকে ওইসব নৌযান শ্রমিকরা চালাবেনা বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন তারা।

 

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে জেল জুলুমের শিকার হলেও তারা আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন তারা। শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করার মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কতিপয় মালিক সমিতির নেতারা ষড়যন্ত্র করছেন বলেও তারা দাবী করেন। 


বুধবার ৩১ মে সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বক্তারা।  

 

মানববন্ধন থেকে নৌ শ্রমিকদের ২০১৬ সালের ঘোষিত মজুরী স্কেল থেকে বর্তমানে মূল মজুরী ৬০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করে নতুন মজুরী কাঠামোর গেজেট গত ৩০ মার্চ প্রকাশ করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নেতাকর্মীরা।

 

পাশাপাশি ৫ দফা দাবী উত্থাপন করা হয়। দাবীসমূহ হলো, ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ সরকার কর্তৃক ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী ৭ মাসের বকেয়া বেতন, এরিয়া বেতনসহ সকল পাওনা চলতি মাসের বেতনের সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে।

 

ভারত বাংলাদেশ নৌ প্রটোকল রুটে চলাচলকারী জাহাজে শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস, কাস্টমস কর্তৃক হয়রানি বন্ধ, ভারতের সীমানায় চিকিৎসাসহ নানা সমস্যা সমাধান করতে হবে। চট্টগ্রামগামী লাইটারেজ জাহাজে অবৈধ সিরিয়ালের নামে বিভিন্ন এলাকায় হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

 

নৌপথে চাঁদাবাজি,  ডাকাতি, হয়রানি, জাল ফেলো নৌ চ্যানেল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও মাস্টার ড্রাইভারশীপ পরীক্ষার অনিয়ম দুর্নীতি এবং শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সর্বশেষ হাতিয়ার ধর্মঘট যা আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত ও ধর্মঘট নিষিদ্ধের পরিসেবা বিল প্রত্যাহার করতে হবে। 


মানববন্ধনে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার।

 

সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা জুয়েল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা রাফিয়ান আহমেদ, জাকির হোসেন চুন্নু মাষ্টার, মোস্তাফিজুর রহমান, কবির হোসেন, আক্তার হোসেন, ভারত লাইটারেজ প্রটোকল শাখার নেতা জাহাঙ্গীর আলম দয়াল, আজগর তালুকদার, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের মুন্সিগঞ্জ শাখার সেক্রেটারী ফারুক ইসলাম,  গোদনাইল শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতা হাফেজ শাহাদাৎ হোসেন, পান্না মিয়া  প্রমুখ।


সবুজ শিকদার বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে বর্তমানে নৌ শ্রমিকরা মাত্র ৯ হাজার টাকা মজুরী দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছে। অথচ অনেক জাহাজ মালিক রয়েছেন যারা গত ৫ বছরে একটি জাহাজ থেকে ৫টি জাহাজের মালিক হয়েছেন।

 

আমি এমন একজনকে চিনি যিনি ৫ বছর আগে তেলচোর হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। এখন ৫ টি জাহাজের মালিকের পাশাপাশি মালিক সমিতির নেতাও হয়েছেন। সরকার সবদিক বিবেচনা করে সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই ৬০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করে নতুন মজুরী কাঠামোর গেজেট ঘোষণা করেছেন।

 

কিন্তু ওইসব তথাকথিগ মালিক সমিতির ষড়যন্ত্রকারী নেতা চুরির পয়সায় নেতা হয়েছেন যারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চায়। চলতি বছরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অথচ এসব মালিক সমিতির নামধারী নেতা শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।

 

আমরা এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ডের প্রতি ধিক্কার জানাই। ওইসব ষড়যন্ত্রকারী মালিক সমিতির নেতাদের এখনই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। 


আগামী ১০ জুনের মধ্যে সরকার কর্তৃক গেজেটকৃত মজুরী কাঠামো অনুযায়ী শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বোনাস প্রদান করতে হবে। যদি মালিকপক্ষের ষড়যন্ত্রের কারণে শ্রমিকার তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত থাকে এজন্য কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায়ভার ষড়যন্ত্রকারী মালিক সমিতির নেতাদের।

 

যেসব মালিকরা শ্রমিকদের নতুন মজুরী কাঠামো অনুযায়ী মজুরী প্রদান করবে না আগামী ১০ জুনের পর থেকে ওইসব নৌযান মালিকদের নৌযান শ্রমিকরা চালাবেনা। 


শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। নতুন গেজেটকৃত মজুরী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। যদি আপনাদের অধিকার আদায়ে জেল খাটতে হয় জীবন দিতে হয় তাতেও আমরা আন্দোলন থেকে পিছু হটবোনা। 


মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গিয়ে শেষ হয়।

সম্পর্কিত বিষয়: