
বৃষ্টিতে বিপন্ন হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর পানিবন্দি মানুসের জীবনযাত্রা। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকে শুরু হওয়া টানা ভারি বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর প্রায় সব এলাকা।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার প্রবল বর্ষণে শহরের প্রধান সড়ক বিবি রোডসহ আশপাশের অলিগলি ও মহল্লায় জমেছে হাঁট সমান পানি।
জলাবদ্ধতায় থমকে গেছে শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। রাস্তায় বের হয়ে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন শ্রমজীবী মানুষ ও অফিসগামী নাগরিকরা।
মহল্লায় মহল্লায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতায় তৈরী হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। হাঁটু পানির কারণে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে কোন যানবাহন চলতে পারছেনা। অধিকাংশ যানবাহন থেমে আছে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকেছে। অটো রিক্সার চার্জ ফুরিয়েছে। বেশ বেকায়দায় পড়েছে শ্রমজীবি মানুষজন।
বিকেলে শহরের চাষাঢ়া, দেওভোগ, বাবুরাইল, খানপুর, বাংলাবাজার, নিতাইগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, কোথাও রিকশা চলছে ঠেলেঠুলে, কোথাও আবার অটো রিকশা ও মোটরসাইকেল একেবারে অচল হয়ে পড়ে আছে। বিবি রোডের মতো শহরের প্রধান সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় পানি জমে থাকার কারণে।
চাষাঢ়া মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী বলেন, বৃষ্টি কমে গেছে অনেকক্ষণ, কিন্তু এখনও রাস্তায় পানি। ঘরে ফিরতে রিকশা পাচ্ছি না। পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে পথে পথেই পানি।
শুধু যানবাহন নয়, বহু বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে ড্রেনের পানি। নিচতলার ঘরবাড়ি, দোকানপাটে উঠে এসেছে নোংরা পানি। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার কারণে।
দেওভোগের বাসিন্দা ও রিকশাচালক সোহেল মিয়া বলেন, চার্জ শেষ, গ্যারেজও যেতে পারছি না। পানি ঢুকে গেছে ব্যাটারির ভিতরে। এখন ঠেলে নিয়ে যেতে হবে। কাজ কাম নেই আজ।
এদিকে, সন্ধ্যার পর বৃষ্টির পানি কিছুটা নামলেও অনেক এলাকায় এখনও স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে বহু মানুষকে দেখা গেছে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাঁটু পানির ভিতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পলিথিন জড়িয়ে শরীর ঢেকে বৃষ্টির ভিতরেই বাসার পথে রওনা দিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) সূত্রে জানা গেছে, শহরের অধিকাংশ এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুরবস্থা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে প্রতি বছরই বর্ষাকালে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু দৃশ্যত তার কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান এখনও দৃশ্যমান নয়।
বর্তমানের এ সমস্যা দুর করতে শহর এলাকায় ৭ কিলোমিটার বর্জ্য ও পানি নিষ্কাশন ড্রেন নির্মানের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে।
নাসিকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের ড্রেনগুলো অধিকাংশ জায়গায় বন্ধ হয়ে আছে। জনগণ নিজেরা ড্রেনে ময়লা ফেলে, সেটাও একটা বড় সমস্যা। তবে নতুন ড্রেন নির্মানের কাজ শেষ হলে শহরে আর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবেনা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেনের প্রশাসক এইচ এম কামরুজ্জামান নগরবাসীর দুর্ভোগের জন্য দু:খ প্রকাশ করে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ড্রেন নির্মানের কাজ শেষ করার।
তবে কবে নাখাদ এ সমস্যার সমাধান হতে পারে কেউ কোন মত প্রকাশ করেননি। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সামনের কয়েকদিনেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।