গণসংহতি আন্দোলন জেলা ও মহানগর কমিটি আয়োজিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী 'কেমন নারায়ণগঞ্জ চাই' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর,) সকাল ১১ টায় আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগার ও নগর মিলনায়তন এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন তরিকুল সুজন। মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীরা বলেন, আগামীর নারায়ণগঞ্জ হবে জবাবদিহিতামূলক-ভয়মুক্ত-নিরাপদ এবং সকল নাগরিকের সুযোগের সমানাধিকারের নারায়ণগঞ্জ।
শিক্ষার্থীরা শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রুট পারমিটহীন এবং ফিটনেসবিহীন বাস চিহ্নিত করে ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং রাস্তা দখল করে পার্কিং বন্ধ করার দিকে জোর মনোযোগ দেয়। একই সাথে ছাত্ররা বাস ভাড়া কমানোর জন্য ডিসি এবং বাস মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। সরকারী এবং প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ঘুষ-দুর্নীর্তি-সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি এবং প্রাইভেট ডাক্তারদের ভিজিট কমানোর দিকেও তারা জোড়ালো দাবি তোলেন। একই সাথে ডাক্তারদের অতিরিক্ত টেষ্ট এবং টেষ্ট বানিজ্যকে সর্তকীকরণ করা হয়। প্রশাসনকে নিয়মিত জবাবদিহিতা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে অতীতেও মাদক-সন্ত্রাস-দখল-লুটপাট পরিচালিত হয়েছে এবং এখনো নতুন পরিচয়ে একই কাজ চলছে জানিয়ে শিক্ষার্থীরা গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা বলেন, নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘ ১৭ বছর গুম-খুন সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে স্বৈরাচার হটিয়ে নতুন দিনের সূচনা করেছে। এখন দরকার রাষ্ট্রের পুর্নগঠন। নারায়ণগঞ্জের পুর্নগঠন রাষ্ট্রের পুর্নগঠনের সাথেই যুক্ত। আমরা ছাত্ররা এই পুর্নগঠনের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকবো। শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আমরা ছাত্ররা এক তিলও ছাড় দিবো না। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ পর্ষদ গঠন করে শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাশ নির্ধারণ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জে একটি পূনাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, বাংলাদেশের জনপদের ইতিহাস সর্বদাই সংগ্রামের ইতিহাস। আমরা দেখেছি ৫২,৭১,৯০ সালে যে ভাবে জনগণের জাগরণ ঘটেছে ঠিক সেরকম ভাবেই ২৪'এও ঘটেছে। স্বাধীনতা অর্জন করলেও আমরা তা রক্ষা করতে পারিনি ইতিহাস সাক্ষী। ছাত্রদের কাজ বাজার মনিটরিং বা ট্রাফিকিং না হলেও তাদের কাজ হলো যারা এই কাজগুলো করছে তাদের জবাবদিহিতা নেওয়া। আমাদের শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানানো হয়েছে,ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। সমস্ত পাঠ্যবই থেকে অন্যান্য সমস্ত আন্দোলনের ইতিহাস নাই করে দেওয়া হয়েছে,এবং এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধসহ অন্যান্য লড়াই সংগ্রামের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে। ৭১ নবায়ন হয়েছে ২৪ শে এসে। বাংলাদেশের ইতিহাসের উপর আমাদের দাঁড়াতে হবে। আমরা ২৪ শে এসে গণতান্ত্রিক রুপান্তর এর দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছে গেছি। শিক্ষকের বেতন বাড়ালে তারা সঠিকভাবে শিক্ষাদান করবে।তাদেরকে সঠিক মর্যাদা দিতে হবে। নতুন শিক্ষাপদ্ধতির জন্য অন্তত ২ বছর প্রত্যেকটা শিক্ষকের ট্রেনিং প্রয়োজন। নতুন কোনো শেখ হাসিনা তৈরি হতে দেওয়া যাবেনা। আর এজন্য সমস্ত ডামি শেখ হাসিনা ধ্বংস করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ এ আগে দরকার প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তন। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তনের একটা রাস্তা সুগম হয়েছে এখন প্রয়োজন দুর্গন্ধমুক্ত সুস্থ পরিবেশ। গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, আগামী নারায়ণগঞ্জ হবে জবাবদিহিতামূলক-ভয়মুক্ত-নিরাপদ এবং সকল নাগরিকের সুযোগের সমানাধিকার নারায়ণগঞ্জ। ভয়মুক্ত নারায়ণগঞ্জ চাইলে আমাদেরকে ভাইমুক্ত নারায়ণগঞ্জ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেউ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক থাকবেনা।
এছাড়াও দরকার গণস্বাস্থ্যের গণতদন্ত। এই লক্ষ্যে ভিক্টোরিয়া এবং খানপুর হাসপাতালের সামনে ৩/৪ দিনের একটা ক্যাম্প করা দরকার এবং তার মধ্য দিয়ে ডাক্তার অতিরিক্ত টেস্ট দিলো কিনা,কেউ দূর্নীতি করলো কিনা,অতিরিক্ত টাকা নিলো কিনা সেবিষয়ে নজরদারি করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ অনেক ছোট্ট শহর। এই শহরে যানজটের কারণ সড়কের তুলনায় পরিবহন বেশি। এবং বেশিরভাগ বাসের রুট পারমিট নাই,ফিটনেস নাই। এইসকল গাড়িকে ডাম্পিং করার ব্যবস্থা করতে হবে। মার্কেটে এবং অন্যান্য স্থানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ এর প্রয়োজনীয় স্থানে দরকার আন্ডারপাস। আমরা আর কোনো স্বৈরাচারকে রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখতে চাই না। ছাত্রদের ঐক্য ও সংহতি বহাল রাখলেই বাংলাদেশ বাসযোগ্য হবে। নারায়ণগঞ্জ বাসযোগ্য হবে, মানুষের হবে।
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব, নির্বাহী সমন্বয়কারী পপি রানী সরকার, জেলা কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন আলম, আবদুল আল মামুন, সিদ্ধিরগঞ্জ কমিটির মাহমুদ কলি হারুন, জিয়াউর রহমান জয়, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান, সৌরভ সেন, সাধারণ সম্পাদক সৃজয় সাহা প্রমুখ।