নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

১৮ এপ্রিল ২০২৪

রমজানের শুরু থেকেই বাড়ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যানজট, দুর্ভোগ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৯:৪০, ২৮ মার্চ ২০২৩

রমজানের শুরু থেকেই বাড়ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যানজট, দুর্ভোগ

ঢাকা-পাগলা-ফতুল্লা পুরাতন সড়কের যানজট নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তবে রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে যানজটের মাত্রাটা যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে।


সরকারি বন্ধের দিনেও ঢাকা-পাগলা-ফতুল্লার পুরাতন সড়কে দেখা গেছে দিনভর যানজট। প্রধান সড়কের যানজটের প্রভাব আবার শাখা সড়কগুলোতে পরেছে। সংযুক্ত প্রতিটি সড়কেই ছিলো যানজট।


প্রত্যেকটি রাস্তার মোড়ে মোড় ব্যাটারী চালিতদ মিশুক, অটোরিক্সার  পার্কিং ও যাত্রী ওঠা নামার কারণে এই যানজটের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।


পঞ্চবটী মোড়ে দেখা যায়, ঢাকা-পাগলা- নারায়নগঞ্জ রুটের  যাত্রীবাহী বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এসব বাস দিনের অধিকাংশ সময়ই এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যানজটকে আরও বাড়িয়েছে ব্যস্ত সড়কে অবৈধ পার্কিং। 


একই সাথে বক্তাবলী, মুক্তারপুর, পাগলা, চাষাড়া যাতায়াতের জন্য মোড়ের চারটি পয়েন্টে রয়েছে অবৈধ মিশুক, অটোরিক্সার স্ট্যান্ড। এই অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য যানজট আরও বাড়ছে। 


এ রাস্তার  প্রায় সব রাস্তাই এখন ভ্রম্যমাণ দোকানদারদের দখলে। এতে যানজট বেড়েই যাচ্ছে। যানজটের কারণে যথেষ্ট সময় নিয়ে বেরিয়েও বাসায় বা নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে ফিরতে হচ্ছে বেশ দেরীতে ।

 

গত সপ্তাহের মতো চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে কর্মব্যস্ত মানুষকে। নিয়মিত যারা অফিসে যান তাদেরকে যানজট পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 


এমনকি যানজটের ভয়াবহতা মূল রাস্তা থেকে গিয়ে নগরীর অলি-গলির রাস্তায় সৃষ্টি করে যানবাহনের জটলা। দৈনন্দিন এই যানজটে প্রতিনিয়ত আটকে থেকে স্থানীয়বাসীদের অস্বস্তির জীবনযাপন পার করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কর্মজীবী যাত্রী ও পথচারীদের ক্ষোভ অন্যদিকে যানবাহন চালকরাও জানিয়েছে তাদের অস্বস্তির কথা।


সড়কটির পুরোটা জুড়েই ফুটপাথ দখল করে নানা দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয় বসে রয়েছে অবৈধ দখলদারেরা। তাছাড়া প্রধান সড়ক সহ শাখা সড়কগুলোতে চলমান রয়েছে সরকার উন্নয়নের বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজও। সব মিলিয়ে সড়কের যানজটের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।


ঢাকা-পাগলা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের ফতুল্লার পাগলা, পোস্ট অফিস রোড, ফতুল্লা বাজার, পঞ্চবটী মোড়, লোহার মার্কেট, মাসদাইর এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকেই তীব্র যানজটের দেখা যায়। এসব পয়েন্টে যানজট ছাড়লেও আবার জটলা তৈরি হতে দেখা যায়। সকাল থেকেই গতিহীন ছিল পোস্ট অফিস রোড থেকে পঞ্চবটী  পর্যন্ত সড়কে চলা যানবাহনগুলো।

 

এ রাস্তায় গাড়ি যেন চলতেই চায়না। রাস্তায় গাড়ির চাকা ঘুরতে সময় নিয়েছে ঘণ্টারও বেশি। এই যানজটে বসে থেকে অধিকাংশ মানুষ সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। 


পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা বলছেন, সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সেই তুলনায় রাস্তা নেই। যানবাহন বাড়ার মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মালবাহী কন্টেইনার, সংখ্যা অনেকাংশে বেড়েছে। 


গণপরিবহন চালকরা সড়কে নিয়ম অনুযায়ী চলাচল না করা সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশেই  সিএনজি বেবি, মিশুক, অটোরিক্সা অবৈধ ভাবে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। এতেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।


এ রাস্তায় প্রতিদিন যাতায়াতকারী বলছেন, প্রতিদিন সকালে থেকে সড়কে যানজটে পড়তে হয়। সন্তানদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।

 

সড়কের যানজট এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে হাতে সময় নিয়ে বের হলেও সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। দিনের অনেকটা সময় এই যানজটের কারণেই নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও গরমে ও তীব্র যানজটে আটকা পড়ে থেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বলতা চলে আসে।


এক পথচারী বলেন, সড়কে প্রচণ্ড যানজট। কোন গাড়ির চালকই কথা শুনে না। যে যার মতো চালাচ্ছেন গাড়ি। রাস্তার পাশে ফুটপাথ দখল করে বসানো হয়েছে দোকান। এসব রাস্তা এখন হকার ব্যবসায়ীদের দখলে। এ কারণে রাত পর্যন্ত বেশিরভাগ রাস্তায়ই যানজট লেগে থাকে।


বিসিকস্থ একটি গার্মেন্টেসে চাকুরিরত স্বপন মিয়া বলেন, প্রতিদিন বাসা থেকে বের হলেই রাস্তায় যানজটে পড়তে হয়। যানজট পেড়িয়ে গার্মেন্টসে গেলে আর কাজ করার ইচ্ছা হয়না। এমনভাবে চলতে থাকলে এক সময় আমাদের কাজের প্রতি অনিহা চলে আসবে। 


পঞ্চবটীস্থ একটি মার্কটের  এক কাপড় ব্যবসায়ী যানজটের কারণে ব্যবসায় লোকসান গুনতে হয়। ঈদের আগের সময়ে যদি ভালো বেচাকেনা করতে না পারি তাহলে আর করার সুযোগ নেই।


পাগলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান জানান, ঢাকা- পাগলা সড়কের যানজট নতুন কিছু নয়। এটা নৈমেত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। 


এ রাস্তায় মান্ষু সহজে যাতায়ত করতে চায়না। ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে আটকে থাকতে হয় এ রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রীদের।বড় রাস্তার জ্যামে প্রভাব শাখা রাস্তাগুলোতে জ্যামের সৃস্টি করে। 


এবিষয় নিয়ে তিনি স্থানীয় জনপ্রিতিনিধিদের অবগত করেছেন।যানজটের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তিনি আরো জানান পাগলা-জালকুড়ি সড়কে আপাতত কাজ চলছে। ফলে যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। 


এ বিষয়ে ও বাজারের পক্ষ থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান কে জানানো হয়েছে। যানজট নিরসনে বাজার সমিতির পক্ষ থেকে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন না কোন পদক্ষেপ গ্রহন করদ হয়নি।


ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ফুটপাথকে এখনো পথচারীবান্ধব করা যায়নি। পথচারীরা ফুটপাথে হাটতে না পেরে প্রধান সড়ক দিয়ে হাটে ফলে প্রায় সময় সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হতে হয় পথচারীদেরকে।রাস্তার উভয় পাশে  রাস্তা দখল করে রাখে ব্যার্টারীচালিত মিশুক, অটোরিক্সা। দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মিশুক, অটোরিক্সার সংখ্যা। একই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে যানজট।


ফতুল্লা মডেল থানার ইনচার্জ শেখ রিজাউল হক দিপু জানান, যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের সাথে কাজ করবে ফত্ল্লুা পুলিশ। একই সাথে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করবে পুলিশ। আশা করি এতে যানজট দ্রুত নিরসন হবে। 


এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের টি. আই (এডমিন)  আঃ করিম শেখ জানান, যানজট নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকা- নারায়নগঞ্জ-পাগলা সড়কে যানজটের বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। 


সড়কটি এমনিতেই চিকন এর উপর শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বড় বড় কভার ভ্যান গাড়ী, সিমেন্টের গাড়ী এ রাস্তার যানজটের অন্যতম কারন।  


তাছাড়া দিনের তিনটি সময় বিশেষ করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শ্রমিকদের কাজে যোগদান, বিরতি ও ছুটির সময় যানজট লাগে। সেটা নিয়মিত যানজট বলে তিনি দাবী করেন। রোজার মধ্যে যাতে করে যানজট মুক্ত রাখা যায় সেক্ষত্রে পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশ নিয়ে কাজ করার কথা বলেন তিনি।
 

সম্পর্কিত বিষয়: