নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

সোমবার,

২৯ এপ্রিল ২০২৪

একাধিক সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

সিদ্ধিরগঞ্জে সড়কের পাশে সওজ’র জায়গা দখলমুক্ত হচ্ছেনা

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:৫৩, ১৬ মে ২০২৩

সিদ্ধিরগঞ্জে সড়কের পাশে সওজ’র জায়গা দখলমুক্ত হচ্ছেনা

সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ ভূমিপল্লি থেকে আদমজী ইপিজেড পর্যন্ত চাষাড়া-চিটাগাংরোডগামী সড়কটির একপাশে বাইলেনসহ সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান-পাট। 


নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ উক্ত জায়গা নিজেদের দাবি করলেও অদৃশ্য কারণে এসব জায়গা দখলমুক্ত করছেনা। বছরের পর বছর ধরে নির্বিঘ্নে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এগুলোকে কেন্দ্র কেন্দ্র করে ক্ষমতাশীল দলের নাম ভাঙ্গিয়ে একাধিক সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। 


এদিকে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনাকে কেন্দ্র করে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বেড়েছে সড়কে তীব্র যানজট, ছিনতাই, চুরিসহ মাদক সেবীদের আড্ডা, মাদক সেবন ও সরবরাহ। ফলে চরম ভোগান্তীর শিকার হচ্ছেন আদমজী ইপিজেডের কর্মজীবি লক্ষাধীক পোশাক শ্রমিকসহ সিদ্ধিরগঞ্জবাসী।


সরেজমিনে দেখা গেছে, শিমরাইল-চাষাড়া সড়কের পূর্বপাশে রিক্সা ও পথচারী চলাচলের বাইলেন রাস্তা দখল করে রঙধনু সিনেমা হল এলাকায় চলছে ইট-বালু-রড-সিমেন্টের ব্যবসা। বাইলেনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ইট ও বালুর স্তুপ।

 

সিএনজি সহ ছোট ছোট যানবাহনের ওয়ার্কসপের দোকানের সামনে বাইলেন দখল করে চলছে এসব যানের মেরামতের কাজ। ফার্নিচারের দোকানের সামনে চলছে ফার্নিচারের সংস্কার কাজ। মেঘনা লাইমস নামে চুনা কারখানার চুনাপাথর দিয়ে স্তুপাকারে বাইলেন দখল করে রাখা হয়েছে।


সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশন থেকে আদমজী ইপিজেডস্থ রেমি গার্মেন্ট এর সামনে বাইলেন দখল করে গড়ে উঠেছে ভাসমান বাজার।

 

সেখানে অস্থায়ী দোকানদাররা কসমেটিক, কাচা বাজার, ফলমূল, জামাকাপড়ের দোকান বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি মহলকে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করে আসছে। এর ফলে এ এলাকায় গার্মেন্ট ছুটি হলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তীতে পড়ে পোশাক কারখানার লাখো শ্রমিক।


আদমজী ইপিজেড এর প্রধান ফটকের সামনে থেকে আদমজী কোমল মিনিবাস কাউন্টার পর্যন্ত স্থানীয় এক রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতার শেল্টারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারী জমি দখল করে একটি চক্র গড়ে তুলেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা।

 

এসব স্থাপনায় দোকান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দিয়ে এককালিন মোটা অংক ও মাসিক হারে আড়াই লাখেরও বেশি টাকা ভাড়া হিসেবে তুলছে চক্রটি।


আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথের জায়গায় দখল করে প্রায় ২৬টির বেশি দোকান-পাট গড়ে তোলা হয়েছে।

 

এগুলো ভাড়া নিয়ে দোকানদাররা চা-সিগারেট-পান, খাবারের হোটেল, কনফেকশনারী, মটর সাইকেল গ্যারেজ, পরিবহন কাউন্টার, অকটেন-পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ বিক্রি করছে। ফলে এর আশেপাশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিনিয়ত জনসমাগম লেগেই থাকছে।


অবৈধ এসব স্থাপনায় কালামের ডলফিন এক্সপ্রেস ও রেন্ট-এ কার, জাহাঙ্গীরের নিউ অন্তরা ক্ল্যাসিক, মনিরের নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলস, শাহাজালালের কোমল মিনিবাস সার্ভিস এর পরিবহন কাউন্টার স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে।

 

যার কারণে আদমজী-চাষাঢ়া সড়কের দুই পাশে নিয়মিত এসব পরিবহনের অবৈধ পার্কিং দেখা যায়। ফলে সড়কটিতে নিয়মিত যানজটের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। এছাড়া আশেপাশে বেড়েছে মাদক সেবন, সরবরাহ, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত ১০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব ব্যবসায়িক স্থাপনা। চিটাগাংরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া যাওয়ার পথে সড়কের পূর্ব পাশে আদমজী ইপিজেড এর দেয়াল ঘেষে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি জমি দখল করে এসব দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।


দখল করা জায়গায় নির্মিত এসব দোকান-ঘর সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি ও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী স্থানীয় এক নেতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জায়গায় নির্মাণ করা এসব দোকান ভাড়া দিয়েছে মোহম্মদ আলী, মিলন, ইসমাইল, সেলিম মজুমদার, এসও সেলিম, বাবুল, ইব্রাহীম, ইপিজেড সেলিম, ফারুক, জসিম, কাদির, মাসুদ, শহিদুল্লাহ’সহ আরো বেশ কয়েকজন। তবে দোকানদারদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ভাড়া তোলেন মোহম্মদ আলী ও মিলন।


মোহম্মদ আলী দাবি করেন, ২০১২ সালে ১৮০ বর্গফুট জায়গা রেলওয়ে থেকে লিজ নিয়ে উক্ত জায়গায় মার্কেট করে ভাড়া দিয়েছেন। তার কাছে লিজের কাগজপত্র আছে।


তবে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জানান, জায়গাটি বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। পূর্বে এটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ছিল। অভিযুক্তরা দাবি করছেন তাদের নামে উক্ত জায়গাটি লিজ নেওয়া। 


পূর্বে জায়গাটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের থাকায় লিজের বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তবে তাদেরকে কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা আসেনি।


এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এত বছর ধরে অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে এই দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে টাকা উত্তোলণ করছেন। 


বিগত ১০ বছর ধরে সরকারি জমি দখল করে চলছে এই অবৈধ বাণিজ্য ও মাসিক চাঁদা উত্তোলণ। চক্রটি নিজেদের ইচ্ছামতো ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন আবার বিক্রি করছেন।

 

তারা দোকানের জামানত বাবদ ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ করে টাকা নিয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা করে ভাড়া আদায় করছে।


এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সংলগ্ন থোকে আদমজী সোনামিয়া বাজার পর্যন্ত বাইলেন দখল করে ফার্নিচার দোকান সহ চলছে অসংখ্য দোকানপাটের কার্যক্রম।