নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

সোমবার,

২৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিদিন ১০০, ২০০ করে বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে

সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে রাস্তা দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি, দূর্ভোগ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:৩৩, ১০ মার্চ ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে রাস্তা দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি, দূর্ভোগ

সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে ডিএনডির ভরাট করা জায়গাসহ সাধারণ মানুষের চলাফেরা ও বিভিন্ন যান চলাচলের রাস্তা দখল করে দোকান বসিয়ে পুলিশ-সাংবাদিকের নামে নির্বিঘ্নে চাঁদা উত্তলন করছে একটি চক্র। এতে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষদের নিত্য যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের আত্নীয় স্বজন পরিচয়দানকারী কতিপয় ব্যক্তি তারা কেউ ভাতিজা, ভাগিনা, নাতি পরিচয়ে এ চাঁদাবাজি বরছে। এমনকি এক বিএনপি নেতাও ভাগিনা পরিচয়ে এসব অপকর্ম করে সর্বত্র সমালোচিত। 

চাঁদাবাজি ছাড়াও তাদের ভুমিদস্যুতা, দখল-বেদখলের মধ্যস্থাকারীসহ কমিশন বানিজ্যের নানা অপকর্মে অতিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক, চালক, শ্রমিক ও এলাকার সাধারণ মানুষ।   

জানাগেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করে গড়ে তুলেছে বিশাল বাহিনী।

এ চক্রটি সাংবাদিক ও পুলিশ ম্যনেজ করার কথা বলে দেড় শাতাধিক দোকান থেকে প্রতিদিন দোকানের সাইজ ও পজিশন অনুসারে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে গড়ে ২০ হাজারেরও অধিক টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। যা বছরে প্রায় পৌনে ১ কোটি টাকায় গিয়ে দাড়ায়।

এছাড়া দোকান বসানো বাবদ প্রতি দোকান থেকে ১০ হাজার হতে শুরু করে পজিশন অনুসারে ৫০ হাজারও নিয়ে থাকে এ চক্রটি। 

অভিযোগ রয়েছে এলাকায় কারো জমি-বাড়ি বিক্রি করলে আবার কিনলেও এ চক্রটিকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকায় ডিএনডি খালের উপরে ও নিচে সরকারী জায়গা দখল করে ফুটপাতে ও রাস্তার উপরে দোকান বসিয়ে পুলিশ-সাংবাদিকদের নামে-বেনামে ফুটপাত থেকে টাকা উঠিয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় চাঁদাবাজ ভান্ডারি গুলজার, তার ছেলে রাসেল, খাজা মার্কেটের মালিক জয়নাল আবেদীন তার মার্কেটের সামনে রাস্তা দখল করে চাঁদা উত্তলন করছে।

আজহার মার্কেটের সামনে রাস্তা দখল করে চাঁদা উত্তলন করছে মার্কেটের ম্যানাজার, রাস্তা দখল করে চাঁদা উত্তলন করছে ভাতিজা কামরুল, ভাতিজা সালাউদ্দিন, নাসিক ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন ওরফে ভাগিনা সালাউদ্দিন, তার ছোট ভাই কামালসহ স্থানীয় আরও অন্যান্য ব্যক্তি রয়েছে এই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটে। 

পুলের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম চারো দিকে যেসব দোকান রয়েছে তারা সকলের আলাদা আলাদা ভাগ করে নিয়েছে। এমনকি রাস্তার পাশে একটি ভ্যান গাড়ি দাড়ালেও ২০, ৩০, ৫০ টাকা পর্যন্ত হুমকি-ধমকি, ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে। 

চাঁদাবাজরা সারাদিন এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যা হলে ফুটপাতের দোকানদারদের কাছ থেকে অভিনব কৌশলে দোকানের কাস্টমার/ক্রেতা সেজে টাকা উঠায়। প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলে। একেক দোকানের জায়গার ভারা একেক রকম।

আবার কেউ ডিএনডি খালের উপরে দোকান প্রতি দোকান থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে প্রতিদিন। এতে আবার কারেন্ট/বিদ্যুৎ বিল ও পানির বিল আলাদা উত্তলন করে।

এদিকে গত ৪ মার্চ দেশ রুপান্তর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে “সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মজিবুর রহমান বক্তব্যে বলেছেন চাঁদাবাজদের কারণে আমার এলাকার (নাসিক সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ড) মানুষ শান্তিতে নাই। 

মানুষজন অনেক কষ্টের বিনিময়ে অল্প কিছু জমি কিনে বাড়ি বা মার্কেট করতে গেলে তাদের থেকে জোরপূর্বক চাঁদা বা কাজ (রড, ইট, বালু সরবরাহ) করার অনুমতি চাওয়া হয়। বাড়িঘর করতে গেলে কেন? 

তাদের থেকে ইটা-বালু নিতে হবে অথবা নগদ অর্থ দিতে হবে? আমরা এই সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজদের চাই না। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী এবং জননেতা একে এম শামীম ওসমান স্পষ্টভাবে বলেছেন জনসাধারণকে হয়রানি করা যাবে না।

কিন্তু তাদের কথা অমান্য করে কিছু লোক তা করে যাচ্ছে। এরা কারা? এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের মধ্যে যদি আমার লোক থাকে তাদরে ধরেন”।

ব্যবসায়ী ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, আমাদের এখানে ব্যবসা করতে হয়, সংসার চালাই, ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখা করাই। তাই চাঁদাবাজদের ভয়ে কিছু বলতে পারিনা, বললে এখান থেকে উঠিয়ে দেবে আমরা কি করমু। আমাদের বাধ্য হয়ে তাদের টাকা দিতে হয়। 

এখানেই আমাদের থাকতে হবে, আমাদের ছেলে-মেয়ে আছে, আমরা কার কাছে যাবো, প্রতিবাদ করতে গেলে, কোন ধরনের বড় সমস্যা হলে কে বা আমাদের দেখে রাখবে।

এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও একটি সূত্র জানায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের আত্মীয়-স্বজন পরিচয়ে সিদ্ধিরগঞ্জপুলসহ বিভিন্ন এলাকায় এ চক্রটি দিন দিন ভয়ংকর ভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ১নং ওয়ার্ডে বেশ কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজ বাহিনী। এ ওয়ার্ডের এলাকায় বিভিন্ন নিরিহ মানুষের জমি নিয়ে জবর দখল করে আসছে ভূমিদস্যুর অবাধ বিচরণ বেড়েছে এ এলাকায়। খাড়া দলিল বা জমির পাওয়ার নামার নামে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে নিরিহ কিছু মানুষের সাথে।

এছাড়া একাধিক দোকান মালিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে জানা যায়, কোন দোকান মালিক চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের মারধরসহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করা হয়। 

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদাবাজরা একত্রিত হয়ে নানা কৌশলে চাঁদাবাজি করছে। চাঁদাবাজদের উৎপাতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। আর তাদেরকে নেপথ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী মহল। 

এরকারণে অতি সহজেই দোকান বসিয়ে সাধারণ নিরীহ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে এ সকল চাঁদাবাজরা।

ব্যবসায়ী, স্থানীয় ও সাধারণ মানুষ দ্রুত এসব চাঁদাবাজ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে র‌্যাব-পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।