নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

সোমবার,

২৯ এপ্রিল ২০২৪

আড়াইহাজারে ২০ গ্রামবাসীর ভরসাই নৌকা, দীর্ঘদিনেও নির্মাণ হয়নি সেতু

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৭:৫৬, ২০ মার্চ ২০২৪

আড়াইহাজারে ২০ গ্রামবাসীর ভরসাই নৌকা, দীর্ঘদিনেও নির্মাণ হয়নি সেতু

আড়াইহাজার উপজেলার শান্তির বাজার এলাকায় মেঘনা নদীর শাখা নদীর উপর সেতু না থাকায় খেয়া নৌকায় পারাপার হচ্ছেন হাজার হাজার বাসিন্দারা। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষেরা। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি স্থাপনের আশ^াস দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এখানকার মানুষের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকা। 

উপজেলার শান্তির বাজার এলাকায় মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, কাজীপাড়া, কাকরাইল মোড়, বায়ের চড়, নয়নাবাদ, তেতুই তলা, পাইকপাড়া, গোয়ালপাড়া, মসলেন্দুপুর, শান্তিনগরসহ আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলার বিশ গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা ছাড়াও কবি নজরুল ইসলাম স্কুল এন্ড কলেজ, গোয়ালপাড়া উচ্চবিদ্যালয়, কবি নজরুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা খেয়া নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। 

এছাড়াও এখানে ইসলামী ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, ডাচবাংলা ব্যাংক, আল আরাফা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক রয়েছে। এসকল ব্যাংকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রয়োজনে আসাযাওয়া করে থাকেন। শান্তির বাজারে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। এই হাটে শাক, সবজি, ফলমূলসহ সকল প্রকার কাচামাল এনে এই বাজারে বিক্রি করেন আশাপাশ এলাকার সাধারণ মানুষ।  
কথা হয় ওই এলাকার অটোরিক্সা চালক শফিকুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, শান্তির বাজার এলাকায় মেঘনা নদীর শাখা নদী দিয়ে প্রতিদিন পনের থেকে বিশ হাজার লোক চলাচল করে। সামান্য বৃষ্টি হলেই খেয়া নৌকা পাওয়া যায় না। এতে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় এলাকার মানুষের। 
বাবরইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস জানান, রাত দশটার পরই খেয়া নৌকা পাওয়া যায় না। এতে নদীর দুই প্রান্তের লোকদের চলাচল করতে অনেক কষ্ট হয়। সেতুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান তিনি। 
শান্তির বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী মমতা মেডিকেল হলের মালিক মোজাম্মেল হক জানান, জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ছোট খেয়া নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই খেয়া নৌকা বন্ধ করে দেন নৌকার  মাঝিরা। এতে বিরম্বনায় পড়তে হয় স্থানীয়  বাসিন্দাদের। 
বিষনাদি গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার জানান, রাতের বেলায় কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে ওই রুগি নিয়ে কোন অবস্থাতেই হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয় না। রাতে খেয়া নৌকা  বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগিদের অভাবনীয় দূর্ভোগে পড়তে হয়। অনেককেই বিনা চিকিৎসায় রাস্তায় মৃত্যু কোলে ঢলে পড়তে হয়।  
চেঙ্গাকান্দি এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে এ এলাকা দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে খেয়া পার হতে হয়। খেয়া ঢুবে গিয়ে অনেকে পানিতে পড়ে অল্পের জন্য মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়েছেন। 
কাইলমোড়া এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, পাঁচ বছর পূর্বে সেতু করার জন্য সয়েল টেষ্টসহ আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করার পরও অদৃশ্য কারণে পরে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আমার বয়স প্রায় সত্তর বছর। জানি না মৃত্যুর আগে সেতুটি দেখে যেতে পারব কিনা। 
কবি নজরুল ইসলাম কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রতিটা মুহুর্তে খেয়া নৌকা দিয়ে শতশত শিক্ষাথী কে নদী পার হতে হচ্ছে। বর্ষাকালে নদী উত্তাল থাকায় জীবনের ঝুকি আরো বেড়ে যায়। 
যেকোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানির মতো ঘটনা। তাই সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করে এলাকাবাসীর দূর্ভোগ লাগবের দাবি জানান তিনি। 
বারুদি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আজগর জানান, এই এলাকার নদীর উপর সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনে দাবি। এই সেতুটি নির্মাণ হলে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলার প্রায় বিশ গ্রামের হাজার হাজার লোক নির্ভিগ্নে যাতায়াত করতে পারবে।  সেতুটি দ্রুত নির্মাণ হলে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন তিনি। 

আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ জানান, শান্তি বাজার এলাকায় নদীর উপর সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এই সেতুটি নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। 

জাতীয় সংসদের হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু জানান, শান্তির বাজার এলাকার মেঘনা নদীর শাখা নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ কাজ করার জন্য কয়েক বছর পূর্বে সয়েলটেষ্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিলো। সেতুটির নকশা পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে আবারো সবকিছু তৈরী করা হচ্ছে। তবে খুব শিগ্রই সেুতুটি নির্মাণ করে সাধারণ জনগণের দূর্ভোগ লাঘবেন আশ^াস দেন তিনি।