নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

৩০ এপ্রিল ২০২৪

পঞ্চপান্ডবে অতিষ্ঠ কুতুবপুরের মানুষ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:৫৬, ২৫ মার্চ ২০২৪

পঞ্চপান্ডবে অতিষ্ঠ কুতুবপুরের মানুষ

ফতুল্লার কুতুবপুরে 'পঞ্চাপান্ড' হিসেবে পরিচিত কিশোর অপরাধীদের লিডার লিমন, ইমরান, রায়হান, মোজাহিদ এবং জামাতি মিজান। এই পাঁচ অপরাধী এলাকা ভিত্তিক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, মাদক ব্যবসা, ভয়ভীতি দেখিয়ে বেশী দামে নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করা-ই তাদের নেশা এবং পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পাঁচ  অপরাধীর  দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কুতুবপুরের পাগলা রেলস্টেশন থেকে শুরু করে মাতুয়াইল হাসপাতাল পর্যন্ত এসব অপরাধী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এমন কোন দিন নেই এই অপরাধীদের হাতে মানুষ শারীরিক এবং মানষিক ভাবে লাঞ্ছিত না হয়। এই পঞ্চপান্ডবের কাছে কুতুবপুরের মানুষ জিম্মি হয়ে পরেছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ,  বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা রেখে, ছবি তুলে বড়ো করে সাটিয়ে, ব্যানার, ফেস্টুন করে স্থানীয় ভাবে কিংবা সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার, প্রকাশ করে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত করছে। ইতোমধ্যে এদের নিয়ন্ত্রিত কিশোর অপরাধীদের হামলায় এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।

তবুও এই বাহিনীর অপতৎপরতা থেমে নেই।  ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কুতুবপুরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিশোর অপরাধীরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে,  কুতুবপুরের কিশোর অপরাধীদের দমন করবে কে?  তবে এসব অপরাধীদের এখনই লাগান টানা দরকার এমন দাবি সচেতন মহলের।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কুতুবপুরেট আলোচিত কিশোর গ্যাং লিডার লিমন, ইমরান,নাঈম,রায়হান,মুজাহিদ,জামাতি মিজানের নেতৃত্বে প্রায় সহস্রাধিক কিশোর অপরাধী সক্রিয় রয়েছে। এদের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের একাধিক কর্তার সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন এবং নেতাদের নাম ব্যবহার করে এসব উঠতি বয়সের সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কুতুবপুরের অপরাধ জগৎ মূলতঃ কিশোর অপরাধীদের হাতেই পরিচালিত হচ্ছে। এলাকায় চাঁদাবাজি, জোর করে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা, নেট,ডিস ব্যবসা এবং উঠতি বয়সের সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে কিশোর অপরাধীদের হাতেই। 

সূত্র জানায়, কুতুবপুরে বৌবাজার, শাহীবাজার, রসুলপুর, আমতলা, নূরবাগন, পাগলা রেললাইন, মুন্সীবাগ, দৌলতপুর, আদর্শনগর,শহীদ নগর,মাতুয়াইল হাসপাতাল  এলাকায় নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মূল হোতা লিমন,ইমরান,রায়হান,মোজাহিদ,জামাতি মিজান,নাঈম, মিশাল। এদের নেতৃত্বে কয়েকশ কিশোর অপরাধী এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে।  

সাংসদ শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের নাম,ছবি ব্যবহার করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এলাকাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। প্রায় সময়ই এই বাহিনীর হামলা নিরিহ মানুষ আহত হচ্ছে। 

সম্প্রতি মাদকসহ লিমন-ইমরান বাহিনীর সদস্য রকি,শুক্কুর,মিসাইল, টাইগার,নাঈম মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। একই অভিযোগ আদর্শ নগর এলাকার রায়হান, শহীদ নগরের মুজাহিদ, মুন্সীবাগের টিপু,রোমান, জামাতি  মিজানের বিরুদ্ধেও।

রায়হান নিজেকে অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে মুজাহিদ, মিজানকে নিয়ে বিশাল বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

ইতোমধ্যে এই বাহিনীর অন্যতম হোতা শহীদ নগরের মুজাহিদ বিপুল পরিমাণ মাদকসহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিল। চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে মুন্সীবাগের কিশোর অপরাধীদের নেতা জামাতি মিজান।

সম্প্রতি রায়হান বাহিনীর হামলায় কুতুবপুর ক্যানেলপাড় এলাকায় সালমান (১৭) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সিগারেট খাওয়াট প্রতিবাদ করায় সালমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরে আযম জানান, সু-নির্দিস্ট অভিযোগ পেলে তাদের কে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধীরা যে দলের বা যতো শক্তিশালী, প্রভাবশালী হউক না কেনো কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবেনা। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
 

সম্পর্কিত বিষয়: