
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই পূজাকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে মন্দিরগুলোতে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। দিন রাত পরিশ্রম করে তাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন একেকটি প্রতিমা। শিল্পীরা নিপুণ হাতে কাদামাটি, খড়, বাঁশ, সুতলি ও বিভিন্ন রকম রং ও তুলি দিয়ে তৈরি করছেন এই প্রতিমা।
শহরের বিভিন্ন মন্দির প্রাঙ্গনে নানা আকার আর ঢংয়ের দুর্গা দেবীর মূর্তি বানানো হচ্ছে। জেলা ও মহানগরে এবার ২২৪টি মন্ডপে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সরেজমিনে নগরীর উকিলপাড়া, দেওভোগ আখড়া, সাহাপাড়া, আমলাপাড়া, নন্দীপাড়া, নয়ামাটিসহ নিতাইগঞ্জের বলদেব জিউর আখড়া মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, মন্দিরে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। ইতিমধ্যেই খড় আর কাঁদামাটি দিয়ে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। এখন চলছে রং আর তুলির ছোঁয়ায় প্রতিমা সাজানোর কাজ। এছাড়াও প্রতিমা তৈরীর পাশাপাশি অন্যান্য মন্দিরের সাজসজ্জায় চলছে বিশেষ প্রস্তুতি।
আগামী ১৩ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে। ১৯ অক্টোবর মহাপঞ্চমী, ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী, ২১ অক্টোরর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর অষ্টমী, ২৩ অক্টোবর নবমী ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে। প্রতিমা শিল্পীর কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে সকাল থেকে শুরু করে দিন রাতভর চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।
আর এই উৎসবকে সামনে রেখে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি যেন পুরোদমে এগিয়ে চলছে। তবে প্রতিমা তৈরীর প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হবে বলে আশঙ্কা কারিগরদের।
প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, ‘তাড়াতাড়ি কিভাবে কাজ নামানো যায় তাই আমরা রাতদিন পরিশ্রম করছি। সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের লাভ হয় না।
প্রতিমা শিল্পী তারক নাথ জানান, এ বছর প্রতিমার অর্ডার অন্যান্য বারের চেয়ে অম। এখন মাটির ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। এর পরে রংয়ের কাজ করা হবে। আগামী ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। তাই সময় ঘনিয়ে আসায় কাজের চাপ অনেকটাই বেড়ে গেছে, যার কারণে সারাদিন কাজ করার পরে রাতেও কাজ করতে হচ্ছে। তবে সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় এখন আর তেমন লাভ নেই। বহু বছর যাবত প্রতিমা তৈরী করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, লাভ না হলেও বাপ দাদার পেশা ধরে রেখেছেন তিনি। এখন বাঁশ, কাঠ, সুতা, খড়ের দাম অনেক বাড়তি, তাই খরচ বেশি পড়ছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, এ বছর নারায়ণগঞ্জের ২২৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সার্বিক পরিস্থিতি অন্তত সন্তোষজনক। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমস্ত দল এবং জনপ্রতিনিধিরা আমাদের পাশে আসেন। আমরা উৎসব মুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করবো বলে আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি মণ্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির প্রস্তুতি। এসময়ে প্রতিটি মন্দিরে কমিটির পক্ষ থেকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। এছাড়াও প্রতিটি মন্ডপে মন্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, জেলা ও মহানগর সবকটি মন্ডপে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে আমরা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করেছি। প্রতিমা তৈরিকালীন সময়ে যাতে প্রতিমার কোন প্রকার ক্ষতি না হয় সেজন্য আয়োজক কমিটিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আয়োজক কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টহল টিমও সতর্ক হয়ে মাঠে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করছি প্রতি বছরের মতো এবারও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে।