নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

২৩ এপ্রিল ২০২৪

রূপগঞ্জে বিল আর প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে লাল শাপলা

 নারায়ণগঞ্জ টাইমস :

প্রকাশিত:০০:৫০, ২৭ আগস্ট ২০২১

‘জলজ ফুলের রানী বলা হয় পদ্মকে’। ফুটে থাকা ফুল শুধু বিল নয় সৌন্দয্য বাড়িয়ে তোলে প্রাকৃতির। আর প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া ফুলের রানী পদ্ম সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের জিন্দা মধ্যপাড়া এলাকার বিলের চিত্র। দূর থেকে মনে হবে যেন পদ্ম ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা। 

 


বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর মানুষ ভিড় করে মনোমুগ্ধকর এই লাল শাপলা দেখার জন্য। সকালের সূর্যের আলোতে লাল শাপলার এই ঝলমলে উজ্জ্বলতা দেখলে এক নিমিষেই যেন মন ভরে যায়। সবুজের পটভূমিতে লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমিকরা ছুটে আসছে এই শাপলা বিলে। পাহাড়ের মতো ছোট ছোট টিলার উপর দিয়ে রাস্তাটি যেতে যেতে লাল আর সবুজের মাখামাখি দূর থেকেই চোখে পড়বে। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরো গাঢ় হয়ে ধরা দেবে। চোখ জুড়িয়ে দেবে জাতীয় ফুল শাপলার বাহারি সৌন্দর্য। 

 

আগাছা আর লতাগুল্মে ভরা বিলের পানিতে ফুটে আছে অসংখ্যক লাল শাপলা। সূর্যের সোনালি আভা শাপলাপাতার ফাঁকে ফাঁকে পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বিলের সৌন্দর্য। নৌকা কিংবা হাঁটু পানি মাড়িয়ে বিলের ভেতর ঢুকলে মনে হবে বাতাসের তালে তালে এপাশ-ওপাশ দুলতে দুলতে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে ফুটন্ত শাপলা। সে হাসিতে বিলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আনন্দধারা। 

 

রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের জিন্দা মধ্যপাড়া এলাকাটি শাপলার রাজত্বের কারণে সেটি এখন শাপলা বিল নামেই বেশি পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিলের কথা ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য স্থানে, বিশেষ করে শহরে ইট-পাথরে বন্দি জীবন কাটানো মানুষ প্রশান্তির আশায় ছুটে আসে এ বিলে। এই শাপলা বিলে শীত মৌসুমে পর্যটকের ভিড় বাড়ে। পর্যটকদের প্রশান্তি বিলানো ছাড়াও এই বিল ও তার শাপলা স্থানীয়দের অন্নেরও জোগান দেয়। 

 

লাল শাপলা ফুলের সমাহার দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য রয়েছে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা। অল্প ভাড়ায় ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ২০০ একর জলাভূমির সৌন্দর্যময় শাপলা বিল পাড়ি দেয়া যায়। 

 

স্থানীয় নৌকার মাঝিরা জানান, শাপলা বিল আমাদের উপার্জনের পথ হয়েছে। প্রতি বছর এই সময় শাপলা বিলে ফোটা শাপলাফুল দেখার জন্য দূর-দূরান্তের মানুষ আসে। শাপলা ফুল দেখতে আসা মানুষদের নৌকায় উঠিয়ে বিলটি ঘুরাই। এই শাপলা বিল দেখতে আসা মানুষদের নৌকা ঘুরিয়ে এই মাঝিদের প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। এই উপার্জন দিয়ে তাদের সংসার চলে বলে জানান তারা। 

 

সম্প্রতি বিল ঘুরে দেখা যায়, আগাছা ঠেলে অনেকেই নৌকা নিয়ে বিলের গহিনে যাচ্ছে। বিল থেকে শাপলা তুলে জমা করছে নৌকায়। কেউ বা ব্যস্ত মাছ ধরায়। বিল থেকে শাপলা তুলে অনেকে তা বিক্রি করে স্থানীয় বাজারে। মাছ বিক্রি করেও সংসার চালায় অনেকে। তবে বিলের সঠিক আয়তন জানা নেই কারো। 

 

স্থানীয়দের মতে, প্রায় ২০০ একর জমির ওপর প্রাকৃতিকভাবে বিলটি গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের অনেকে জীবিকার জন্য বছরের একটা বড় সময় বিলের মাছ ও শাপলার ওপর নির্ভরশীল। বিলে ঠিক কত আগে থেকে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে, সে তথ্য দিতে পারেনি স্থানীয়রা। 


জিন্দা পার্ক এলাকার মাসুদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁদের জন্মের পর থেকেই বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তাঁরা। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিলে শাপলা থাকে। 

 


জিন্দা পার্ক এলাকার মরিয়ম নামে এক গৃহিণী বলেন, লাল শাপলার কদর বেশি, এটি রান্না করার পরও রক্তের মতো লাল থাকে। তবে রান্নার আগে তা সিদ্ধ করে নিতে হয়। এটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমন খেতেও খুব সুস্বাদু। 

 


তিনি আরো বলেন, আগে বিলে প্রচুর শাপলা জন্মালেও এখন বিল ভরাট হতে থাকায় পানি কমে যাচ্ছে, ফলে আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে শাপলার উৎপাদন। বিলের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণেও শাপলা কমে যাচ্ছে। 

 


একই এলাকার আব্দুল রহিম মিয়া বলেন, তিনি প্রতিদিন তার ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে মাছ ধরেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ বড়শি পেতে কই,খলিশা, টাকি, শোল, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরেন। এই মাছ বিক্রি করে প্রায় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় হয় তার। আব্দুল জাব্বার নামে একজন কৃষক জানান, তিনি শুকনো মৌসুমে জমি চাষ করেন আর বর্ষা মৌসুমে বিলের শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। তার মতো শতাধিক পরিবার এভাবে টিকে আছে। তিনি আরও বলেন, ১৫ থেকে ২০টি শাপলার একটি আঁটি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। শাপলা বিক্রি করে প্রায় হাজার টাকা আয় হয় তার।