
বন্দরের ২০নং ওয়ার্ডের উত্তর বেপারীপাড়ায় কুয়েত ফেরত শওকত হোসেনের উপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় শওকতকে এলাপাথারীভাবে মারধর করা হয়। এসময় তার চিৎকারে স্ত্রী মৌসুমী বেগম ও মেয়ে মাহা আক্তার (১৬) বাঁচাতে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়।
এই ঘটনায় পুলিশ শওকত হোসেনের মামলা না নিয়ে উল্টো হামলাকারীদের সাজানোর মামলায় ১৫ জুলাই রাতে শওকত হোসেনের স্ত্রী, মেয়ে ও এক প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
আহত শওকত হোসেন ও স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর কুয়েতে প্রবাসজীবন শেষে গত ৯ মাস আগে দেশে ফেরেন শওকত হোসেন। পারিবারিক ঝগড়ার সূত্রধরে প্রতিবেশী মুন্নি বেগম, লাখি, রহিম, মতিন, সোহেলগংরা ৫ লাখ টাকা চাঁদাদাবি করে শওকত হোসেনের কাছে। চাঁদা না দেয়ায় বিভিন্ন সময় হুমকি-:ামকি অব্যাহত রাখে মুন্নি-লাখি গংরা।
এক পর্যায়ে ৯ জুন রাত ৮টার দিকে শওকত হোসেন মেয়ে মাহা আক্তারের জন্য পুরি আনার জন্য দোকানের দিকে যায়। এসময় বাড়ির অদুরে তার উপর হামলা করে রহিম, সোহেল, মতিন, লাখি, মুন্নি, বোরহান, সুইটি ও আমির হোসেন।
তারা লাইট ভেঙ্গে অন্ধকার করে শওকত হোসেনকে এলাপাথারী মারধর করতে থাকে। আহত শওকতের চিৎকারে তার স্ত্রী মৌসুমী ও মেয়ে মাহা আক্তার (এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে) ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়।
হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম হয় শওকত হোসেন। রাতেরই আহত শওকত হোসেন তার স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বন্দর থানায় মামলা করতে যায়। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। উল্টো থানার ভেতর পুলিশের সামনে আরেক দফা মারধর করে হামলকারীরা।
পরে আহত শওকত হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ঘটনার দুদিন পর পুনরায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা না নিয়ে তাদের আদালতে মামলা করতে বলে।
পরে শওকত হোসেন বাদী হয়ে বিজ্ঞ চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বন্দর থানা আমলী আদালতে ৮জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। আসামিরা হলো- রহিম, সোহেল, মতিন, লাখি, মুন্নি, বোরহান, সুইটি ও আমির হোসেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে নির্দেশ দেয়। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন শওকত হোসেন।
শওকত হোসেন জানান, কুয়েতে থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক টাকা খরচ করে তার চিকিৎসা হয়। সার্জারি বাম পায়ের দুটি আঙ্গল কেটে ফেলা হয়। সেই থেকে ঠিক মতো হাটতে পারেন না। সার্জারি করা সেই বাম পায়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে আসামিরা। এখন কোনোমতে হাটাচলা করতে অন্যের সহযোগিতায়।
এদিকে মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেয় শওকত হোসেনকে। এক পর্যায়ে আসামিরা উল্টো সাজানো ঘটনায় মামলা দেয় শওকত হোসেনের স্ত্রী মৌসুমী বেগম, মেয়ে মাহা আক্তার ও প্রতিবেশী বাবুর বিরুদ্ধে। মামলায় মুন্নি বেগম অভিযোগ করেন ১৪ জুলাই সকাল ১১টায় বেপারীপাড়াস্থ মুন্নি স্টোরে সন্ত্রাসী হামলা করেছে মৌসুমী বেগম তার মেয়ে মাহা আক্তার ও প্রতিবেশী বাবু।
ওই সময় হামলাকারিরা মুন্নী বেগমের দোকান ভাংচুর করে ২০ হাজার টাকা ক্ষতি সাধনসহ ক্যাশবাক্স থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। ওই সময় হামলাকারিদের বাধা দিতে গিয়ে ফারজানা (২৬) হাসি (৩০) লাকি (২৭) হাফেজা (২৯) ও ছনিয়া (২০) মারাত্মক ভাবে আহত হয়।
এদিকে ১৫ জুলাই রাত পৌনে ১২টায় বন্দর থানার এস আই শহিদুল ও এসআই জলিল পুলিশ নিয়ে হাজির হয় শরকত হোসেনের বাড়িতে। পুলিশ বাড়িতে ঢুকেই কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে শওকত হোসেনের স্ত্রী মৌসুমী বেগম, মেয়ে মাহা আক্তার, প্রতিবেশী মুক্তা ও বাবুকে মারধর করে টেনে হেচড়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়।
১৬ জুলাই পুলিশ তাদের আদালতে পাঠায়। আদালত বয়স বিবেচনায় মাহা আক্তারকে জামিন দেয়। একই সাথে বাবুকে জামিন দেয়া হয়। কারাগারে পাঠানো হয় মৌসুমী বেগমকে। কারণ মামলায় মাহা আক্তারের বয়স দেখানো হয় ২০ বছর। কিন্তু তার জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ডে বয়স ১৬ বছর। ফলে তাকে আদালত জামিন দেয়।
ওদিকে মুন্নি ও লাখি গংরা প্রভাবশালী হওয়ায় শওকত হোসেন তার এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। একদিকে স্ত্রী কারাগারে অন্যদিকে নিজে চলাচল করতে পারছেন না। তার উপর মেয়েকে নিয়েও দু:চিন্তায় রয়েছেন শওকত হোসেন। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়া মাহা আক্তার বলেন, আমরা একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছি। মুন্নিগংরা অনেক প্রভাবশালী। পুলিশ তাদের কথা শুনে। আমাদের কথা শুনে না। মুন্নির দুই ভাই মাদক ব্যবসায়ি। অবৈধ টাকা দিয়ে সব কিনে ফেলে। ধারালো ছুরি দিয়ে আমার বাবার পা রক্তাক্ত জখম করেছে। অনেক মারধর করেছে।
আমরা বাঁচাতে গেলেও আমাকে ও আমার মাকেও মেরেছে। মামলা করতে গেলাম পুলিশ মামলা নেয় নাই। থানার ভেতরও আমাদের মারধর করেছে মুন্নি গংরা। অথচ মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করা হয়েছে। রাতের বেলা পুলিশ আমাদের বিশ্রিভাষায় গালাগালি করে এবং মারধর করে থানায় নিয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জের বড় পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আমরা এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে বন্দর থানার এসআই শহিদুল তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয় বলে উল্লেখ করে বলেন, আমরা মামলার সূত্রধরে তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসি। তাছাড়া অপর পক্ষের মামলা মোকদ্দমার বিষয়ে আমাদের কিছু জানা ছিলো না।
বন্দর থানার ওসি লিয়াকত হোসেন বলেন, এরকম কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। কেউ এরকম কোনো অভিযোগও করেন নি আমাকে। তবে যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে মামলার সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ ও বাদি পক্ষের মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, এ অভিযোগ টাও সত্য নহে। অভিযোগকারীদের আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েন। এরকম কোনো ঘটনা ঘটলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।