নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

রোববার,

২৬ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই আন্দোলনে অস্ত্র দিয়ে গুলি করা যুবলীগ ক্যাডার খোকন প্রকাশ্যে, জনমনে আতঙ্ক

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:২১, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই আন্দোলনে অস্ত্র দিয়ে গুলি করা যুবলীগ ক্যাডার খোকন প্রকাশ্যে, জনমনে আতঙ্ক

গত বছরের জুলাই-আগষ্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর বিদেশী পিস্তল দিয়ে গুলিবর্ষণকারী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফতুল্লার পূর্ব লামাপাড়া এলাকার ত্রাস ও মূর্তিমান আতঙ্ক যুবলীগ ক্যাডার আশিকুর রহমান খোকন বীরদর্পে প্রকাশ্যে বিচরণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

৫ আগষ্টে ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে শামীম ওসমান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা পালিয়ে গেলেও একাধিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামী হয়েও সক্রিয় রয়েছেন দূর্ধর্ষ এই ক্যাডার খোকন। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

অবিলম্ভে এই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার এবং তার ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। দূর্ধর্ষ অস্ত্রধারী ক্যাডার আশিকুর রহমান খোকন ফতুল্লা মডেল থানার পূর্ব লামাপাড়া এলাকার আলী হোসেনের ছেলে। তিনি পতিত আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সক্রিয় কর্মী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার একটি ডাইং ফ্যাক্টরীতে একজন সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো আশিকুর রহমান খোকন। ২০১৪ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাংসদ পুত্র অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরী ওসমানের ছত্রছায়ায় যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয় আশিকুর রহমান খোকন।

তারপর থেকেই লামাপাড়া এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয় খোকন। শুরু করে বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্প-কারখানা এবং নির্মাণাধীন বাড়ি-ঘরে চাঁদাবাজী। এলাকায় কেউ জমি-জমা বিক্রি এবং কেউ নতুন বাড়ী-ঘর নির্মাণ করলেই তাকে দিতে হত মোটা অঙ্কের চাঁদা। অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে সে।

তাকে চাঁদা না দিয়ে কিউ রেহাই পেত না। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। সাধারণ একজন ডাইং কারখানার শ্রমিক থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠেন বিপুল পরিমান অর্থ-সম্পদের মালিক। বর্তমানে লামাপাড়া এলাকায় রয়েছে তার তিনটি বহুতল ভবন। এছাড়াও সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজী ও রাহাজানী করে বহু অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন এই দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী খোকন। 

জানা যায়, গত বছরের জুলাই-আগষ্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন আন্দোলনকারীদের দমন করতে সাংসদ শামীম ওসমানের নেতৃত্বে সাংসদ পুত্র অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা দেশী-বিদেশী অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী হতাহত হয়েছেন।

ওই হামলায় ওসমান বাহিনীর সাথে সক্রিয় থেকে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া এবং গুলিবর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে এই খোকনের বিরুদ্ধে। ৫ আগষ্ট গণ আন্দোলনের মূখে হাসিনা সরকারের পতন হলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ থেকেও শামীম ওসমানসহ তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে আবার অনেকে দেশেই আত্মগোপনে চলে যায়।

৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের পরিবার থেকে নারায়ণগঞ্জ আদালতসহ বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় শামীম ওসমান এবং তার অনুসারীসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদেরকে আসামী করা হয়।

এসব মামলার মধ্যে ফতুল্লার এবং রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার দুইটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামী করা হয়েছে লামাপাড়া এলাকার দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আশিকুর রহমান খোকনকে। সরকার পতনের পর কয়েকমাস নিজেকে গাঢাকা দিলেও বর্তমানে আবারও স্বরূপে এলাকায় ফিরে এসেছে সে। এ নিয়ে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, খোকন একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। তার কাছে অস্ত্র রয়েছে, সেই অস্ত্র দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মানুষের কাছে চাঁদাবাজী করত। অনেক দিন পলাতক থাকার পর আবারো এলাকায় ফিরে এসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেরাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, বিগত দিনে খোকনকে চাঁদা না দিয়ে এলাকায় ব্যবসা করা অসম্ভব ছিল। শুনেছি সে নাকি আবারো এলাকায় ফিরে এসেছে। আমরা তার গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শরিফুল ইসলাম জানান, আমরা তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। উপযুক্ত তথ্য প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।