নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

৩০ এপ্রিল ২০২৪

হঠাৎ জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে 

নারায়ণগঞ্জে ক্ষুব্দ পরিবহন মালিকরা, ভোগান্তিতে যাত্রী সাধারণ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০৩:০৭, ৭ আগস্ট ২০২২

নারায়ণগঞ্জে ক্ষুব্দ পরিবহন মালিকরা, ভোগান্তিতে যাত্রী সাধারণ

আকষ্মিকভাবে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে নারায়ণগঞ্জের গণপরিবহন মালিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ফলে শনিবার (৬ আগস্ট) দিনভর নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রুটে গণপরিবহনের চলাচল তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে। আবার অতিরিক্ত ভাড়া দিতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থের পাশাপাশি অবর্নণীয় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। পরিবহন মালিকরা বলছেন, যে হারে তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে ৪০-৫০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করলেও তাদের লোকসান কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না। এ জন্য তারা তেলের মূল্য কমানোর দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।

 


ওদিকে হঠাৎ তেলের মূল্য বৃদ্ধির খবরে পেট্টল পাম্পগুলোতে শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত থেকেই ভীড় করে যানবাহন চালকরা। শনিবার সকালেও একই চিত্র দেখা গেছে। অনেকে বাধ্য হয়ে ২০০ টাকা লিটার ধরে পেট্টোল অকটেন কিনে গন্তব্যে গিয়েছেন। যদিও সরকার লিটার প্রতি ৪৪ টাকা বাড়িয়ে পেট্টোলের দাম ১৩০ টাকা ও ৪৬ টাকা বাড়িয়ে অকটেনের দাম ১৩৫ টাকা নির্ধারন করেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এছাড়া ডিজেল ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ২০০ টাকা লিটার দরে কিনতে হয়েছে অসেক বাইকারকে।

 


বাইকার ও গাড়ির চালকরা জানান, শুক্রবার রাত ১২টা থেকে নতুন দাম কার্যকর হওয়ার খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকেই ফিলিং স্টেশন তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এতে করে মহাসড়কে চলাচল করা অনেক বাইকার ও গাড়ির চালক বিপাকে পড়েন। অনেক ফিলিং স্টেশনে নির্ধারিত বাড়তি দামের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে জ্বালানি তেল। অনেকে ২০০ টাকায়ও লিটার প্রতি তেল বিক্রি করছেন।  

 


চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী বাইকার আহমেদ হোসেন জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল (চিটাগাং রোড) মোড়ের দিকে এসে তেল শেষ হয়ে যায়। ফিলিং স্টেশনগুলো তেল দিচ্ছিল না। পরে এক ফিলিং স্টেশন থেকে ২০০ টাকা লিটার কিনেছি।

 


নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় নোয়া মাইক্রোবাসের চালক সেলিম মিয়া জানান, সাড়ে ১১টা থেকে বসেছিলাম তেল পাইনি। পরে মহাসড়কের এক ফিলিং স্টেশন থেকে ২০০ টাকা লিটার তেল কিনেছি।

 


এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী কথা বলতে রাজি হননি।

 


ওদিকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রুটে যানবাহনের পরিমাণ কম হওয়ায় যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সাধারণ যাত্রীরা জানান, জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এখন আবারও বাসের ভাড়া বাড়বে। বিভিন্ন পন্যের দামও বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে সকাল থেকে অধিক ভাড়া নিয়ে চলছে বাস।

 


শনিবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে গিয়ে দেখা যায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দূরপাল্লার বেশিরভাগ যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে দূরপাল্লার যাত্রীরা। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

 


শিমরাইল মোড়ের টিকিট কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা যায়, শিমরাইল থেকে নোয়াখালীর ভাড়া ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা, কুমিল্লার ভাড়া ২০০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা, চট্টগ্রামের ভাড়া ৫৮০ টাকার পরিবর্তে ৬৫০ টাকা, সিলেটের ভাড়া ৫৭০টাকার পরিবর্তে ৬৫০ টাকা,  ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ভাড়া ২৫০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নিচ্ছে। এছাড়া এসি বাসগুলোতে নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায় ২০০-৩০০ টাকা বেশি নিতে দেখা গেছে। তবে টিকিট কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের তেমন চাপ লক্ষ্য করা যায়নি। এখনো কিছু যানবাহনে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। তারা বাস মালিকের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।

 


এদিকে আঞ্চলিক রুটেও বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রাবাড়ীর ভাড়া ২০ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা, গুলিস্থানের ভাড়া ৩০ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকা নিতে দেখা গেছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মেহরাব হোসেন প্রভাত জানান, ২০ টাকার বাসা ভাড়ার পরিবর্তে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে চিটাগাংরোড থেকে রূপগঞ্জের গাউছিয়া যেতে হয়েছে।

 


বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসের কয়েকজন হেলপার জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বেশি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছি। মালিক আমাদের যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সে ভাড়াই নিচ্ছি। এর বেশি ভাড়া আদায় করছি না।

 


সফুরা খাতুন নামে এক যাত্রী জানান, জরুরী কাজে সিলেটের উদ্দেশে বের হয়েছি। টিকিট কাউন্টারে এসে দেখি ভাড়া ৬৫০ টাকা চাচ্ছে। যেখানে আগে ভাড়া ছিল ৪৮০ টাকা। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য বেশি ভাড়া বাড়তি চাপ। অন্যসব কাউন্টারগুলোতেও একই অবস্থা দেখছি। তাই বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়েই যেতে বাধ্য হচ্ছি।


সোহাগ পরিবহনের টিকেট কাউন্টারের ম্যানেজার মো. মনির হোসেন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাড়া আগের নির্ধারিত ভাড়া অনুসারেই আদায় করছি। যদি পরিবহনের মালিক বেশি ভাড়া আদায় করতে বলে তাহলে আমরাও বেশি ভাড়া নিবো। শুনলাম আজ (শনিবার) বিকেলে নাকি তারা মিটিংয়ে বসবে। হয়তো আজ (শনিবার) রাত থেকেই ভাড়া বৃদ্ধি পেতে পারে।
নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহনের মালিকদের একটি সূত্র জানায়, ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ালেও আমাদের পোষাবে না।


নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী জানান, সরকার যা নির্ধারণ করে দিবে তা তো আমাদের মানতে হবে। কিন্তু লোকসান দিয়ে তো আর বাস চালানো যাবে না। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠকে বসে যে সিদ্ধান্ত দিবে আমরা তা মেনে নিবো।


নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষন ফোরামের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, আগেই বাস ভাড়া বেড়েছে। নতুন করে আর বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। 


প্রসঙ্গত: বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানোর পর ভোক্তা পর্যায়ে লিটার প্রতি ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্টলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।  
 

সম্পর্কিত বিষয়: