নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

রোববার,

১৯ মে ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে আড়তে নেই পাইকার, পানির দামে বিক্রি হচ্ছে বাঙ্গি ও তরমুজ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৭:৪৬, ৭ মে ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে আড়তে নেই পাইকার, পানির দামে বিক্রি হচ্ছে বাঙ্গি ও তরমুজ

গত কয়েকদিন ধরে শিলাবৃষ্টি এবং মেঘলা আবহাওয়ায়  বাঙ্গির ও তরমুজ ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান পাইকারি ফলের আড়াতে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে বাঙ্গি ও তরমুজ। আড়ত গুলোতে বাঙ্গি ও তরমুজ রাখার জায়গা পাচ্ছেন না কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। 

কৃষকরা বলছে শিলাবৃষ্টির কারণে তারা তরমুজ ও বাঙি জমি হতে তুলে নিয়ে আসছে। আড়তে প্রচুর তরমুজ ও বাঙি আমদানি হয়েছে, কিন্তু ক্রেতা আগের চেয়ে কমছে। যার কারণে দাম অনেক কমলেও পাইকাররা সেভাবে আসছে না। এতে করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। আর আড়তে তরমুজ ও বাঙির সরবরাহও বেড়ে গেছে। 

সরেজমিনে মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান পাইকারি ফলের আড়াৎ চারারগোপের বাঙ্গি ও তরমুজ আড়তে গিয়ে দেখা যায়, আড়ত গুলোর সামনে তরমুজ ও বাঙ্গি স্তূপ। আড়তগুলোতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আড়তগুলো আসছে ট্রাক ও  ট্রলার ভর্তি করে তরমুজ ও বাঙ্গি।

এসব ট্রলার ও ট্রাকে লাখ লাখ টাকার তরমুজ ও বাঙ্গি রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ট্রলার ও ট্রাক থেকে তরমুজ নামাতে দেখা গেলেও তরমুজ কেনার পাইকার তেমন দেখা যায়নি। 

আড়তে তরমুজ নিয়ে আসা কৃষক ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪-৫ দিন আগে সামন্য শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শিলাবৃষ্টি হলে তরমুজ ও  বাঙ্গি সাধরণত নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া প্রতিদিনই কম বেশি ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে।

তাই কৃষক শিলা বৃষ্টির ভয়ে জমি থেকে তরমুজ কেটে বিক্রির চেষ্টা করছেন। এতে বাজারে প্রচুর পরিমাণ তরমুজের সরবরাহ বেড়েছে। যার কারণে দাম অনেক কমে গেছে।

এই আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে আসা খুলনার কৃষক আব্দুল মোতালিব বলেন, চার দিন আগে আমাদের এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিনিই ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। তাই নষ্ট হওয়ার ভয়ে জমি থেকে তরমুজ কেটে এই আড়তে নিয়ে আসছিলাম।

দুই দিন ধরে ঘাটে ট্রলার ভিড়িয়ে বসে আছি। বেচাবিক্রি তেমন নেই। আগে যে তরমুজ ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন তা ৩০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে তরমুজ বিক্রি করলে আমাদের লোকসান হবে।

অপর নাটোরের বাঙ্গি চাষি সুজন মিয়া বলেন, শিলাবৃষ্টির কারণে জমি থেকে বাঙ্গি সব তুলে ফেলছি। এখন আড়তে বাঙ্গি নিয়ে এসে বিক্রি করতে পারছি না। সবকিছুর দাম বেশি। এ বছর বাঙ্গি লাগানোর মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তরমুজের চারার অনেক ক্ষতি হয়েছে।

তাই তরমুজের উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। যে বাঙ্গি উৎপাদন করতে আমাদের ২০ -৩০ টাকা খরচ হয়েছে, এখন সেই বাঙ্গি দু'দিনের বৃষ্টির কারণে লোকসান দিয়ে ২০ থেকে ৩০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বলে আমাদের এবার লাভ বলতে কিছুই লইলো না, পুরোটাই লোকসান। 

পাইকারি ফলের বাজার চারাগোপের মায়ের দোয়া ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মাসুম মৃধা বলেন, গত শনিবার থেকে তরমুজ ও বাঙির দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। বাঙ্গি ও তরমুজ অবস্থা খুবই খারাপ। একটি ছোট সাইজের তরমুজ পাইকারি তরমুজ আড়তে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত ৪ দিন আগেও যা ১০০- ১৫০ টাকায় বিক্রি হতো। আর যে বাঙ্গি আড়তে ৪০ -৬০ টাকায় বিক্রি হতো সেই বাঙ্গি এখন পানির দামে ২০ দরে বিক্রি হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিনের শিলাবৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষক সব তরমুজ ও বাঙি কেটে একসঙ্গে আড়তে নিয়ে আসছেন, যার কারণ আমরা আড়তে তরমুজ ও বাঙি জায়গা দিতে পারছি না।

আমাদের প্রত্যেকটি আড়তে তরমুজ ও বাঙি ভরপুর জায়গা দেওয়ার স্থান নেই। বাঙ্গি ও তরমুজ প্রচুর থাকলেও সেভাবে পাইকার নেই। ফলে আমাদেরকে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
 

সম্পর্কিত বিষয়: