নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

১৯ জুলাই ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:২০:১৭, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার

বিগত স্বৈরাচারের এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব খাটিয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার রুনা লায়লার বিরুদ্ধে।

শিল্পকলা ভবনের সামনে হকার বসিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায়, হলরুম ভাড়া প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি, শিল্পকলার স্টাফদের দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কাজ করানো, আওয়ামী ঘরানার গুটি কয়েক শিল্পীকে প্রাধান্য দেয়া, বাকী শিল্পীদের অবমূল্যায়ন করাসহ ভুয়া বিল ভাউচার করারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তার আচরণও রূঢ়। এমন অভিযোগ হলভাড়া নিতে আসা লোকজনদের।

স্বৈরাচারের দোসর হওয়ায় তার দাপটের কাছে এতোদিন অসহায় ছিলো সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীসহ শিল্পকলা সংশ্লিষ্টরা। তবে, ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করলে স্বৈরাচারের এই দোসরের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে রুনা লায়লার দ্বারা স্বেচ্ছাচারী আচরণের শিকার ভুক্তভোগীরা। এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার রুনা লায়লার ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে।


জানা গেছে, কালচালার অফিসার পদে নিয়োগের শুরু থেকেই বেপরোয়া ছিলেন রুনা লায়লা। কারণ সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের ঘনিষ্টজন হওয়ায় তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির 'কালচারাল অফিসার' পদে আবেদনের সময় লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর খুব দম্ভের সঙ্গে রুনা লায়লা বলেছিলেন, 'সাদা খাতা জমা দিয়ে এলাম, দেখি নিয়োগ ঠেকায় কে?' সবাইকে অবাক করে ওই পদে নিয়োগও পান তিনি। অথচ এ পদের জন্য নির্ধারিত অভিজ্ঞতাই ছিল না তার। পরীক্ষায় সাদা খাতা জমা দিয়ে দম্ভ প্রকাশ করা রুনা লায়লার বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাটে। 

নিয়ম অনুযায়ী, কালচারাল অফিসার পদে নিয়োগ পেতে অনার্স পাসের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ বছর এবং মাস্টার্স পাসের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের একাডেমিক অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। রুনা লায়লার এমন কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। এ নিয়ে ওই সময় জাতীয় দৈনিকে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে একটানা ১৩ বছর দায়িত্ব পালন কালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠে লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ আড়াই বছর অনুসন্ধান শেষে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় রুনা লায়লাসহ আরও ২৩জনকে আসামী করা হয়। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমী অফিসার পদে যোগদানের পর থেকেই শিল্পকলা একাডেমী ভবনের সামনে ৩০জন হকার বসিয়ে গত ৫ বছরে অর্ধকোটি টাকার চাঁদা আদায় করেছেন রুনা লায়লা। হকাররা জানায়, দোকান বসানোর জন্য হকারদের কাছ থেকে সালামি বাবদ ৩০ লাখ টাকা এবং ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা হিসেবে গত ৫ বছর ২ মাসে আরও প্রায় ২০ লাখ টাকা নেন তিনি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হকাররা জানায়, আমরা গরীব মানুষ, আমাদেরকে টাকা দিতে বলেছে আমরা টাকা দিয়েছি। দোকান প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেয়া হতো, সেই টাকা যে উত্তোলন করতো সে নিতো ৫ হাজার এবং বাকী ২৫ হাজার টাকা রুনা লায়লা আপা নিতো। তবে, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন আর কেউ সে টাকা নেয় না বলে জানান তারা। 

একাধিক সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে রুনা লায়লা তার অনুগত-অনুসারী শিল্পীদেরকে পরিবেশনা করাতে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এ নিয়ে অন্যান্য শিল্পীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হতো। তারা মনে করেন, শিল্পকলার মতো একটি প্রতিষ্ঠানে কালচারাল অফিসার রুনা লায়লার এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ শোভনীয় নয়।

সকল শিল্পীকে তার সমান ভাবে দেখা উচিত। এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে একই জেলায় কমর্রত রয়েছেন রুনা লায়লা। যা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, রুনা লায়লা বিগত দিনে এক অদৃশ্য শক্তির বলে একই জেলায় বছরের পর বছর কর্মরত রয়েছেন। সুবিধা বঞ্চিত শিল্পীদের অভিযোগ, করোনাকালীন সময়ে দুঃস্থ ও অসহায় শিল্পীদের মাঝে সরকারের দেওয়া অনুদানের তালিকায় বারবার নিজ অনুসারীদের নাম প্রদান করেছেন।

এছাড়াও তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমীকে নিজের ব্যক্তিগত বাড়ী বানিয়ে রেখেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

সূত্র জানায়, শিল্পকলার স্টাফদের দিয়ে তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজ করানো হয়ে থাকে। শিল্পকলার অফিসিয়াল সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিদের নিয়ে এসে শিল্পকলাতে আতিথেয়তা করানো হতো। যার খরচ শিল্পকলার ভাউচারে তুলে দিয়ে সরকারি অর্থ নষ্ট করেন বলেও জানা গেছে। 

যোগাযোগ করা হলে, নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার রুনা লায়লা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, শুধু আমার নিয়োগ নয়, ২০১৭ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান।

নারায়ণগঞ্জে ১২০০ শিল্পী, সবাইকে তো ডাকা সম্ভব না। হকারদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেই নি। হলরুম ভাড়ার সকল রশিদ আছে, কোনো ভুয়া বিল ভাউচার করা হয়নি। 
 


 
 

সম্পর্কিত বিষয়: