নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

ফতুল্লায় তিন চেয়ারম্যানের এলাকায় সড়ক পথে নৌকা চলছে

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০৫:১০, ১৪ জুন ২০২১

ফতুল্লায় তিন চেয়ারম্যানের এলাকায় সড়ক পথে নৌকা চলছে

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার  লালপুর ও পৌষারপুকুরপাড়সহ আশে পাশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক পথে এখন নৌকা চলছে।  এসব এলাকায় রিক্সার ব্যস্ততম সড়কে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার  কারণে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় কোমড় পানি জমে আছে। ওই মানুষের চলাচলের বাহন এখন নৌকা। কর্মস্থলে এমনকি জরুরী প্রয়োজনে কোথাও যেতে হলে নৌকা দিয়ে সড়ক পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে।  নৌকা ছাড়া চলাফেরা করার কোন বিকল্প নাই। নৌকায় উঠলেই দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া ২০ টাকা। এক মিনিটের পথ রিক্সা চালকদের তিন গুন ভাড়া দিতে চাইলেও রিক্সা চালকরা যেতে রাজি হচ্ছে না। এমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে উক্ত এলাকার বাসিন্দাদের।

এদিকে ফতুল্লার লালপুরে সরকারী দলের তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়ি। তারা ওই এলাকায় বসবাস করেন। তারাও বাধ্য হয়ে নৌকা দিয়ে পাড় হচ্ছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে মানুষের দূর্ভোগ দেখেও স্থানীয় চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) লুৎফর রহমান স্বপন জলাবদ্ধতা দুর করার কোন উদ্দ্যোগ গ্রহন করছে না বলে লালপুর ও পৌষারপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দারা এমন অভিযোগ করেন। এছাড়া  স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের এলাকায় এমন চিত্র নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য লজ্জাজনক। এমনটা বলছেন সচেতন মহল। তবে স্থানীয়রা অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন জলাবদ্ধতার এই ভোগান্তির সাথে।

 

রোববার (১৩ জুন) ফতুল্লার লালপুর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জলাবদ্ধতার এমন দৃশ্য দেখা যায়।

 

ওদিকে ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর মানুষ ভেবেছিল টানা কয়েকদিন বৃষ্টি আসলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাস্তা থেকে শুরু করে মানুষের ঘরে এখন পানি জমে রয়েছে। মনে হচ্ছে এই এলাকায় বন্যা হয়ে আছে। টিনের ঘর থেকে শুরু করে ৫তলা ভবনের মালিকরা জলাবদ্ধতার দূর্ভোগ শিকার হচ্ছে। যাদের প্রাইভেট গাড়ি রয়েছে বাড়িতে না রেখে অন্য স্থানে রেখে বাড়ি থেকে বের হয়ে নৌকায় চড়ে শুকনো স্থানে গিয়ে গাড়িতে উঠে তারা তাদের কর্মস্থলে যাচ্ছে। আর গরীব মানুষ নৌকা ভাড়া দিতে কষ্ট হবে বিধায় কোমড় পানি ভেঙ্গে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। 

 

ফতুল্লা বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও পৌষাপুকুরের বাসীন্দা সাজ্জাদ হোসেন মোল্লা জানায়, ফতুল্লা চৌধুরী বাড়ীর জাতীয় পার্টি নেতা কাজী দেলোয়ার হোসেনের বাড়ীর সামনে থেকে নৌকায় চড়তে হয়। তার বাসা পর্যন্ত নৌকা ভাড়া ২০ টাকা। পাঁচ মিমিটের রাস্তায় যেতে লাগে মিনিমাম ২০/২৫ মিনিট। কখনো আবার নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হলেও জনপ্রতিনিধিরা সমাধানের কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না। উন্নয়নের রূপকার খ্যাত এমপি শামীম ওসমানের নির্বাচনী মানুষের এমন দূর্ভোগ সবার জন্য লজ্জাজনক। 

 

স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল জানায়, বর্ষাকাল মানেই তাদের জন্য পানি বন্দি হওয়া। সামান্য বৃস্টি হলেই রাস্তা ঘাট ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ী ঘরেও পানি প্রবেশ করে। ঘর থেকে বের হয়ে বাজারে যেতে হলে নৌকা ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নাই। তার পরও সব জায়গায় নৌকা চলাচল করে না। মানুষ কাপড় ভিজে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। 

 

লালপুরের বাসিন্দা বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, জলাবদ্ধতার কথা বলার কিছু নাই। আমিও বাসা হতে বের হলে নৌকায় চড়ে পাড় হতে হচ্ছে। এ রাস্তায় কোন রিক্সা চলাচল করতে পারছে না। মটর দিয়েও পানি অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগে আমাদের এ দূর্ভোগ অবসান হওয়ার সম্ভবনা দেখছি না। 

 

উল্লেখ্য, ফতুল্লার লালপুর, পৌষারপুকুর পাড়, আলআমিন নগর, উত্তর ইসদাইর এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ খাদ এলাকায় বসানো হয়েছে শক্তিশালী ৩টি মটর। কিন্তু প্রায়ই এই মটর বন্ধ রাখার অভিযোগ স্থানীয়দের। যদিও তা অস্বীকার করেছেন মটর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। তাদের দাবী দৈনিক ১৮ ঘন্টা মটর চালিয়েও পানি পুরোপুরি অপসারন করা সম্ভব হচ্ছে না। তার উপর দীর্ঘ সময় মটর চালিয়ে রাখার ফলে ত্রুটি দেখা দেয় মটর। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে এই সমস্যা থেকে উত্তরন ঘটবে তা অজানাই থেকে যাচ্ছে সকলের কাছে।

সম্পর্কিত বিষয়: